কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) ছাত্রলীগের অন্তর্কোন্দলে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন খালেদ সাইফুল্লাহ। এরপর ৯ বছর কেটে গেছে; কিন্তু এত বছরেও হয়নি বিচার। বদলেছে তদন্তকারী সংস্থা, প্রশাসন ও ক্ষমতার রং— কিন্তু বদলায়নি মামলার গতি। ন্যায়বিচারের আশায় আজও আদালতের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন খালেদের মা।
২০১৬ সালের ১ আগস্ট কুবির বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে (বর্তমানে বিজয়-২৪ হল) বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দেওয়া নিয়ে ছাত্রলীগের দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান কাজী নজরুল ইসলাম হল শাখা ছাত্রলীগের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক ও মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী খালেদ সাইফুল্লাহ।
খালেদের মা ফাতেমা আক্তার বলেন, আমার ছেলের খুনিরা এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিতে। আগে ছাত্রলীগের নেতারা আসামিদের পক্ষে সুপারিশ করত, এখন ছাত্রদলের নেতারাও টাকার বিনিময়ে তা করছে।
সরকার পরিবর্তনের পর অনেকে আশাবাদী হলেও মামলায় গতি আসেনি। উল্টো নতুন করে আসামিদের পক্ষ নিয়ে সুপারিশ করার অভিযোগ উঠেছে কুবি ছাত্রদলের সদস্য সচিব মোস্তাফিজুর রহমান শুভর বিরুদ্ধে।
ফাতেমা আক্তার বলেন, ‘শুভ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে গিয়ে বলেছে, আসামিরা নির্দোষ। আমি বহুবার ফোন করেছি, ধরেনি। পুলিশ সুপারের দপ্তর থেকেই জেনেছি কী বলেছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোস্তাফিজুর রহমান শুভ বলেন, ‘আমি এ ধরনের কোনো কাজ করিনি। বরং তাদের পরিবার ও আইনজীবীকে পরামর্শ দিয়েছি। পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে যাইনি। কেউ অভিযোগ প্রমাণ করতে পারলে দল যে সিদ্ধান্ত নেবে, আমি তা মেনে নেব।’
কুবি ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাফায়েত হোসেন স্বজল বলেন, দলীয়ভাবে কেউ আসামিদের পক্ষে সুপারিশ করতে পারে না। যদি কেউ করে থাকেন, তবে তা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত।
একই বক্তব্য দেন অরেক যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল বাশার। অভিযোগ নিয়ে কথা বলতে সংগঠনের আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল মামুন ফোন ধরেননি।
নিহত খালেদের মা আরও বলেন, আমার ছেলের রক্তের বদলে আসামিরা চাকরি পেয়েছে। তদন্তের নামে চলছে নাটক। বারবার চার্জশিট দেওয়া হচ্ছে; কিন্তু মূল খুনিরা বাদ থাকছে।
খালেদ হত্যার ঘটনায় ২০১৬ সালের ২ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা ছাদেক হোসেন মজুমদার বাদী হয়ে মামলা করেন। ওই সময় ছাত্রলীগের সাত নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিপ্লব চন্দ্র দাস নামে এক আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায় হত্যার দায় স্বীকার করেন। এরপর তদন্তের দায়িত্ব পরিবর্তিত হয়ে যায় একে একে ডিবি, পিবিআই, সিআইডি ও সর্বশেষ কুমিল্লা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে। তবে প্রতিবারই চার্জশিটে বাদ পড়েছে মূল অভিযুক্তদের নাম— এমন অভিযোগ তুলে বারবার নারাজি দেন খালেদের মা।
মামলার বাদী ছাদেক হোসেন মজুমদার বলেন, তদন্ত এখনো চলছে। খালেদের মায়ের নারাজির কারণে তদন্ত বিলম্বিত হচ্ছে। তবে আমরা আদালতে নিয়মিত খোঁজ নিচ্ছি।
বর্তমানে মামলার তদন্তের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইফুল মালিক বলেন, এটি একটি রাজনৈতিক মামলা। আমরা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে তদন্তের দায়িত্ব নিই। মামলার অগ্রগতি বা সুপারিশের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না দেখে কিছু বলা যাবে না।’
এ বিষয়ে কুবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. হায়দার আলী বলেন, আমাদের আইনজীবী মামলা দেখছেন এবং আমরা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি।
মন্তব্য করুন