রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনের ভোটগ্রহণের তারিখ পিছিয়েছে। পূর্বনির্ধারিত সময়ের ১৩ দিন পর আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
বুধবার (২৭ আগস্ট) দুপুর সাড়ে ১২টায় রাকসু কোষাধ্যক্ষ কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
সংশোধিত তফসিল অনুযায়ী—২৪ থেকে ৩১ আগস্ট মনোনয়নপত্র বিতরণ, ১ থেকে ৪ সেপ্টেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিল, ৮ ও ৯ সেপ্টেম্বর মনোনয়নপত্র বাছাই, ১১ সেপ্টেম্বর প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ, ১৪ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক তালিকা নিয়ে আপত্তি গ্রহণ ও নিষ্পত্তি, ১৫ সেপ্টেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার, ১৬ সেপ্টেম্বর প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ এবং ২৮ সেপ্টেম্বর একাডেমিক ভবনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
ভোটগ্রহণ শেষে একই দিন ফলাফল প্রকাশ করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এফ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘একটা আমাদের তফসিলে কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পরিবর্তন, ভোটকেন্দ্র স্থানান্তরের দাবি, নির্বাচনে নিরাপত্তার বিষয় এবং প্রার্থীদের ডোপ টেস্ট করতে হবে—যা করতে পাঁচ-ছয় দিন সময় লাগবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কোনো দলের চাপে পড়ে এ সিদ্ধান্ত নেইনি। আজ নির্বাচন কমিশনের সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।’
রাকসু ও সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের মনোনয়নপত্র রাকসুর কোষাধ্যক্ষের কার্যালয় থেকে এবং হল সংসদ নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র সংশ্লিষ্ট হলের প্রশাসনিক কার্যালয়ের রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা যাবে।
এদিকে রাকসু নির্বাচনের তারিখ পেছানোর প্রতিবাদে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রশিবির। বুধবার দুপুর ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন তারা। মিছিলটি বিভিন্ন অ্যাকাডেমিক ভবন প্রদক্ষিণ শেষে রাকসুর কোষাধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
বিক্ষোভ মিছিলে তারা ‘সিন্ডিকেট না, রাকসু রাকসু রাকসু’; ‘রাকসু নিয়ে টালবাহানা চলবে না চলবে না’; ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরও দেব রক্ত’; ‘রক্তের বন্যায় ভেসে যাবে অন্যায়’; ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’; ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’; ‘জুলাইয়ের হাতিয়ার, গর্জে উঠো আরেকবার’; ‘১ দফা ১ দাবি, ১৫ তারিখে রাকসু দিবি’ ইতাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
এ সময় নবাব আবদুল লতিফ হলের জিএস পদপ্রার্থী নুরুল ইসলাম শহীদ বলেন, ‘আপনারা জানেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে রাকসু নিয়ে এক উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিলো। কিন্তু দুঃখজনকভাবে একটি কুচক্রী মহল নিজেদেরকে ছাত্র পরিচয় দিয়ে নির্দিষ্ট একটি দলের প্রভাবে এসে রাকসুর অগ্রযাত্রাকে পিছিয়ে দিয়েছে। তাই আমরা সবাইকে আহ্বান জানাই—একত্রিত হোন। ইনশাআল্লাহ, আমরা ১৫ সেপ্টেম্বরই রাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব এবং ভোট দেব।’
একটি মাত্র দলের দালালি করতে নির্বাচন কমিশন তাদের নিরপেক্ষতা হারিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন রাবি শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মুজাহিদ ফয়সাল। তিনি বলেন, ‘সব শিক্ষার্থীদের সেন্টিমেন্টকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পিছিয়ে দিয়েছে। আমরা এটি প্রত্যাখ্যান করছি। আমি মনে করি, এই নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন সম্ভব নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘২৮ সেপ্টেম্বর সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দুর্গাপূজার মহাষষ্ঠী অনুষ্ঠান। এটা তাদের আবেগ অনুভূতির একটি জায়গা। পরিবারের সাথে উৎসব পালন করার দিন। কিন্তু তাদেরকে সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত করার পায়তারা চলছে। রাবির প্রায় ৩ হাজারের মতো সনাতন ধর্মাবলম্বী রয়েছে, তাদের ছাড়া নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক সম্ভব না।’
প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বর্তমান ডিজিটালাইজেশন এর যুগে তাদের হল অ্যাটাচমেন্ট ও ভোটার তালিকায় সংযুক্ত করা এক সপ্তাহের মধ্যেই করা সম্ভব। আমরা মনে করি, অ্যাকাডেমিক ভবনে ভোটকেন্দ্র, ছবিসহ ভোটার লিস্ট প্রদান, প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ভোটার তালিকায় যুক্ত সব দাবি মেনে নিয়ে ১৫ সেপ্টেম্বরই নির্বাচন দেওয়া সম্ভব।’
মন্তব্য করুন