ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় সংসদ নির্বাচন (ডাকসু) দীর্ঘ ৫ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। গতকাল ৭ সেপ্টেম্বর ছিল প্রচারের শেষ দিন। এখন ভোট উৎসবের পালা। আগামীকাল মঙ্গলবার (৮ সেপ্টেম্বর) ব্যালটের মাধ্যমে ডাকসু ও হল সংসদে পছন্দের প্রার্থী বেছে নেবেন ঢাবি শিক্ষার্থীরা।
দখলমুক্ত পরিবেশে প্রথম ডাকসু নির্বাচন নিয়ে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আট কেন্দ্রে বুথের সংখ্যা ১০০টি বাড়িয়ে ৮১০টি করেছে নির্বাচন কমিশন। গত শনিবার রাতে চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়।
এবারের নির্বাচনে মোট ৪৭০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ভোটাররা সহসভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস), সহসাধারণ সম্পাদকসহ (এজিএস) ২৮ জনকে বাছাই করবেন। প্রার্থীরা টানা ১২ দিনের প্রচার কার্যক্রম শেষ করেছেন।
গতকাল শেষ দিনে ছাত্রদল মনোনীত প্যানেল, শিবির-সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট, উমামা ফাতেমার নেতৃত্বে স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য, বাম-সমর্থিত প্রতিরোধ পর্ষদসহ ১০টি প্যানেল এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রচারণা ছিল চোখে পড়ার মতো।
ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় ভোটারদের কাছে গিয়ে ভোট চেয়েছেন প্রার্থীরা। সেই সঙ্গে একপক্ষ অন্য পক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন সমানতালে।
বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ প্যানেলের জিএস প্রার্থী আবু বাকের মজুমদার অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষতা হারিয়েছে। নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কমিশন। ভোটের দিন ভোট দিতে পারবেন কি না এমন সন্দেহও শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছে।
প্রতিরোধ পর্ষদের জিএস প্রার্থী মেঘমল্লার বসু হাসপাতালে অস্ত্রোপচার শেষে হুইলচেয়ারে বসে প্রচারণায় যোগ দেন। ভোটারদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা ভোট দিলে অনেক সমীকরণ বদলে যাবে।
গতকাল প্রচারণার সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন শিবির-সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের ভিপি প্রার্থী আবু সাদিক কায়েম। তিনি বলেন, কোনো বড় নেতা এলাকা থেকে ফোন দিয়ে ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেলের পক্ষে ভোট চাওয়া, এটা ফ্যাসিবাদী কায়দা। কমিশনের কার্যক্রমে শঙ্কা রয়েছে।
সমীকরণ মেলাচ্ছেন প্রার্থীরা
ভোটের দ্বারপ্রান্তে এসে এখন বিভিন্ন ধরনের সমীকরণ মেলাচ্ছেন প্রার্থীরা। এবার ডাকসুতে মোট ভোটার ৩৯ হাজার ৮৭৫ জন। এর মধ্যে ছাত্রীদের পাঁচটি হলেই আছেন ১৮ হাজার ৯৫৯ জন। অর্থাৎ, মোট ভোটারের ৪৭ দশমিক ৫৪ শতাংশই নারী। বাকি ১৩টি ছাত্র হলে রয়েছেন মোট ২০ হাজার ৯১৬ জন ভোটার।
ছাত্রদের হলগুলোর মধ্যে অমর একুশে হলে ১ হাজার ৩০০, বিজয় একাত্তর হলে ২ হাজার ৪৩, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লা হলে ২ হাজার ৫, ফজলুল হক মুসলিম হলে ১ হাজার ৭৭২, হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলে ১ হাজার ৪০৭, জগন্নাথ হলে ২ হাজার ২২৫, শেখ মুজিবুর রহমান হলে ১ হাজার ৬০৯, কবি জসীমউদ্দীন হলে ১ হাজার ২৯৮, জিয়াউর রহমান হলে ১ হাজার ৭৫৩, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে ৬৬৫, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে ১ হাজার ৯৬৩, স্যার এ এফ রহমান হলে ১ হাজার ৩৮১ ও সূর্যসেন হলে ১ হাজার ৪৯৫ জন ভোটার রয়েছেন।
ছাত্রীদের হলগুলোর মধ্যে রোকেয়া হলে ৫ হাজার ৬৬৫, শামসুন নাহার হলে ৪ হাজার ৯৬, বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলে ২ হাজার ১১০, কবি সুফিয়া কামাল হলে ৪ হাজার ৪৪৩ ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব হলে ২ হাজার ৬৪৫ জন নারী ভোটার রয়েছেন।
নারী ভোটার টানতে ছাত্রীদের হলগুলোতে প্রজেকশন মিটিং করেছে প্যানেলগুলো। আবার জগন্নাথ হলে ভোট পাওয়ার শঙ্কায় রয়েছে ছাত্রশিবির-সমর্থিত প্যানেল, নারী ভোটার টানাও চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে তাদের জন্য।
জগন্নাথ হল সূত্রে জানা গেছে, সেখানকার ভোট বাম ও ছাত্রদল-সমর্থিতরাই বেশি পাবেন। অন্যদিকে স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্যের ভিপি প্রার্থী উমামা ফাতেমা মনে করেন, মেয়েদের বিষয়গুলো তিনি খুব কাছ থেকে যেহেতু দেখছেন, সে ক্ষেত্রে তারাই এগিয়ে থাকবেন।
বিশ্লেষকদের মতে, যেসব ভোটার ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত এখনো নেননি, নির্বাচনে তারাই হবেন ট্রাম কার্ড। সুইং ভোটারদের সিদ্ধান্তই নির্ধারণ করবে ভিপি-জিএস কারা হবেন। এই সমীকরণে রোকেয়া হল, সুফিয়া কামাল হল, জিয়াউর রহমান হল, সার্জেন্ট জহুরুল হক হল, জগন্নাথ হলের মতো স্থানে ভোটারদের বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
মন্তব্য করুন