নির্বাচনের মৌসুম মানেই রঙিন পোস্টার আর লিফলেটের ছড়াছড়ি। প্রচারণার সেই প্রচলিত ধারা ভেঙে এবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) রাকসু নির্বাচনে এক প্রার্থী হাজির হয়েছেন একদম নতুন এক উদ্যোগ নিয়ে। তার নির্বাচনী লিফলেটটি কেবল তথ্যবহুল নয়— এটি মাটিতে ফেললেই জন্মাবে গাছের চারা!
বন কাগজে তৈরি এই বিশেষ লিফলেট মাটি বা পানির সংস্পর্শ পেলেই গজাবে ফুল, ফল কিংবা শাকসবজির চারা। পরিবেশবান্ধব এই ব্যতিক্রমী চিন্তার জনক হলেন আসন্ন রাকসু নির্বাচনে বৈষম্যবিরোধী প্যানেল থেকে ক্রীড়া ও খেলাধুলা বিষয়ক সম্পাদক পদে প্রার্থী মো. ইয়াছিন আরাফাত বিজয়।
শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের এ শিক্ষার্থী জানান, তার লিফলেট তৈরি হয়েছে বিশেষ প্রযুক্তির মাধ্যমে।
তিনি বলেন, ‘আমার এ বন কাগজের মধ্যে ২০ ধরনের বীজ ঢোকানো আছে— মূলত ফুল, ফল ও সবজি গাছের বীজ। রাকসু নির্বাচনের ছয় মাস পরও কেউ যদি এটি মাটিতে বা পানিতে রাখে, তাহলে সেখান থেকে চারা গজাবে।’
বিজয়ের ব্যালট নম্বর ৫। প্রচারণার সময় যখন শিক্ষার্থীরা হাতে এই লিফলেট পাচ্ছেন, তারা শুধু তথ্য পড়েই থেমে থাকছেন না— এটি যত্ন করে পকেটে বা মানিব্যাগে রেখে দিচ্ছেন। কেউ কেউ বলছেন, নির্বাচনের পর তারা টবে বা খোলা জায়গায় এটি রাখবেন গাছ জন্মানোর আশায়।
বিজয়ের ভাষায়, ‘রাকসু নির্বাচন শেষ হলেও আমি চাই শিক্ষার্থীদের মনে বেঁচে থাকতে— গাছের চারার মতো। তাই এই উদ্যোগ নিয়েছি। এতে যেমন পরিবেশ দূষণ কমবে, তেমনি ক্যাম্পাস সবুজ হয়ে উঠবে।’
তিনি বলেন, ‘অন্য প্রার্থীরা সাধারণ কাগজ ব্যবহার করছেন, যা গাছ কেটে বানানো হয়। কিন্তু আমার লিফলেট থেকেই নতুন গাছ জন্মাবে— এটাই আমার বার্তা।’
নিজের ইশতেহার প্রসঙ্গে বিজয় জানান, তিনি খেলাধুলাকে শুধু প্রতিযোগিতা নয়, বরং একাডেমিক ও নীতিনির্ধারণী দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেন।
বিজয় আরও জানান, আমি ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। জানি খেলাধুলার টেকসই উন্নয়ন কেমন হওয়া উচিত। শুধু মাঠে খেলা নয়, স্পোর্টস পলিসি তৈরি করাও ক্রীড়া সম্পাদকের কাজ। রাবির খেলাধুলা ব্যবস্থায় গবেষণাভিত্তিক পরিবর্তন আনতে চাই
তিনি জানান, তিনি ইতোমধ্যে রাবি স্টেডিয়াম সংস্কার বিষয়ে ১০ দফা দাবি উপস্থাপন করেছিলেন, যার মধ্যে ৬ দফা বাস্তবায়ন হয়েছে। এখন সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা এবং স্টেডিয়াম আধুনিকায়নের কাজ চলছে।
তার ইশতেহারের অন্যতম প্রতিশ্রুতি হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন (প্রতিবন্ধী) শিক্ষার্থীদের জন্য প্যারা অলিম্পিকের আদলে বার্ষিক গেমস আয়োজন করা।
আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী মাজরুর জামান বলেন, ‘প্রথমে আমি তার লিফলেটকে সাধারণ পোস্টার ভেবেছিলাম। পরে যখন জানলাম এর ভেতরে বীজ ঢোকানো আছে, সত্যিই অবাক হয়েছি। বাংলাদেশে এরকম প্রচারণা বিরল— তাকে অভিনন্দন জানাই।’
সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী তুহিন বলেন, ‘স্পোর্টস বিষয়ক পদে তিনি যোগ্য প্রার্থী। তার লিফলেটের ব্যতিক্রমী ভাবনা সত্যিই প্রশংসনীয়।’
পরিবেশবান্ধব এই উদ্যোগ শুধু নির্বাচনী কৌশল নয়, বরং এক নতুন চিন্তার প্রতীক। প্রচারণা শেষে যেখানে লিফলেটগুলো সাধারণত আবর্জনায় পরিণত হয়, সেখানে বিজয়ের লিফলেটই হয়তো নতুন প্রাণের জন্ম দেবে— সবুজে ঢেকে দেবে ক্যাম্পাসের এক কোণা।
মন্তব্য করুন