

শীতের হিমেল ভোরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) কৃষি অনুষদ চত্বরে ছড়িয়ে পড়েছিল পিঠা-পুলির উষ্ণ সুবাস। ‘হিম হিম শীতের বাতাস, উষ্ণতায় ছড়ায় পিঠা পুলির সুবাস’ এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে রোববার (১৬ নভেম্বর) প্রাণবন্ত নবান্ন ও ‘পিঠা উৎসব ১৪৩২’-এর আয়োজন করে এগ্রোনমি অ্যান্ড এগ্রিকালচার এক্সটেনশন সমিতি।
সকাল ৯টায় ধান কেটে উৎসবের উদ্বোধন করা হয়। নতুন ধান ঘরে তুলেই নবান্ন উদযাপনের যে বৈচিত্র্যময় গ্রামীণ ঐতিহ্য, তারই এক দৃষ্টিনন্দন প্রতিফলন দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদ চত্বরে। এরপরই শুরু হয় পিঠার বর্ণিল আয়োজন যেখানে জড়ো হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ অসংখ্য মানুষ।
প্রতি বছরের মতো এবারও উৎসবমুখর পরিবেশে পিঠা খাওয়া, নাচ-গান, আনন্দ-উল্লাসে পুরো অনুষদ প্রাঙ্গণ সরগরম হয়ে ওঠে। অনুষদের সামনে থেকে বের হওয়া বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে উৎসবকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে।
এবারের পিঠা উৎসবে ছিল শিক্ষার্থীদের তৈরি প্রায় দেড় শতাধিক পদের পিঠা। বিভিন্ন স্টলে সাজানো ছিল দুধপুলি, চন্দ্রপুলি, নারকেল পুলি, তেলপিঠা, নকশি পিঠা, দুধচিতই, শামুক পিঠা, জামাই পিঠা, পাটি সাপটা, গোলাপ ফুল, সুজির বড়া, মালাই বিহার, ডাবের পুডিং, রূপালি পিঠা, বুটের বরফি, মোহনভোগ, ডিম সুন্দরী, মাছের পিঠা, গাজরের হালুয়া, খিরপুলি, এভাবে দীর্ঘ তালিকা।
এত বৈচিত্র্যময় পিঠার সমাহার যেন একদিনের জন্য কৃষি অনুষদকে পরিণত করেছিল শীতের গ্রামীণ স্বাদবাজারে। মাত্র ১০ টাকা থেকে শুরু হওয়া বিভিন্ন দামের এসব পিঠা কিনতে উৎসবে জড়ো হওয়া শিক্ষার্থীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। পিঠার স্বাদ যেমন আনন্দ দিয়েছে, তেমনি শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল আয়োজন মুগ্ধ করেছে সবাইকে।
এগ্রোনোমি অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন বিভাগের শিক্ষার্থী জেরিন জেবা বলেন, নবান্ন উৎসব আমাদের বিভাগের একটি ঐতিহ্য। নতুন ধান উঠলে ঘরে পিঠা তৈরি করার যে সংস্কৃতি, আমরা সেটাকেই ধারণ করি। এই উৎসব আমাদের সাংস্কৃতিক শেকড়ের সঙ্গে যুক্ত রাখে।
বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী ধ্রুব বলেন, নবান্ন উৎসব আমাদের বিভাগের একটি ঐতিহ্য। ঐতিহ্যকে ধারণ করে আমাদের বিভাগ প্রতি বছর এ আয়োজন করে থাকে। এ আয়োজনের সব থেকে ভালো লাগার জায়গা হলো পিঠা উৎসব। আমরা বিভিন্ন ধরনের পিঠা তৈরি করছি, বিক্রি করছি, এর মাধ্যমে নবান্নের উৎসবকে আরও বেশি আমেজময় করে তুলেছে।
এগ্রোনোমি অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নবান্ন আমাদের কৃষি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। শিক্ষার্থীদের এমন প্রাণবন্ত অংশগ্রহণ দেখে আমরা উৎসাহ পাই।
মন্তব্য করুন