

বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেছেন, ১৯৭১ সালে যখন তৎকালীন রাজনীতিবিদরা যখন দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন, সেই কঠিন সময়ে মাত্র দেশপ্রেম ও জনগণের প্রতি দায়িত্ববোধ থেকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় নিজের জীবন ও পরিবারের কথা ভুলে গিয়ে মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি কোনো পদে বা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার মতো ক্ষমতার লোভও দেখাননি। বরং তার দায়িত্বস্থলে ফিরে যান এবং দেশের প্রতি তার কর্তব্য পালন করতে থাকেন।
রোববার (২৩ নভেম্বর) বিকেল ৬টায় ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর উপলক্ষে সেমিনার ও আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি। ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) জাতীয়তাবাদী পরিবারের উদ্যোগে আলোচনা সভা ও সেমিনারের আয়োজন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী পরামর্শ ও নির্দেশনা কেন্দ্রের পরিচালক ও চবির নৃবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি ড. আনোয়ার হোসেনের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দিন।
ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, জিয়াউর রহমান সার্ক প্রতিষ্ঠা করেন যে কাজ পশ্চিমা বিশ্বকে করতে ২০০৩ অথবা ২০০৪ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে, তিনি তা করেছিলেন ৮০ দশকেই। কৃষি, জনশক্তি ও শিক্ষা এ তিন ক্ষেত্রে তিনি ভিত্তি স্থাপন করেন। বহুদলীয় রাজনীতির প্রয়োজনীয়তা তিনি উপলব্ধি করেন এবং তা প্রতিষ্ঠা করেন। স্বাধীনতার পর, যখন দেশের প্রয়োজন ছিল, তখনই জনগণ তাকে আবার আস্থার জায়গায় নিয়ে আসে।
তিনি আরও বলেন, জুলাই আন্দোলনকে শক্তিশালী করার জন্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সবাইকে সহায়তা করেছেন। হাসিনা পালিয়ে গেলেও ক্ষমতায় যাননি, দল পুনর্গঠনের করছেন তিনি। এ কারণেই জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। বৈষম্যহীন সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের প্রবক্তা এ জাতীয়তাবাদী আদর্শ। ১৮ কোটি মানুষের দেশে প্রায় ৯ কোটি নারী তাই জিডিপির চেয়েও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে মানবসম্পদ উন্নয়নে। মানুষের সেবা করাই রাজনীতি; দেশের সেবা করাই রাজনীতি।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তিলাওয়াত, জাতীয় সংগীত পরিবেশন এবং শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন এবং আইয়ুবুর রহমান তৌফিক।
জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুর রহমানের স্বাগত বক্তব্য বলেন, আমরা সবাই ৭ নভেম্বরের মর্যাদা ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব গভীরভাবে উপলব্ধি করি। এ বিপ্লব না হলে আমরা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে নেতৃত্বে পেতাম না। ৭ নভেম্বরের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে আমরা ধানের শীষকে বিজয়ের পথে নিয়ে যেতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আজ এখানে জাতীয়তাবাদী পরিবার একত্রিত হয়েছে এটাই আমার সবচেয়ে বড় আনন্দ ও শক্তি। তিনি আরও বলেন, আমাদের বিরোধীরা নানা সময় মিথ্যা তথ্য ছড়ায়, কখনও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করেও বিভ্রান্তি তৈরি করতে চায়। কিন্তু আমরা আইনসম্মত ও শান্তিপূর্ণ পথেই প্রতিটি অপপ্রচারের জবাব দেব। তারা যতই মিথ্যা রটনা করুক আমরা লিগ্যাল পথে ব্যবস্থা নেব, যাতে তাদেরই হাজিরা দিতে দিতে শেষ হয়ে যায়।
অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক ও মেরিন সাইন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের নীতিনির্ধারণে মীর হেলালের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আজকের অনুষ্ঠানে মোট দুটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হবে। পাশাপাশি রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ী ৯ জন শিক্ষার্থীকে পুরস্কৃত করা হবে। এছাড়াও চাকসুতে বিজয়ী শিক্ষার্থীদের আমরা সম্মানিত করব।
তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের দুটি জাতীয়তাবাদী সংগঠন আছে। সেই সঙ্গে ছাত্রদলকে আমরা আমাদের পরিবারের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে মনে করি। সবাই মিলেই আমরা জাতীয়তাবাদী চেতনা ও সংগঠনের অগ্রযাত্রাকে আরও শক্তিশালী করে তুলব।
চবির প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মনজুরুল কিবরীয়া বলেন, এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। বিগত সময়ে আমাদের জাতীয়তাবাদীদের ‘জ’ উচ্চারণ করতেও দেওয়া হয়নি, অতীতের সত্য ঘটনাগুলো জানতেও দেওয়া হয়নি। ৭ নভেম্বর এরকমই একটি ঐতিহাসিক দিন। ৭ নভেম্বরসহ সামগ্রিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় ৫ আগস্টকে আমি তৃতীয় স্বাধীনতা বলে মনে করি। আজ আমাদের সবার দায়িত্ব হলো ৩১ দফার লক্ষ্য নিয়ে একসঙ্গে কাজ করা। সামনে জাতীয় নির্বাচন এ নির্বাচনে আমরা সবাই যেন ধানের শীষের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হতে পারি, সেটাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন চবি জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি ও বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আল আমিন, চবি ছাত্রদলের সভাপতি আলাউদ্দিন মহসিন, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান, সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন হৃদয়, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইয়াছিন।
মন্তব্য করুন