

সাভারের আশুলিয়ায় গণবিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে মেসে ডেকে নিয়ে রাতভর র্যাগিং, মারধর ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদ ও বিচার চেয়ে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) সকালে ঘটনার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন প্রথম সেমিস্টারের শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা ‘র্যাগিং নয়, শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ চাই’, ‘নির্যাতনকারীদের শাস্তি চাই’ এমন স্লোগান দেন।
এর আগে সোমবার (২৪ নভেম্বর) রাতে আশুলিয়ার নলাম এলাকার একটি ভাড়া বাসায় এ ঘটনা ঘটে। নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থী শের আলী (২০) গণবিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রথম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী। বর্তমানে তিনি আশুলিয়ার গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অভিযুক্তরা হলেন— গণবিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী অন্তু দেওয়ান (২২), মেহেদী হাসান (২১), আশরাফুল (২২) এবং তাদের সহযোগীরা।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, আন্দোলনের সময় অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা এসে তাদের ভয়ভীতি দেখায় ও আন্দোলন থেকে সরে যেতে চাপ দেয়। শিক্ষার্থীদের দাবি— ঘটনাটি দায়মুক্তির সংস্কৃতিতে ছেড়ে না দিয়ে দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। গবিতে র্যাগিং সংস্কৃতির অবসান না হলে নিরাপত্তাহীনতা থেকেই যাবে।
ভুক্তভোগী শের আলী সাংবাদিকদের জানান, প্রথমে তাকে বাসায় ডেকে হুমকি দেওয়া হয়। পরে রাতে খিচুড়ি খাওয়ার কথা বলে আবার ডেকে নেওয়া হয়। এরপর অন্যদের বিদায় দিয়ে তাকে আটকে রাখা হয়।
তিনি আরও বলেন, রাত ৯টা থেকে ভোর পর্যন্ত টানা আমাকে চড়-থাপ্পড়, লাথি মারে। এক পায়ে দাঁড় করিয়ে অপমান করে। প্যান্ট খুলতে বাধ্য করে। কান ধরে উঠ-বস করায়। শেষে পায়ে পড়ে ক্ষমা চাইতে হয়। সকালে হাসপাতালে আসার পরও অভিযুক্তরা এসে চাপ দেয় বিষয়টি মিটিয়ে ফেলতে।
অভিযুক্ত অন্তু দেওয়ান (২৭ ব্যাচ) বলেন, শের আলী আমাদের জুনিয়র তাকে শাসন করতেই পারি, গায়ে হাত তোলার কিছু হয়নি। এ ধরনের কথা ভিত্তিহীন। এখানে আমার নাম জড়ানো হচ্ছে, আমি নিজেও বিব্রতবোধ করছি।
তিনি আরও বলেন, ‘খিচুড়ির দাওয়াতে আমি গেছিলাম। সে বেয়াদবি করায় তাকে শাসানো, বকাবকি করা হয় কিন্তু ফিজিক্যালি এসল্ট করা হয় নাই বা এ ধরনের কিছুই হয় নাই। আর এটা বাইরের ঘটনা। আমরা যারা সিনিয়র আছি আমরা সমাধানের চেষ্টা করব। জুনিয়ররা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে, প্রশাসন সমাধান করবে।’
গণস্বাস্থ্য হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. নকিব জাহাঙ্গীর বলেন, শিক্ষার্থীর শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের দাগ রয়েছে। তাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। পুরোপুরি সুস্থ হতে সময় লাগবে।
গণবিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য সচিব কনক চন্দ্র রায় বলেন, বিষয়টি ভিসি স্যারকে জানানো হয়েছে। হাসপাতালে গিয়ে শিক্ষার্থীর খোঁজ নেওয়া হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আশুলিয়া থানার ওসি আব্দুল হান্নান বলেন, ঘটনা সম্পর্কে এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন