যৌন হায়রানির অভিযোগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) চিকিৎসক ডা. রাজু আহমেদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতকরণ ও স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুতের দাবি জানিয়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর।
মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) দুপুর ১২টার দিকে প্যারিস রোডে আয়োজিত এক মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে এসব দাবি জানিয়েছে তারা।
মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, তিনি একই ধরনের ঘটনা দীর্ঘদিন ধরে ঘটাচ্ছেন। এর আগেও তার বিরুদ্ধে নারীদের শ্লীলতাহানি করার অভিযোগ উঠেছিল। যে নিজেকে সংযত রাখতে পারেন না; তার শুধু চাকরি না, তার চিকিৎসার সনদও বাতিল করা দরকার। এ বিষয়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোবাররা সিদ্দিকা বলেন, আমাদেরকে একই দাবিতে বারবার রাস্তায় দাঁড়াতে হচ্ছে। আমরা সহকর্মী, শিক্ষক ও নারী হিসেবে কোথাও নিরাপদ নই। এটি অত্যন্ত দুঃখের নাকি লজ্জার বিষয়, কি বলবো বুঝতে পারছি না। যেহেতু একটি মামলা হয়েছে তাই রাষ্ট্রীয় আইনে আসামিকে অতিদ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান তিনি।
এ ছাড়া মানববন্ধনে বক্তব্য দেন আইন বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল আলিম, রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক লায়লা আরজুমান বানু, রাজশাহী মহিলা আইনজীবি সমিতির অ্যাডভোকেট দিলসেতারা চুনি প্রমুখ। এ ছাড়া কর্মসূচিতে বিভিন্ন বিভাগের দুই শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিশুর মা বাদী হয়ে নগরের বোয়ালিয়া থানায় মঙ্গলবার সকালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেছেন। এর আগে গত সোমবার রাত ৮টার দিকে নগরের তালাইমারি এলাকার আমেনা ক্লিনিকে এ ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্ত চিকিৎসকের নাম ডা. রাজু আহমেদ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের উপ-প্রধান চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত। এদিকে এ ঘটনার আড়াই ঘণ্টা পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে তালাইমারি মোড়ে দুর্বৃত্তদের হামলায় ওই চিকিৎসক আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন তার ভাগ্নে রাসেল।
তবে ভুক্তভোগী শিশুর মা বলছেন, ঘটনার সময় অভিযুক্ত ব্যক্তির সঙ্গে তার একটু হাতাহাতি হয়েছে। এ বিষয়টিকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তি হামলার স্বীকার বলে চালাচ্ছেন এবং হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
ভুক্তভোগীর মা মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন, চিকিৎসক রাজু আহমেদের সঙ্গে তার (ভুক্তভোগীর মা) ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠে। তিনি (অভিযুক্ত চিকিৎসক) তাকে বোন বলে ডাকেন। সেই সম্পর্কের জের ধরে তার মেয়েকে তার নিকট নিয়মিত দাঁতের চিকিৎসা করান। গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে নগরের তালাইমারী এলাকার আমেনা ক্লিনিকের নিচতলায় ওই চিকিৎসকের চেম্বারে তার মেয়েকে চিকিৎসা করাতে যান। পরে রাত ৮টা ৪০ মিনিটের দিকে ভুক্তভোগীর মায়ের মোবাইল ফোনে কল আসলে তিনি কথা বলার জন্য চেম্বার থেকে বাইরে বের হন। এমতাবস্থায় ওই চিকিৎসক তার মেয়ের শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেয়। এতে তার মেয়ে ভয়ে চিৎকার দেন। এরপর তিনি ভিতরে প্রবেশ করলে তার মেয়েকে কান্নারত অবস্থায় দেখতে পান এবং মেয়ের মুখে ঘটনার বর্ণনা শুনেন।
এ ব্যাপারে নগরের বোয়ালিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহরাওয়ার্দী হোসেন বলেন, এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর মা বাদী হয়ে আজ সকালে একটি মামলা দায়ের করেছেন। আমরা ঘটনাটি তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
মন্তব্য করুন