চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থী নন। কিন্তু আবাসিক হলে থেকে ইতিহাস বিভাগে নিয়মিত ক্লাস করেছেন দুই বছর। ছাত্রলীগের গ্রুপভিত্তিক মারামারিতেও অংশ নিয়েছেন নিয়মিত।
সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র দখলকে কেন্দ্র করে শাখা ছাত্রলীগের দুই উপগ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় ২৩ জনকে শোকজ করেছে প্রশাসন। সেই শোকজের পর জানা গেল এই ভুয়া ছাত্রের পরিচয়। বৃহস্পতিবার (৩০ মে) বিকেল ৩টার দিকে ইতিহাস বিভাগের ২০২ নম্বর কোর্সের একটি টিউটোরিয়াল পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সময় এই ভুয়া শিক্ষার্থীকে শনাক্ত করেন বিভাগের এক শিক্ষক।
জানা গেছে, ইমন হাসান রাব্বি নামের ওই ভুয়া শিক্ষার্থী চবির ইতিহাস বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের সঙ্গে ক্লাস করতেন।
চবি ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক উপগ্রুপ 'চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ার' (সিএফসির) আব্দুর রব হলে থাকার পাশাপাশি ক্যাম্পাসের সংঘর্ষগুলোতে নিয়মিত অংশ নিতেন। ইতিহাস বিভাগ থেকে মাইগ্রেশন হয়ে অন্য বিভাগে চলে যাওয়া এক শিক্ষার্থীর আইডি ব্যবহার করে গত দুই বছর নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছিলেন ইমন।
গত ২১ মে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলা নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র দখলকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে জড়ানোর ঘটনায় চবি ছাত্রলীগের দুই উপগ্রুপ- বিজয় ও সিএফসির ২৩ কর্মীকে শোকজ করে তদন্ত কমিটি। তবে বিভাগে শোকজ নোটিশ পাঠাতে গেলে দেখা যায়- ওই শিক্ষার্থীর নাম এবং আইডির কোনো মিল নেই।
বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য একাডেমিক শাখায় খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ওই নামের কোনো শিক্ষার্থী নেই।
এ বিষয়ে জানতে ইতিহাস বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. শামীমা হায়দারের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও সেটি রিসিভ হয়নি।
ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হাসিবুল ইসলাম বাবু বলেন, প্রথম বর্ষ থেকেই ইমন নিয়মিত ক্লাস করত। তার আইডি নম্বর ছিল-২২১০৩১১২। তবে এ আইডি নম্বর বাংলা বিভাগে মাইগ্রেশন হওয়া লিমন নামের আরেকজন শিক্ষার্থীর বলে জানতে পেরেছি। এ ছাড়া বিভাগের বিভিন্ন অনুষ্ঠান, ট্যুরেও নিয়মিত অংশগ্রহণ করত সে। প্রথমবর্ষে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করেও রেজাল্ট প্রকাশের পর ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সে জানিয়েছিল তার রেজাল্ট সিজিপিএ ৩ দশমিক ৩৮। তখন বিষয়টিকে দুষ্টুমি মনে করেছিলাম। তবে এ ঘটনার পর হলে গিয়ে দেখি ওর আইডি নম্বর, নাম এবং রেজাল্ট কিছুই নেই। এরপর ওর আসল আইডি নম্বর জানার জন্য ওর কয়েকজন ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সঙ্গে কথা বলি কিন্তু ওরা কিছুই জানে না।
এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব ও সহকারী প্রক্টর রিফাত রহমান বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় যে ২৩ জনকে শোকজ করা হয়েছে তাদের সবার বিভাগ, হল ও পরিবারের কাছে আমরা চিঠি পাঠিয়েছি। তবে ইমনের নামে চিঠি দিতে গিয়ে দেখি তার নাম এবং আইডি নম্বর মিলছে না। তখন আমাদের সন্দেহ হয়। তার সহপাঠীদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি সে নিয়মিত ক্লাসও করে।
পরে বিষয়টি আমরা বিভাগের একজন শিক্ষককে জানাই। তিনি বিভাগের টিউটোরিয়াল পরীক্ষা দেওয়া অবস্থায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে অসংলগ্ন উত্তর দিতে থাকে। পরে ওই শিক্ষক তাকে অফিস কক্ষে যেতে বললে সে পালিয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, জানতে পেরেছি সে আবাসিক হলেও থাকে। সে হলে কাদের মাধ্যমে উঠেছে এটাও আমরা জানতে পেরেছি। এ বিষয়টিকে কোনোভাবেই ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। এরইমধ্যে আমরা তার পরিবারের ঠিকানাও পেয়েছি। তার গ্রামে পুলিশ পাঠিয়ে শনাক্ত করা হবে। পাশাপাশি এর সঙ্গে কারা জড়িত সেটাও খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।
মন্তব্য করুন