প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে সম্ভাব্য নির্বাচনী রূপরেখা ঘোষণার পর থেকেই আগামী এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে।
নির্বাচনের এই সময়ে পরীক্ষায় বসা সম্ভব নয় উল্লেখ করে তা পেছানোর জোর দাবি জানিয়েছেন অভিভাবকরা। একই সুরে কথা বলেছে বিএনপিসহ একাধিক রাজনৈতিক দল।
এর আগে গত শুক্রবার (৬ জুন) জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় হিসেবে এপ্রিলের প্রথমার্ধের কথা উল্লেখ করেন।
সাধারণত প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। চলতি বছরও (২০২৫) এসএসসি পরীক্ষা ১০ এপ্রিল শুরু হয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচনের ডামাডোলের মধ্যে সন্তানদের নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন অভিভাবকরা।
রাজধানীর একাধিক অভিভাবক জানান, নির্বাচনের মতো একটি বড় জাতীয় আয়োজনের সময় পরীক্ষা গ্রহণ শিক্ষার্থীদের জন্য বড় ধরনের মানসিক চাপ তৈরি করবে। নির্বাচনী প্রচার, যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ এবং সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে যাতায়াত ও পরীক্ষায় মনোযোগ দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।
অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মো. জিয়াউল কবির দুলু বলেন, জাতীয় নির্বাচন আমাদের কাছে সবার আগে। আমরা একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি। কিন্তু এপ্রিলে নির্বাচন হলে কোনোভাবেই এসএসসি পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব নয়। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে শিক্ষার্থীদের এই ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। সরকারকে অবশ্যই পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
এদিকে রাজনৈতিক দলগুলোও এপ্রিলে নির্বাচন আয়োজনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
গত সোমবার (৯ জুন) বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, এপ্রিলে তীব্র গরম ও ঝড়-বৃষ্টির মৌসুম। এ সময় এসএসসি ও মাদ্রাসার পরীক্ষা থাকে। তার ওপর পুরো রমজান মাসে নির্বাচনী প্রচারণা চালানো রোজাদারদের জন্য অত্যন্ত কষ্টসাধ্য হবে।
একই ধরনের আশঙ্কা প্রকাশ করেছে গণসংহতি আন্দোলন। এক বিবৃতিতে দলটি জানায়, প্রতিকূল আবহাওয়া, পাবলিক পরীক্ষা এবং রোজার কারণে এপ্রিলের প্রথমার্ধ নির্বাচনের জন্য কতটা অনুকূল হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আরও আলোচনার প্রয়োজন বলে মনে করে তারা।
তবে শিক্ষা বোর্ডগুলো জানিয়েছে, নির্বাচনের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো নির্দেশনা না পাওয়ায় তারা এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার জানিয়েছেন, ২০২৬ সালের এসএসসি পরীক্ষা এপ্রিলে অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তবে কোনো কিছুই চূড়ান্ত নয়।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দকার এহসানুল কবির এর আগে বলেছিলেন, নির্বাচনের বিষয়টি আমাদের জানানো হলে তখন পরীক্ষা নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। আমরা এখন চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছি।
উল্লেখ্য, সাধারণত পরীক্ষা শুরুর তিন থেকে চার মাস আগে রুটিন চূড়ান্ত করা হয়। নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষিত হওয়ায় এখন শিক্ষা মন্ত্রণালয়, নির্বাচন কমিশন এবং সরকারের উপদেষ্টামণ্ডলীর মধ্যে সমন্বিত আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্ট সবাই।
মন্তব্য করুন