ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। হত্যার আগে ওই ব্যক্তিকে ক্যানটিনে ভাত খেতে দিয়েছিলেন হলের শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় ওই ব্যক্তিকে চোর সন্দেহে আটক করে ফজলুল হক মুসলিম হলের শিক্ষার্থীরা।
পরে ওই ব্যক্তি নিজেকে চোর বলে স্বীকার করলে কয়েক দফায় মারধর করা হয়। তারপর রাত ১২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। বর্তমানে তার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রাখা হয়েছে।
নিহতের নাম তোফাজ্জল (৩০)। তার বাড়ি বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কাঠালতলি ইউনিয়নে। তিনি মানসিক ভারসাম্যহীনতায় ভুগছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
হলটির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সন্ধ্যায় হলে ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চলছিল। এমন সময় হলে হঠাৎ তোফাজ্জল নামে ওই ব্যক্তি হলে প্রবেশ করলে শিক্ষার্থীরা দুপুরে ছয়টি মোবাইল চুরির ঘটনার চোর সন্দেহে মূল ভবনের অতিথি কক্ষে নিয়ে তাকে মারধর ও জেরা করতে থাকে। একপর্যায়ে, তাকে নিয়ে হল ক্যানটিনে খাওয়ানো হয়। এরপর এক্সটেনশন ভবনের অতিথি কক্ষে নিয়ে দ্বিতীয় দফায় বুক, পিঠ, হাত ও পায়ে ব্যাপক মারধর করেন একদল শিক্ষার্থী।
এ সময় পা থেকে রক্ত বের হতে থাকে। এরপর রাত পৌনে ১০টার দিকে ফের মূল ভবনের অতিথিকক্ষে নিয়ে মারা হয়। ১০টার দিকে প্রক্টোরিয়াল মোবাইল টিমের সদস্যরা এলে মারধরকারী শিক্ষার্থীরা তফাজ্জলকে তাদের হাতে তুলে দিতে অস্বীকৃতি জানান। পরে কিছু শিক্ষার্থী ও কয়েকজন হাউস টিউটরের সহায়তায় তাকে প্রথমে শাহবাগ থানায় এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমদ কালবেলাকে বলেন, আমি বিষয়টি জানার পর এবং খোঁজখবর নেওয়ার পর ফজলুল হক মুসলিম হলের প্রাধ্যক্ষকে ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে আজকের মধ্যেই হলের বিধি অনুযায়ী হল পর্যায়ে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের জন্য বলেছি। এরপর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। সেই কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যেন দ্বিতীয়বার এমন ঘটনা না ঘটে সেই ব্যবস্থা আমরা নেব। ক্যাম্পাসে যে বা যারাই আইন নিজের হাতে তুলে নেবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ফজলুল হক হলের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে, আজই শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করা হবে।
মন্তব্য করুন