জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আলমের বিরুদ্ধে মদ্যপ অবস্থায় অসংলগ্ন আচরণ করার অভিযোগ করেছেন প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার। শনিবার (২১ অক্টোবর) জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লিমিটেডের (অরুণাপল্লী) সাধারণ সম্পাদক বরাবর একটি অভিযোগপত্র জমা দেন কবিরুল বাশার। অভিযুক্ত ড. সাব্বির আলম মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রভোস্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
ড. কবিরুল বাশার অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, ‘গত ১৮ অক্টোবর রাত সাড়ে ১১টায় আমাদের বাসার ফ্ল্যাট-মালিক প্রফেসর ড. সাব্বির আলম মাতাল অবস্থায় বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে অকথ্য ভাষায় আমাকে এবং আমার মৃত বাবাকে বকাবকি করেন। গার্ডরা এ সময় আতঙ্কিত হয়ে সবাই একসঙ্গে বাঁশি বাজানো শুরু করেন। বাড়ির ফ্ল্যাট-মালিক ও ভাড়াটিয়াদেরকে ইতিমধ্যে প্রধান ফটক এবং পকেট গেটের চাবি সরবরাহ করা হয়েছে। বলা হয়েছে রাত ১১টার পরে কেউ বাসায় ফিরলে নিজ দায়িত্বে গেট খুলে প্রবেশ করতে হবে। এরপরও বাড়ির প্রধান ফটক বন্ধ থাকায় তিনি অসদাচরণ করেন।'
অভিযোগপত্রে অধ্যাপক বাশার আরও উল্লেখ করেন, ‘আগে অধ্যাপক সাব্বির রাতে বাসায় ফিরতেন এবং কেয়ারটেকার খুলে দিতেন। কিন্তু প্রায় এক বছর ধরে অন্য ফ্লাট মালিকরা বাড়ির কমন চার্জ প্রদান না করায় আমি আমাদের বাসায় কেয়ারটেকারকে বাদ দিতে বাধ্য হয়েছি। সেদিন তিনি রাত করে ফিরে গেট খোলা না পেয়ে রাগান্বিত হয়ে বাসার সামনে দাঁড়িয়ে বকাবকি করে আমাকে গেট খুলে দিতে বলেন। এ ছাড়া ইতিপূর্বে আমি রাতে একদিন হাঁটার সময় পেছন থেকে ধর ধর বলে চিৎকার করেছেন। এমতাবস্থায় আমি এবং আমার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমার ধারণা যেকোনো সময় আমি বা আমার পরিবারের কেউ তার দ্বারা আক্রান্ত হতে পারি।’
এ ঘটনায় ড. সাব্বিরের বিরুদ্ধে আরও একটি অভিযোগ দিয়েছেন ১২ নম্বর রোডের ২৪৯ নাম্বার রোডের বাসিন্দা ইঞ্জিনিয়ার আবুল বাশার। শনিবার সাধারণ সম্পাদক বরাবর লিখিত অভিযোগত্রে তিনি উল্লেখ করেন, ‘১৯ অক্টোবর দিবাগত রাত ১২টা ৪৮ মিনিটে প্রফেসর ড. সাব্বির আলম আমাকে ফোন করে ঘুম ভাঙিয়ে অকথ্য ভাষায় বকাবকি করেছেন এবং তার বাড়ির গেট খুলে দিতে বলেন। আমি একজন বয়স্ক, অসুস্থ মানুষ। গভীর ঘুমের মধ্যে তার এহেন আচরণ আমাকে মর্মাহত এবং বিষণ্ন করেছে। কোনোভাবেই আমি এই আচরণ ভুলতে পারছি না।’ এ বিষয়ে প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, ‘ড. সাব্বির এবং আমি ১০ নম্বর রোডের ২৩৭ নম্বর বাড়িতে থাকি। ড. সাব্বির চারতলায় থাকেন, আমি তিনতলায় থাকি। তিনি আমার মৃত বাবাকে নিয়ে অকথ্য গালিগালাজ করেছেন। আমার বড় ভাই ৬৭ বছর বয়সী। এই অসুস্থ মানুষটাকে ফোন করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছেন। বিভিন্ন সময়ে তার অসংলগ্ন আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে শেষ পযার্য়ে নিরুপায় হয়ে অভিযোগ দিতে বাধ্য হয়েছি।’
এদিকে রোববার (২২ অক্টোবর) ড. কবিরুল বাশারের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ দিয়েছেন ড. সাব্বির। লিখিত অভিযোগপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, ‘ফ্ল্যাট ক্রয়ের পর থেকেই মালিক হিসেবে আমার অধিকার ক্ষুণ্ন করে আসছেন তারা। বিল্ডিংয়ের কমন বিষয়গুলোতে কখনই আমার মতামত নেওয়া হয় না। বিভিন্ন সময় আমার নামে মিথ্যা, ভিত্তিহীন এবং মনগড়া অভিযোগ দেয়, যা সম্পূর্ণ ব্যক্তি আক্রোশের বহিঃপ্রকাশ। গত ১৮ তারিখ কাউকে কিছু না জানিয়ে বিল্ডিংয়ের সব দরজা ভেতর থেকে তালাবদ্ধ করে রাখেন, যা আমাকে ভবনে বসবাস করতে না দেওয়ার জন্য তাদের পূর্বপরিকল্পনার অংশ। ভবনের একটি পরিচালনা কমিটি থাকা সত্ত্বেও কবিরুল বাশার ও তার স্ত্রী ভবনের সব ক্ষমতা নিজেদের কাছে কুক্ষিগত করে রাখেন। বিভিন্ন সময় লিফট্, পানির মোটর, জেনারেটর ও কমনরুমের চাবি নিজেদের কাছে রেখে আমাকে হেনস্তা করার চেষ্টা করেন। উপরন্তু আমাকে মাতাল ও সন্ত্রাসী বলে সামাজিক ও মানসিকভাবে নিপীড়ন করে আসছেন।’
অভিযোগের বিষয়ে অধ্যাপক সাব্বির আলম বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগটি বানোয়াট। আমি আগেই মৌখিকভাবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছিলাম। তিনি এটি জানতে পেরেই লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তা ছাড়া আমি মাতাল ছিলাম এবং তাকে ধর ধর বলে চিৎকার দিয়েছি— এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। সেদিন আমাদের না জানিয়ে তার স্ত্রী বিল্ডিংয়ের মেইন গেটের ভেতর থেকে তালা ঝুলিয়ে দেয়। ফলে আমাদের দীর্ঘক্ষণ বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এ সময় আমি বিরক্ত হয়ে চিৎকার করে ডাকি। তার ভাইকে কল দিয়ে তার বাসার কেয়ারটেকারকে পাঠাতে বলি তালা খোলার জন্য। তখন আবুল বাশার বলেন যে, তার (কবিরুল বাশারের) স্ত্রী তালা দিয়েছেন। তার বাবা—মাকে নিয়ে গালি দেওয়ার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি।’
মন্তব্য করুন