জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকা হত্যার বিচার এবং নিপীড়নে অভিযুক্ত আম্মান সিদ্দিকী ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন।
শনিবার (১৬ মার্চ) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভার্স্কযে মানববন্ধন ও এরপর ক্যাম্পাসে একটি বিক্ষোভ মিছিল করে সংগঠনটি।
বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মশিউর রহমান খান রিচার্ডের সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক ফারহানা মানিক মুনার সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জিন্নাত আরা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আরমানুল হক, ঢাকা নগর শাখার সাধারণ সম্পাদক নুসরাত হক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কিশোর সাম্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সীমা আক্তারসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকা আত্মহত্যা করেছেন। আত্মহত্যা করার কারণ হিসেবে ফেসবুকে তিনি লিখেছেন তার সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকী তাকে অনলাইনে-অফলাইনে থ্রেট দিয়েছেন। তিনি এ বিষয়ে সহকারী প্রক্টরের কাছে অভিযোগ করলে প্রক্টর অভিযুক্তের পক্ষ নিয়ে তাকে গালাগাল করেছেন। এই ঘটনার ধারাবাহিকতায়ই ফাইরুজ অবন্তিকা আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি করেছেন। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করি।
ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ বলেন, ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী নিপীড়নের ঘটনা অতি স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব যে প্রশাসনের সেই প্রশাসনই নিপীড়নের সাথে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িয়ে পড়েছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় নিপীড়নের এই দুষ্টুচক্র আবারও আমাদের সামনে এসেছে।
সভাপতির বক্তব্যে মশিউর রহমান খান রিচার্ড বলেন, অবন্তিকা নিজেই বলেছেন, এটা সুইসাইড না, এটা মার্ডার। টেকনিক্যালি মার্ডার। অবন্তিকা কাঠামোগত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। এই ঘটনায় শুধু নিপীড়ক সেই শিক্ষার্থী আর সহকারী প্রক্টরই জড়িত নন; এই প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত পুরো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র। কেন অবন্তিকারা নির্ভয়ে নিপীড়নের কথা বলতে পারে না, কেন তারা বিচার পায় না, যৌন নিপীড়নবিরোধী সেল কেন কার্যকর হয় না- এই উত্তরগুলোর মাঝেই অবন্তিকারা কেন আত্মহত্যা করে তার উত্তর আছে। এ ধরনের নিপীড়নের ঘটনা সামনে আসলেই আমরা দেখি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন লোকদেখানো কিছু উদ্যোগ নেয়, কিন্তু নিপীড়নের যে পুরো কাঠামো তা তারা সচল রাখে। এই সচল রাখার প্রকিয়াতেই ক্যাম্পাস সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য জাহান্নামে পরিণত হয়। যার স্বীকার হয় অবন্তিকা, হাফিজ, আবরারসহ অনেকে। আমাদের এই নিপীড়নের কাঠামো ধ্বংস করার জন্য লড়াই করতে হবে। নিপীড়নের এই কাঠামোর উচ্ছেদ ছাড়া আমরা বাঁচতে পারব না। আমরা শিক্ষার্থীদের সেই লড়াইয়ে ঐক্যবদ্ধ হবার আহ্বান জানাই।
সমাবেশে অন্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক অনুপম রায় রুপক, স্কুলবিষয়ক সম্পাদক হাসান আল মেহেদী, ঢাকা মহানগর ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি আল-আমিন রহমান, নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৃজয় সাহাসহ নেতৃবৃন্দ।
মন্তব্য করুন