জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ৯৫তম সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সিন্ডিকেট সভায় শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রীকে যৌন হয়রানি, অনৈতিক সম্পর্কের প্রস্তাবনার অভিযোগ, শিক্ষকের বিরুদ্ধে সহকর্মীদের সাথে অসদাচরণ, শিক্ষক নিয়োগসহ নানা বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
বুধবার (৩ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যলয়ের উপাচার্যের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা সূত্রে জানা যায়, শিক্ষার্থীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন ও যৌন হয়রানির অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবিএস মানিক মুনশি।
মানিক মুনশির বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্তে করা ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের একাধিক সদস্য। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে আসা অভিযোগ উচ্চতর তদন্তের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন ও প্রতিরোধ সেলে অভিযোগ পাঠানো হয়েছে।
জানা যায়, গেল বছরের সেপ্টেম্বরে গণিত বিভাগের শিক্ষক মানিক মুনশির বিরুদ্ধে নিজ বিভাগের এক শিক্ষার্থীর মানসিক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলা ও শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের অভিযোগ ওঠে। নিজ স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে বলে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে জানান ও বিয়ে করার আশ্বাস দেন তিনি। পরবর্তীতে ওই শিক্ষার্থীকে বিয়ে করতেও আপত্তি জানান বলে অভিযোগ ওঠে। পরে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিভাগীয় চেয়ারম্যান বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেয়। সে সময় তাকে বিভাগীয় সব কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
এ ছাড়াও ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের প্রভাষক আবু শাহরিয়ার ইমনকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে আগেই। তার বিরুদ্ধে আসা তদন্ত প্রতিবেদনে প্রমাণও মিলেছে। তবে তাকে কেন স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে না তা জানতে চেয়ে এবার নোটিশ দেওয়া হয়েছে তাকে। উপাচার্যের গঠিত তদন্ত বোর্ডের রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আবু শাহেদ ইমনের বিরুদ্ধে নিজ বিভাগের শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ দেয় একই বিভাগের শিক্ষার্থী কাজী ফারজানা মিম। এ সভায় মিমের পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।
এ ছাড়াও ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষক আবু সালেহ সেকেন্দারের বিরুদ্ধে শিক্ষকদের নিয়ে অশোভন মন্তব্য, কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য ও অ্যাকাডেমিক কাজে অসহযোগিতার অভিযোগে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন বিস্তারিত পর্যালোচনা করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসব রিপোর্টে তার অভিযোগ নিয়ে কোনো সংযুক্তি না থাকায় পুনরায় রিপোর্টকে খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেসটি নিয়ে পুনরায় পর্যালোচনা করার নির্দেশ দিয়েছে সিন্ডিকেট।
এদিন সিন্ডিকেটে শিক্ষকদের পদন্নোতি, নিয়োগসহ নানা বিষয়াবলি উত্থাপিত হয়। এর মধ্যে ত্রুটিপূর্ণ বিষয়াবলি প্রত্যাহার হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরোনো জমে থাকা সকল কাজ দ্রুত সমাধান করতে দ্রুত সময়ে সিন্ডিকেট সভা করছে প্রশাসন। গত চার মাসে তিনটি সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও সিন্ডিকেট সভাপতি অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, সাবেক উপাচার্যের দীর্ঘদিন অসুস্থতা ও তার মৃত্যুর পর অনেকদিন পদ শূন্য থাকায় অনেক জটিলতা বেড়েছিল। পুরোনো সমস্যাগুলোর তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। জটিলতা দূর করতে পুরোনো তদন্ত কমিটিগুলোতে গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন