আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারে দুর্নীতিবাজদের অর্থ-সম্পদ বাজেয়াপ্তের অঙ্গীকার করেছে আওয়ামী লীগ। বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক হোটেল সোনারগাঁওয়ে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা এ ইশতেহার ঘোষণা করেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের রূপান্তর ঘটেছে। আজকের বাংলাদেশ দারিদ্র্যক্লিষ্ট, অর্থনৈতিকভাবে ভঙ্গুর বাংলাদেশ নয়। আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে পারি, আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ।
ইশতেহারে আওয়ামী লীগের অঙ্গীকার
১. আর্থিক লেনদেনসংক্রান্ত অপরাধ এবং অন্যায় ও অবৈধ সুযোগ গ্রহণ কঠোরভাবে দমন করা হবে।
২. রাষ্ট্র ও সমাজের সকল স্তরে ঘুষ-দুর্নীতি উচ্ছেদ, অনোপার্জিত আয় রোধ, ঋণ-কর-বিলখেলাপি ও দুর্নীতিবাজদের বিচারব্যবস্থার মাধ্যমে শাস্তি প্রদান এবং তাদের অবৈধ অর্থ ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে।
৩. খেলাপি ঋণ বারবার পুনঃতফসিল করে ঋণ নেওয়ার সুযোগ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। রুগ্ন শিল্প-বাণিজ্য অবসায়নের জন্য দেউলিয়া ও অন্যান্য আইন সংশোধন ও কার্যকর প্রয়োগের উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে। ব্যবস্থাপনা এবং ঋণ প্রস্তাব মূল্যায়ন যাতে বস্তুনিষ্ঠ হয়, সেজন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে প্রভাবমুক্ত রাখা হবে।
৪. আমদানি-রপ্তানিতে আন্ডার ও ওভার ইনভয়েজ, শুল্ক ফাঁকি, বিদেশে অর্থ পাচার, হুন্ডির মাধ্যমে লেনদেন, মজুতদারি ও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি এবং অতি মুনাফা প্রতিরোধের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত থাকবে।
৫. আওয়ামী লীগ সরকার মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী অর্থায়ন প্রতিরোধে যেসব আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো তৈরি করেছে, তা প্রয়োগ করে পুঁজিপাচার অপরাধীদের বিচারের অধীনে আনা হবে এবং সংশ্লিষ্ট দেশের সহযোগিতায় পাচারকৃত অর্থ-সম্পদ ফেরত আনার উদ্যোগ নেওয়া হবে। উন্নয়ন ও অগ্রগতি
১. মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী অর্থায়ন প্রতিরোধের জন্য মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ (সংশোধিত ২০১৫) ও সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০১৩ পাস করা হয়েছে।
২. অর্থপাচার ও সন্ত্রাসী অর্থায়ন বিষয়ে কার্য পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়েল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) স্থাপন করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে জাতীয় সমন্বয় কমিটি প্রতিষ্ঠা করা এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সচিবের নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থার সদস্যদের নিয়ে কর্মসম্পাদন কমিটি গঠিত হয়েছে।
৩. ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ অব মানিলন্ডারিং (এপিজি) এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে যোগদান করে। এপিজি মিউচ্যুয়াল ইভ্যালুয়েশন সম্পন্ন হবার পর বাংলাদেশ কমপ্লায়েন্ট কান্ট্রি হিসেবে স্বীকৃত হয় এবং ঝুঁকিপূর্ণ তালিকা থেকে বের হয়ে আসে।
৪. ২০১৩ সালে বাংলাদেশ বিশ্বের ইন্টিলিজেন্স ইউনিটসমূহের আন্তর্জাতিক সংগঠন এডমন্ট গ্রুপে এ যোগদান করে। এই গ্রুপের ১৭০টি সদস্যদেশের সাথে অর্থপাচার ও সন্ত্রাসী অর্থায়ন বিষয়ে তথ্য বিনিময়ের ব্যবস্থা চলমান রয়েছে।
৫. ব্যাংক অব ইন্টারন্যাশনাল সেটেলম্যান্ট প্রণীত ২০২৩ সালের অর্থ পাচার সূচক ব্যাসেল এএমএল ইনডেক্স -এ বাংলাদেশের অবস্থান উন্নত হয়।
৬. ওভার ইনভয়েস ও আন্ডার ইনভয়েস রোধের লক্ষ্যে ঋণপত্র অনুমোদন সংক্রান্ত তথ্য পর্যবেক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহারের স্লোগান ছিল ‘দিন বদলের সনদ’। এরপর ২০১৪ সালে ছিল ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’। ২০১৮ সালে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দলটির ইশতেহারে স্লোগান ছিল, ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’। আর ২০২৪ সালে দলটির নির্বাচনী স্লোগান হচ্ছে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ : উন্নয়ন দৃশ্যমান, বাড়বে এবার কর্মসংস্থান’।
মন্তব্য করুন