

ভারতের বরেণ্য সংগীতশিল্পী জুবিন গার্গের মৃত্যুকে ঘিরে ধোঁয়াশা আরও ঘনীভূত হচ্ছে। গত ১৯ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরে এই গায়কের মৃত্যুর ঘটনায় ইতিমধ্যেই পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার নির্দেশে গঠিত বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) এই মামলার তদন্ত করছে।
তদন্তকারীরা যখন আগামী ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে চার্জশিট জমা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, ঠিক তার আগেই জুবিনের মৃত্যু নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা।
ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত শর্মা ভারতীয় গণমাধ্যমে সাফ জানিয়ে দেন, “১৯ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরে জুবিনের রহস্যমৃত্যুকে ‘দুর্ঘটনা’ বলে উল্লেখ করব না। ডিসেম্বর মাসের ১৭ তারিখ জুবিন গার্গের ‘খুন’-এর চার্জশিট জমা দিতে হবে। যদিও আমি ৮ ডিসেম্বরের মধ্যে জমা দিতে বলেছি। আমরা সবদিক থেকে প্রস্তুত।”
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “বিদেশে কোনো ঘটনা ঘটলে চার্জশিট দাখিলের আগে আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন প্রয়োজন হয়। গতকাল আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকেও বিষয়টি জানিয়েছি, যাতে উনি দ্রুত অনুমোদন দিতে পারেন। অনুমোদন পেলে, আমরা ৮, ৯ কিংবা ১০ ডিসেম্বর চার্জশিট দাখিল করব।”
গত ১৯ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরের সেন্ট জন’স দ্বীপ থেকে অচেতন অবস্থায় গায়ক জুবিনকে উদ্ধার করে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
এরপর সিঙ্গাপুর পুলিশ প্রাথমিক তদন্ত ও ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন ভারতের হাইকমিশনকে সরবরাহ করে, যাতে মৃত্যুর কারণ হিসেবে স্পষ্ট লেখা ছিল— “ডুবে যাওয়া” (সাঁতার কাটতে গিয়ে)।
কিন্তু এই প্রতিবেদন প্রকাশ্যে আসার পরই উত্তপ্ত হয়ে পড়ে আসামবাসী। বিষয়টি নজরে আসে সিঙ্গাপুর পুলিশেরও। গত ১৭ অক্টোবর সিঙ্গাপুর পুলিশ অফিসিয়ালি একটি বিবৃতি প্রকাশ করে জানায়, “মিস্টার জুবিন গার্গের মৃত্যু নিয়ে অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া জল্পনা-কল্পনা ও ভুয়া তথ্য সম্পর্কে সিঙ্গাপুর পুলিশ ফোর্স অবগত। বর্তমানে এই মামলা সিঙ্গাপুরের ‘করোনার্স অ্যাক্ট ২০১০’-এর অধীনে তদন্তাধীন। প্রাথমিক তদন্তে, পুলিশ অপরাধমূলক কোনো কিছুই পায়নি।”
সিঙ্গাপুর পুলিশ জানিয়েছে, তাদের তদন্ত শেষ হতে আরও প্রায় তিন মাস সময় লাগতে পারে। তবে সিঙ্গাপুর পুলিশের বিবৃতির সঙ্গে একমত নয় আসাম প্রশাসন। জুবিনের মৃত্যুতে আসাম পুলিশ একটি খুনের মামলা দায়ের করেছে। এই মামলায় গত ২৫ সেপ্টেম্বর জুবিনের টিমের ড্রামার শেখর জ্যোতি গোস্বামীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর পয়লা অক্টোবর গ্রেপ্তার হন জুবিনের ম্যানেজার সিদ্ধার্থ শর্মা ও নর্থ-ইস্ট ফেস্টিভ্যালের আয়োজক শ্যামকানু মহন্ত। ৩ অক্টোবর গ্রেপ্তার করা হয় জুবিনের টিমের গায়িকা অমৃতপ্রভ মহন্তকে। এ ছাড়াও জুবিনের এক কাজিনকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন