

সমকালীন ওয়েব সিরিজ ভুবনে যখন বড় ক্যানভাস, জাঁকজমক আর গতির দাপট, তখন ‘দ্য গ্রেট শামসুদ্দিন ফ্যামিলি’ এসে হাজির হয়েছে ঘরের শান্ত এক বিকেলের মতোনির্ভার, অন্তরঙ্গ ও গভীরভাবে চেনা এক অনুভূতি নিয়ে। আবেগী অথচ শক্তিশালী গল্পের কেন্দ্রে আছেন ভারতের জনপ্রিয় কৃতিকা কামরা। ‘বানি’ চরিত্রে—যার নীরবতাও অনেক সময় শব্দের মতোই জোরালো।
সম্প্রতি ভারতীয় গণমাধ্যমের এক সাক্ষাৎকারে কৃতিকা কামরা কথা বলেছেন দর্শকের অভাবনীয় সাড়া, বানি চরিত্রের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত সংযোগ, একটি পরিবারের মতো উষ্ণ পরিবেশে শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা এবং কেন নারীদের লেখা গল্পে আবেগের সত্যতা আলাদা হয় এসব নিয়ে।
চরিত্রটি নিয়ে দর্শকের ভালোবাসার কথা বলতে গিয়ে কৃতিকা বলেন, ‘আমার ইনবক্স ভরে গেছে দর্শকদের ভালোবাসার বার্তায়। নারী দর্শকরা লিখছেন, ‘বনির মধ্যে আমি নিজেকে দেখেছি।’ অনেকে খুব লম্বা মেসেজে নির্দিষ্ট দৃশ্য আর মুহূর্তের কথা তুলে ধরে বলছেন, ‘আমার অনুভূতিও ঠিক এমনই।’ স্ক্রিপ্ট পড়ার সময় আমিও ঠিক সেটাই অনুভব করেছিলাম।‘
অভিনেত্রী আরও বলেন, গল্পের বনির সঙ্গে তার সংযোগ ছিল একেবারেই তাৎক্ষণিক। বনির হতাশা, নিজের জায়গা খোঁজার প্রশ্ন, আর সেই নিরন্তর দায়িত্ববোধ—এসবের সঙ্গে আমি গভীরভাবে যুক্ত ছিলাম। সে ভাবে, তাকে সবার খেয়াল রাখতে হবে, কিন্তু কখনো কখনো সে নিজেও চায় কেউ তার খেয়াল রাখুক। আমি পরিবারের বড় মেয়ে, বড় বোন , যার ওপর সবাই সিদ্ধান্তের জন্য ভরসা করে। তাই যখনই বানি এসব অনুভূতি প্রকাশ করত, তা আমার কাছে খুব বাস্তব মনে হতো।‘
নারীকেন্দ্রিক একটি সেটে কাজ করার অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে কৃতিকা বলেন, অভিজ্ঞতাটা দারুণ ছিল। সিরিজটির নির্মাতা আনুশা রিজভী এমন মানুষদের একসঙ্গে এনেছিলেন, তারা শুধু ভালো অভিনেতা নন, ভালো মানুষও। আমরা দিল্লির একটি বাড়িতে শুট করছিলাম, তাই সত্যিই মনে হতো যেন পরিবারের সঙ্গে ছুটিতে এসেছি।‘
ক্যামেরার বাইরের সময়গুলোও একসঙ্গে কাটাতেন সবাই। এ বিষয়ে কৃতিকা বলেন, ‘আমরা একসঙ্গে খেতাম, বসে গল্প করতাম, হাসতাম, গান গাইতাম। কেউই ভ্যানিটিতে ফিরে যেত না। ফরিদা জি আমাদের গল্প শোনাতেন। তখন দাদাবাড়ির গ্রীষ্মের ছুটির কথা মনে পড়ে যেত—যখন সব কাজিন আর মাসিরা একসঙ্গে বসতাম। ঠিক সেই অনুভূতি।’
ফরিদা জালাল ও শিবা চাড্ডার মতো বর্ষীয়ান অভিনেত্রীদের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে কী শিখেছেন,এ প্রসঙ্গে কৃতিকা বলেন,’তাদের সঙ্গে আমার অভিজ্ঞতা অসাধারণ, অভিনয়ও তেমনই, কিন্তু তারা ভীষণ সহজ-সরল আর প্রাণবন্ত। অবশ্যই তারা সিনিয়র, আমরাও তাদের সম্মান করেছি, কিন্তু পরিবেশ কখনোই গম্ভীর বা কৃত্রিম ছিল না। ফরিদা জি পর্দায় যেমন, বাস্তবেও ঠিক তেমন, খুবই প্রাণচঞ্চল আর মিষ্টি।‘ তাদের কর্মনিষ্ঠাই কৃতিকাকে সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করেছে।
তার কথায়, ‘মহান মানুষদের বৈশিষ্ট্য হলো, তারা উপদেশ দেন না, নিজের কাজ দিয়েই শেখান। ফরিদা জি এই বয়সেও কতটা নমনীয় আর ধৈর্যশীল অগোছালো শিডিউল, দীর্ঘ সময়ের কাজেও। যদিও তার এসব করার প্রয়োজন নেই, কিন্তু তিনি একজন সুপারস্টার হয়ে তবুও করেন, কারণ অভিনয়ের প্রতি তার ভালোবাসা। শিবা চাড্ডার মধ্যেও অসাধারণ আন্তরিকতা আছে, তাই তার অভিনয় এত সত্য লাগে। শুধু তাদের কাজ দেখেই শেখা যায়, কোনো কথার উপদেশ ছাড়াই।‘
ভারতীয় সিনেমায় নারীর প্রতিনিধিত্ব নিয়ে প্রশ্নে কৃতিকা বলেন, ‘এটা নারীর গল্প, একজন নারীর দৃষ্টিকোণ থেকে বলা, এইটাই শুধু পার্থক্য। আমাদের লেখক-পরিচালক একজন মুসলিম নারী, আর গল্প ও সম্পর্কগুলো তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে অনুপ্রাণিত। তাই চরিত্রগুলো এত পূর্ণাঙ্গ মনে হয়।‘
তবে এ ধরনের চিত্রনাট্য এখনো বিরল বলেই মনে করেন অভিনেত্রী।
এ বিষয়ে কৃতিকা বলেন, ‘আমি জানি না পরিস্থিতি আদৌ ভালো হচ্ছে কি না, কারণ এমন স্ক্রিপ্ট খুব কমই হাতে আসে। এটা ছিল বিরল এক কাজ, যেখানে নারীরা কেবল ক্যারিকেচার বা একমাত্রিক নয়—তারা স্তরবহুল, এলোমেলো, অসম্পূর্ণ। তাদের দেবীর আসনে বসানো হয়নি। নারীরা যখন নারীদের লেখে, তখনই এমনটা হয়।‘
পুরুষরাও ভালো নারীচরিত্র লিখতে পারেন, এ কথা মেনে নিয়েও কৃতিকা বলেন, ‘তবুও একজন নারীর লেখা নারীচরিত্রের সঙ্গে তুলনা করা যায় না। বরং নারীদের লেখা গল্পে পুরুষ চরিত্রগুলোকেও খুব আকর্ষণীয় লাগে। ওয়েব সিরিজের দীর্ঘ যাত্রা নিয়েও কথা বলেছেন কৃতিকা।
তার ভাষায়, “আনুশা আট বছর ধরে এই ছবি বানানোর চেষ্টা করেছেন। গল্পটা ছিল, কিন্তু এমন ছবির জন্য অর্থায়ন পাওয়া সহজ নয়—এগুলোকে ‘নিরাপদ’ ধরা হয় না। শেষমেশ সব কিছু মিলে গেল। আমরা একটানা ২২-২৩ দিনে শুট শেষ করেছি। আমার জীবনের সবচেয়ে দ্রুত মুক্তি পাওয়া ছবি সম্ভবত এটাই। সাধারণত বছর লেগে যায়। শুট থেকে মুক্তি পর্যন্ত পথটা ছোট ছিল, কিন্তু তার আগে তিনি বহু বছর অপেক্ষা করেছেন।‘
চলতি বছরের ১২ ডিসেম্বর মুক্তি পাওয়া এই ওয়েব সিরিজটি পরিচালনা করেছেন আনুশা রিজভী। কৃতিকার পাশাপাশি এ সিরিজটিতে অভিনয় করেছেন শিবা চাড্ডা, ফরিদা জালাল, জয়ী দত্ত, জুহি বাব্বরসহ আরও অনেকে।
মন্তব্য করুন