দেশের নারীদের জন্য ডিজে প্রফেশনে খাপ খাইয়ে নেওয়া কঠিন। যাদের শিখিয়ে-পড়িয়ে তৈরি করে নেওয়া হয়, সেসব মেয়েরাও বিয়ের পর এই অঙ্গনকে বিদায় জানায়। হালের নারী ডিজেদের বিষয়ে কালবেলাকে এসব কথা বলেছেন দেশের অন্যতম ডিজে মারজিয়া কবির সনিকা। দেশের অ্যাওয়ার্ড সেক্টরগুলোতে ডিজে ক্যাটাগরি প্রণয়নের কাণ্ডারি তিনিই।
কথা ছিল নারী ডিজের সংগঠন গড়ার। অর্ধ যুগ পেরিয়ে গেলেও সেটি বাস্তবায়ন হয়নি। কারণ হিসেবে সনিকা বললেন, ‘আমাদের নারী ডিজের সংখ্যা এখনো সেই পর্যন্ত এগোয়নি। তা ছাড়া দেশের যেই মূল ডিজে এসোসিয়েশন, সেটি নারী-পুরুষ মিলিয়ে। আমরা বছরের পর বছর ধরে চেষ্টা করে যাচ্ছি। এখনো এসোসিয়েশনের প্রথম স্টেজেই আছি। সেটা এখনো স্টাব্লিস হয়নি। তাই আমরা নারী ডিজে সংগঠনটি এখনো পজ রেখেছি।’
ডিজে প্রফেশনের দিকে ঝোঁক রয়েছে তরুণদের। শিখে-পড়ে নিতে হয় এই যন্ত্রকলা। তবুও সেটি দেশের কালচারাল গ্যাজেটে অন্তর্ভুক্ত নয়, এমনটা জানিয়ে সনিকা বলেন, ‘ডিজেকে এখনো কালচারাল গ্যাজেটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তাই এসোসিয়েশনটা দাঁড় করতে পারছি না। তবে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের সিনিয়ররা এটা নিয়ে এগোচ্ছেন।’
মিউজিক কারিকুলামে ডিজেয়িং না থাকার বিষয়ে এই আর্টিস্ট জানান, ‘ডিজে স্কুলে শুধু ডিজেরাই ডিজেংয়িং শেখাচ্ছেন। নাচ, গান, ছবি আঁকা—এগুলোর সঙ্গে ডিজে নেই। ডিজে পুরোটাই একটা আলাদা কারিকুলাম। আমাদের বাংলাদেশে রাহাত (ডিজে রাহাত) ভাইয়ের একটা স্কুল আছে ‘গ্যারেজ’ নামে। সেখানে ডিজে শেখানো হয়। কিছু মানুষ কোচিং সেন্টারের মতো করেও এটা শেখাচ্ছে। ওসব জায়গায় উচ্চপর্যায়ের শিক্ষা নেই। তবে প্রাথমিক পর্যায় পর্যন্ত আছে।’
দেশের সেক্টরে সনিকা শীর্ষস্থানীয় একজন ডিজে। তাই এই অঙ্গনে তার দায়িত্বও বেশি। বললেন, ‘আমার দায়িত্ব আমি পালন করে যাচ্ছি। বাংলাদেশে অ্যাওয়ার্ড সেক্টরে ডিজে ক্যাটাগরি ছিল না। আমি বাংলাদেশের অ্যাওয়ার্ড সেক্টরগুলোতে ডিজে ক্যাটাগরি এনেছি। এটা অনেক বড় অ্যাচিভমেন্ট।’
এ প্রফেশনে মেয়েদের ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে সেটি অর্থের কমতির জন্য নয়। সনিকা বলেন, ‘আমরা একটি মেয়েকে রেডি করে মার্কেটে নিয়ে আসছি, এরপর তার পারসোনাল কারণে এই প্রফেশন থেকে সরে যাচ্ছেন। কেউ বিয়ের পর সরে যাচ্ছেন, কেউ আবার বাচ্চা হওয়ার পর। আমাদের দেশের মেয়েদের জীবনযাত্রা অনুযায়ী এই প্রফেশনে খাপ খাওয়ানো কঠিন। সবচেয়ে কষ্টের একটি প্রফেশন এটা। দেশের সামাজিক জীবনযাত্রা অনুযায়ী এটা মেইনটেইন করতে পারছে না মেয়েরা। এ জন্য এখনো মেয়ে ডিজের সংখ্যা কম।’
সনিকা ফুরিয়ে যাওয়ার আগে নিজের উত্তরসূরি তৈরি করে যাচ্ছেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি এখনো ফুরিয়ে যাওয়ার ধারেকাছে নেই। আমার মনে হয় আমি এখন মাত্র শুরু করেছি। বাংলাদেশ আমাকে আরও ২০ বছর দেখবে। ২০ বছর পর এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যাবে।’
মন্তব্য করুন