চট্টগ্রামে শনাক্ত হয়েছে বিরল ডেন-১ সেরো টাইপ, যাতে চট্টগ্রামের ১১ শতাংশ মানুষ আক্রান্ত। অন্যদিকে চট্টগ্রামে ডেঙ্গু রোগীদের ৭৫ শতাংশই ডেন-২ সেরো টাইপে আক্রান্ত।
এসপেরিয়া হেলথ রিসার্চ এবং ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে সম্প্রতি চট্টগ্রামের ছয় প্রতিষ্ঠানের গবেষকদের যৌথ গবেষণায় উঠে আসে এসব তথ্য।
ডেঙ্গু নিয়ে করা গবেষণায় উঠে আসে, চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে ৬৫ শতাংশই পুরুষ। ডেঙ্গু রোগীদের প্রতি পাঁচজনে একজন শিশু। এ জেলার বেশ কয়েকটি এলাকাকে হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত হয়।
গবেষণায় উঠে আসে, চট্টগ্রামের ৯৯ শতাংশ রোগী জ্বরে আক্রান্ত। শিশুদের ক্ষেত্রে ১০০ শতাংশ রোগীর মাঝে জ্বরের লক্ষণ দেখা যায়। এ ছাড়া, স্বল্পশিক্ষিত মানুষের মাঝে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি দেখা গেছে। পঞ্চম শ্রেণির বেশি পড়াশোনা করেননি এমন ডেঙ্গু রোগী ছিল চট্টগ্রামে ৪৫ শতাংশ।
গবেষণা বলছে, চট্টগ্রামের ৬০ শতাংশ ডেঙ্গু রোগীর আবাসস্থল পাঁচটি এলাকার মধ্যে রয়েছে- বাকলিয়া, চকবাজার, কোতোয়ালি, ডবলমুরিং ও বায়েজিদ বোস্তামী থানা। এ ছাড়াও গ্রামাঞ্চলের মধ্যে সীতাকুণ্ড, হাটহাজারী, পটিয়া এবং কর্ণফুলী এলাকা থেকে সবচেয়ে বেশি রোগী পাওয়া গেছে। যাদের সেরো টাইপ-১ পাওয়া গেছে তাদের ৭০ শতাংশ শিশু। চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুর মধ্যে শহর এলাকায় বেশি। শিশুদের মধ্যে ৭০ শতাংশ এসেছে শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। শহর ও গ্রাম উভয় জায়গাতেই প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ডেঙ্গু সেরো টাইপ-২ বেশি দেখা গেছে, যা প্রায় ৭৫ শতাংশ।
চট্টগ্রামের ২০ ভাগ মানুষ জানেন না ডেঙ্গু আক্রান্তের মূল কারণ মশা। জমাট বাঁধা পানি থাকলে ডেঙ্গু মশার বিস্তার বাড়ে- এ তথ্যও জানেন না ১৫ শতাংশ মানুষ। এ ছাড়াও ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়া ৪০ শতাংশ রোগী মশারি ব্যবহার করত না। চট্টগ্রামে পাঁচ শতাংশ মানুষের আগেও ডেঙ্গু হওয়ার ইতিহাস ছিল। ১১ শতাংশ লোকের মধ্যে ডেন-১ এবং ১৪ শতাংশ লোকের মধ্যে ডেন-৩ পাওয়া যাচ্ছে।
প্রকল্পটির পরিচালক ছিলেন এসপেরিয়া পরিচালক এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক ডা. আবদুর রব। প্রধান গবেষক ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. এমএ সাত্তার, প্রকল্পের সহপরিচালক ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ডা. আবুল ফয়সাল মো. নুরুদ্দীন চৌধুরী এবং চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ডা. এইচএম হামিদুল্লাহ মেহেদী, সহপ্রধান গবেষক ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এবং বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. আদনান মান্নান।
এ ছাড়াও সহগবেষক ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের পেডিয়াট্রিকস নেফ্রোলজি বিভাগের ডা. মারুফুল কাদের, মেডিসিন বিভাগের ডা. নূর মোহাম্মদ ও ডা. আব্দুল হামিদ সাগর, বিআইটিআইডির ল্যাব ইনচার্জ ডা. জাকির হোসেন, ফটিকছড়ি হেলথ কমপ্লেক্সের ডা. ইমরুল কায়সার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এবং বায়োটেকনোলজি বিভাগের শিক্ষক মহব্বত হোসেন ও আফরোজা আক্তার তন্বী, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ডা. তারেকুল মজিদ। এ ছাড়াও গবেষণাগারে কাজটি পরিচালনা করেন ইশতিয়াক উদ্দিন আহমেদ ও কল্যাণ চাকমা, তানজিনা আক্তার, ইসমাইল আল রশিদ। সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন অধ্যাপক এসএম রফিকুল ইসলাম ও ডা. এএম জুনায়েদ সিদ্দিকী।
গবেষণার সমন্বয় ও তত্ত্বাবধানে ছিল স্বাস্থ্যবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান এসপেরিয়া হেলথ রিসার্চ ও ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন। গবেষণার সময়কাল ছিল চলতি বছরের জুলাই থেকে নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত চট্টগ্রামের ছয়টি সেবা প্রদানকারী কেন্দ্রে। গবেষকগণ মনে করেন, হটস্পট চিহ্নিত জায়গায় পানি জমাট হয়ে থাকা এবং জলাবদ্ধতা নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
গবেষণা সূত্রে জানা যায়, গত চার মাস ধরে চট্টগ্রামের এক হাজার ৫৫০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর ওপর গবেষণা করা হয়। গবেষণায় রোগীদের রোগতত্ত্ব, জনস্বাস্থ্যগত প্রভাব, ভাইরাসের ধরন, জিনোমের প্রকরণ উঠে আসে। গবেষণা দলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মেডিসিন ও পেডিয়াট্রিকস বিভাগ, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল, ফৌজদারহাটস্থ বিআইটিআইডি, আইসিডিডিআর’বি এবং নেক্সট জেনারেশন সিকোয়েন্সিং, রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন ল্যাব চিটাগাং অংশ নেয়।
মন্তব্য করুন