কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৯ মার্চ ২০২৪, ১০:০৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

অন্ধত্বের ঝুঁকিতে ৯০ শতাংশ গ্লুকোমা রোগী

বিশ্ব গ্লুকোমা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা। ছবি : সংগৃহীত
বিশ্ব গ্লুকোমা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা। ছবি : সংগৃহীত

একটি গবেষণা জরিপর দেখা গেছে, দেশে সর্বমোট ২০ লাখের মতো গ্লুকোমা আক্রান্ত রোগী আছে। তবে আক্রান্ত এসব রোগীদের মধ্যে চিকিৎসাসেবার আওতায় রয়েছে মাত্র ২ লাখ মানুষ। বাকি ১৮ লাখ রোগীই চিকিৎসার বাইরে। শতকরা বিবেচনায় দেশে গ্লুকোমা আক্রান্তদের মধ্যে চিকিৎসা না নেওয়ায় প্রায় ৯০ শতাংশ রোগীই অন্ধত্বের ঝুঁকিতে আছে।

শনিবার (৯ মার্চ) রাজধানীর গ্রিন গার্ডেন হোটেলে আয়োজিত আসন্ন বিশ্ব গ্লুকোমা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব তথ্য জানান।

এ সময় হারুন আই ফাউন্ডেশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও গ্লকোমা সোসাইটির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. শেখ এম এ মান্নাফ বলেন, গত ২০২১-২২ সাল পর্যন্ত ৬৫টি উপজেলায় ১৭ হাজার মানুষের মধ্যে আমরা একটি সার্ভে করেছি। এতে ৩ দশমিক ২ শতাংশ মানুষের মধ্যে গ্লুকোমা রোগ পাওয়া যায়, যা মোট জনসংখ্যা বিবেচনায় প্রায় ২০ লাখের মতো।

তিনি বলেন, আশঙ্কাজনক বিষয় হলো ২০ লাখ মানুষ গ্লুকোমায় আক্রান্ত হলেও রোগীদের মধ্যে সর্বোচ্চ ২ লাখ মানুষ চিকিৎসা নিচ্ছেন। অর্থাৎ চিকিৎসার বাইরে এখনও ১৮ লাখ গ্লুকোমা রোগী। জরিপে আমরা দেখেছি শহরাঞ্চলে গ্লুকোমা রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক একটু বেশি। ছেলেমেয়েদের মধ্যে দুই লিঙ্গেরই গ্লুকোমা হতে পারে। তবে প্রকারভেদে আক্রান্তের হার ভিন্ন রকম পাওয়া গেছে।

ডা. এম এ মান্নাফ বলেন, গ্লুকোমার দুটি বিস্তৃত প্রকার আছে। একটি হলো ওপেন-অ্যাঙ্গেল গ্লুকোমা, যার অগ্রগতি বেশ ধীর। অন্যটি হলো তীব্র অ্যাঙ্গেল-ক্লোজার গ্লুকোমা, যা দ্রুত অগ্রসর হয়। এরমধ্যে ওপেন-অ্যাঙ্গেল গ্লুকোমা ছেলেদের ৪ শতাংশ আর মেয়েদের ২ দশমিক ৫ শতাংশ। আর অ্যাঙ্গেল-ক্লোজার গ্লুকোমা মেয়েদের ৬ শতাংশ, ছেলেদের ১ দশমিক ৫ শতাংশ। আর বাইরেও আরও ১০ শতাংশ মানুষ পেয়েছি, যাদের গ্লুকোমা হতে পারে এমন প্রবণতা আছে।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ গ্লুকোমা সোসাইটির মহাসচিব অধ্যাপক ডা. সিদ্দিকুর রহমান। তিনি বলেন, গ্লুকোমা হলো এমন একটি রোগ, যার ফলে মানুষ নীরবেই অন্ধত্বের দিকে এগুতে থাকে। মানুষ বুঝতেই পারে না। সাধারণত চোখে ছানি পড়লে তা অপারেশনের মাধ্যমে ভালো হয়। কিন্তু কারও গ্লুকোমা হয়ে গেলে তা আর পুরোপুরি ভালো হয় না।

তিনি বলেন, বিশ্বে ৭ দশমিক ৭ মিলিয়ন মানুষ গ্লোকোমায় আক্রান্ত। চোখে প্রেসারে প্রথমে নার্ভ নষ্ট হয়। পরেশার যদি যাওয়ার পথে বাধাগ্রস্ত হয়, তখনই নার্ভগুলো ভিন্ন কোনো পথ খুঁজে। একটা সময়ে মানুষ অন্ধ হয়ে যায়।

এই চিকিৎসক বলেন, গ্লুকোমা হলে সাধারণত মানুষ শুরুর দিকে বুঝতে পারে না। ফলে চিকিৎসাও নিতে আসে না। আর যখন অন্ধত্বের কাছাকাছি চলে যায়, তখন চিকিৎসা নিতেও ভয় পায়। মানুষ চিকিৎসা না নেওয়ার আরেকটি কারণ হলো, গ্লুকোমা হলে কোনো ধরনের ব্যথা নেই। তাই আর্লি স্টেজে রোগটি ধরাও পড়ে না।

ডা. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, সাধারণত চল্লিশোর্ধ মানুষের গ্লুকোমা বেশি হয়। রোগটি হলে একেবারে ভালো হয় না, তবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। এজন্য আমাদের নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করতে হবে। রোগী এবং ডাক্তারের উভয়ের মধ্যে ধারণা থাকতে হবে।

চিকিৎসা প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, গ্লুকোমা রোগী আসলে চিকিৎসকরা মূলত চোখের প্রেসার কমান। এক্ষেত্রে কিছু আইড্রপ ব্যবহার করা হয়। প্রয়োজনে লেজার করানো হয়। সর্বশেষ অপারেশন করা হয়। প্রেসার কমানো গেলে চোখের নার্ভগুলো ভালো রাখা যায়।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ চক্ষু চিকিৎসক সমিতির (ওএসবি) সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেন। তিনি বলেন, আমরা যদি কাউকে অন্ধত্ব নিরসন করতে চাই, বৈষম্যটা খুঁজে বের করতে হবে। কারণ অনেকেই সমস্যা নিয়েও আমাদের কাছে আসতে পারছে না। কাজ করতে হবে। জনগণকে সচেতন করতে পারলে ধীরে ধীরে ঝুঁকি কমে আসবে।

তিনি আরও বলেন, গার্মেন্টস ওয়ার্কারদের আমরা কাজ করছি। আমাদের চিকিৎসকরা তাদের পরীক্ষা নিরীক্ষা করে চিকিৎসাসেবা দেন। আমাদের সুবিধা অনেক। তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত আমাদের স্বাস্থ্যসেবা বিদ্যমান রয়েছে। সেখানে গ্লোকুমা চিকিৎসাটাকেও আমাদের নিয়ে আসতে হবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ বলেন, যতটুকু জেনেছি গ্লুকোমা রোগটি মানুষকে অন্ধ করে দেয়। আমি নিজেও খুব বেশি জানতাম না। সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে এই রোগটি নিয়ে সাধারণ মানুষ বিশাল একটা অজ্ঞতার মধ্য রয়ে গেছে। ছোটবেলা থেকে আমাদের নিকটাত্মীয় একজনকে দেখেছি অন্ধ। কিন্তু খুবই অ্যাকটিভ। প্রথমে সে বলতো কম দেখি, এরপর একটু একটু দেখি, একপর্যায়ে সে বলত আর দেখি না। আমার এখন কেন যেন মনে হচ্ছে হয়তো ওনার গ্লুকোমা ছিল। সে সময় হয়তো কোনো চিকিৎসক ছিল না।

তিনি বলেন, নির্বাচনকালীন সময়ে আমার অঙ্গীকার ছিল সেবার জন্য আমার কাছে আসতে হবে না, আমি আপনাদের কাছে চলে আসব। বাংলাদেশ গ্লুকোমা সোসাইটির কার্যক্রম দেখে মনে হলো, আপনারাও সেবার জন্য রোগীদের দোরগোড়ায় পর্যন্ত চলে যাচ্ছেন। এটি খুবই দৃষ্টান্তমূলক একটি উদ্যোগ।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রাজধানীবাসী এমন ভূমিকম্প আগে কখনো দেখেনি

হতাশ হয়ে থিয়েটার ছাড়ছেন নিবেদিতা

ভূমিকম্প দিয়ে আল্লাহ ধ্বংস করেছিলেন যে জাতিকে

ভূমিকম্পে ৩ মিনিট বন্ধ বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড টেস্ট

ভূমিকম্পের আতঙ্কে ঢাবির চারতলা থেকে শিক্ষার্থীর লাফ

ভূমিকম্পে গাজীপুরে স্কুল-মসজিদসহ বেশ কয়েকটি বাড়িতে ফাটল

ভূমিকম্পে বাড্ডায় হেলে পড়ল ভবন

ভূমিকম্পে দেয়াল ধসে নবজাতকের মৃত্যু

‘ভূমিকম্পে যে ঝাঁকুনি হলো, তা এযাবৎকালের সর্বোচ্চ’

ভূমিকম্পে কাঁপল পাকিস্তান

১০

যৌন হয়রানির ঘটনায় নিরাপত্তা প্রার্থনা / ক্রীড়া উপদেষ্টাকে এক শুটারের খোলা চিঠি

১১

ভূমিকম্পে পুরান ঢাকায় রেলিং ধসে নিহত ৩ 

১২

হঠাৎ ভূমিকম্প হলে নিজেকে রক্ষা করবেন যেভাবে

১৩

রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প অনুভূত, যা বললেন আজহারি

১৪

ভূমিকম্প নিয়ে কোরআন-হাদিসে কী বলা হয়েছে

১৫

পৃথিবীর সবচেয়ে বিধ্বংসী ১০ ভূমিকম্প

১৬

ওটিটিতে ‘দ্য ফ্যামিলি ম্যান ৩’, মনোজ বাজপেয়ীর দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন

১৭

যুক্তরাজ্যে ভয়াবহ বিপর্যয়, শত শত স্কুল বন্ধ

১৮

প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বাঁচার দোয়া ও আমল

১৯

স্মার্টফোনে ভূমিকম্পের অ্যালার্ট সিস্টেম চালু করবেন যেভাবে

২০
X