সন্তান ধারণে ব্যর্থতা কেবল নারীর কারণে ঘটে—এমন ভ্রান্ত ধারণা সমাজে প্রচলিত থাকলেও বাস্তবতা ভিন্ন। চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে, বন্ধ্যত্ব নারী ও পুরুষ উভয়েরই হতে পারে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, অনেক সময়ই পুরুষের বন্ধ্যত্বই কোনো দম্পতির সন্তান না হওয়ার মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়।
পুরুষের বন্ধ্যত্বের কারণ কী?
ইনফার্টিলিটি কেয়ার অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের প্রধান পরামর্শক অধ্যাপক ডা. মোসাম্মাত রাশিদা বেগম জানান, পুরুষের বন্ধ্যত্ব প্রধানত শুক্রাণুজনিত সমস্যার কারণে হয়ে থাকে। যেমন—
ডা. রাশিদা জানান, ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রেই শুক্রাণুর ঘাটতির নির্দিষ্ট কোনো কারণ পাওয়া না গেলেও আধুনিক জীবনযাপন, দূষণ, অতিরিক্ত গরম পরিবেশে কাজ, ধূমপান-অ্যালকোহল গ্রহণ, ভিটামিন ও জিংকের ঘাটতি, কীটনাশকযুক্ত খাবার এসবই শুক্রাণুর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এ ছাড়া, ডায়াবেটিস, হরমোনের অসাম্যতা, হেপাটাইটিস চিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যান্টিহেপাটিক, গ্যাস্ট্রিকের জন্য অ্যান্টি আলসারেন্ট জাতীয় ওষুধ, হার্টজনিত ব্যথার জন্য সালফাসালাজিন, মেথোট্রেক্সেট, রেডিওথেরাপি, কেমোথেরাপির মতো ক্যানসারের ওষুধ ভূমিকা রাখতে পারে।
এ ছাড়া অণ্ডকোষে সংক্রমণ, আঘাত বা কোনো কারণে যদি নালি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে পর্যাপ্ত শুক্রাণু তৈরি হলেও বীর্যে মিশতে পারে না। কারও কারও জন্মগতভাবে নালি তৈরি না হওয়ার কারণেও শুক্রাণু বাইরে আসতে পারে না, যা বন্ধ্যত্বের কারণ।
শুক্রাণু বাড়াতে যা করণীয়
বিশেষজ্ঞরা বলেন, জীবনধারায় পরিবর্তনের মাধ্যমে পুরুষের প্রজনন সক্ষমতা অনেকাংশে বাড়ানো সম্ভব। কিছু খাবার শুক্রাণুর গুণগত মান ও পরিমাণ বৃদ্ধিতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। নিচে তেমন কয়েকটি খাবার উল্লেখ করা হলো:
আনার: এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট টেস্টোস্টেরন হরমোন বাড়াতে সাহায্য করে। শুক্রাণুর গুণগত মান বাড়ায়।
ওয়ালনাট (আখরোট): ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ এই বাদাম শুক্রাণুর ক্ষিপ্রতা ও জীবনশক্তি বাড়ায়। প্রতিদিন ৭০ গ্রাম ওয়ালনাট খাওয়া যেতে পারে।
ব্ল্যাক চকলেট: এতে রয়েছে এল-আরজিন অ্যামাইনো এসিড ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শুক্রাণুর পরিমাণ বাড়ায় এবং ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিকেলের বিরুদ্ধে কাজ করে।
টমেটো: লাইকোপেন নামক উপাদানযুক্ত এই সবজি শুক্রাণুর গুণগত মান বাড়াতে সহায়ক। রান্নার সময় জলপাই তেল ব্যবহার করলে শোষণ আরও ভালো হয়।
কুমড়োর বীজ: এতে থাকা জিংক, ফাইটোসটেরল ও টেস্টোস্টেরন হরমোন শুক্রাণুর উৎপাদন বাড়ায়।
অতিরিক্ত পরামর্শ:
পুরুষের বন্ধ্যত্ব আজ আর অজানা বিষয় নয়। সচেতনতা, সঠিক চিকিৎসা ও খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনের মাধ্যমে অনেকাংশে এ সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। তাই দেরি না করে সমস্যার শুরুতেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
মন্তব্য করুন