

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন আজ। দীর্ঘ দুই দশক পর আন্দোলন ও সংগ্রামের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের এ অধিকার ফিরেছে। ৩৯টি কেন্দ্রে ১৭৮টি বুথে ভোটগ্রহণ হবে। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিরাপত্তা জোরদার করেছে।
মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) ভোটগ্রহণ সকাল সাড়ে ৮টায় শুরু হয়ে বিকাল ৩টায় শেষ হবে। ভোট শুরুর আগে সকালে নির্বাচনি কেন্দ্রগুলোতে ব্যালট পেপার পাঠানো হবে। গ্রহণ শেষে ডিজিটাল ওএমআর মেশিনে ভোট গণনা করা হবে।
সোমবার ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা গেছে, একাডেমিক ভবন ও মিলনায়তনে বুথ স্থাপন সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে, ছাত্রীদের জন্য নির্ধারিত নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী হলের অধীন শহীদ সাজিদ ভবনের নিচতলায় ১২টি, দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় ৪৮টি বুথ বসানো হয়েছে। এ ছাড়া সামাজিকবিজ্ঞান ভবন, কলা ভবন, বিজ্ঞান ভবন, মনোবিজ্ঞান ভবন এবং বজলুর রহমান মিলনায়তনে বিভাগের ভিত্তিতে বুথ নির্ধারণ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় অডিটরিয়ামের সামনে মার্কেটিং বিভাগের জন্য ৬টি বুথ থাকবে। প্রতিটি কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা এবং ভোট গণনা লাইভ সম্প্রচারের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. কানিজ ফাতিমা কাকলি বলেন, ‘ছোট ক্যাম্পাসে ১৬ হাজার ৬৪৯ ভোটার সামলানো চ্যালেঞ্জিং হলেও আশা করছি নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হবে।’ সোমবার সকাল থেকে ক্যাম্পাসে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনী ও আনসার মোতায়েন করা হয়েছে। সঙ্গে থাকবে বিএনসিসি, রোভার স্কাউট ও রেঞ্জার ইউনিট। শুধু অনুমোদিত ভোটার ও নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিরাই কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন। নির্ধারিত পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক।
প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে, কোনো সমস্যা হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
নারী ভোটার সংখ্যা ৮৪৭৯ জন, যা মোট ভোটারের ৫০ দশমিক ৯২ শতাংশ। তাদের মতে, আবাসন সংকট, সুপেয় পানি, খাবারের মান এবং নিরাপত্তা—এ চারটি বিষয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ছাত্রী হলের একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘৬০০ সিটের হলে ১২০০ শিক্ষার্থী থাকেন। এই বাস্তবতায় যারা সমাধান দিতে পারবে, তাদেরই ভোট দেব।’
ভিপি পদপ্রার্থী কিশোয়ার আনজুম সাম্য বলেন, ‘যারা শুধু কথা বলেন না, বরং কাজ করেন, নারীরা তাদেরই ভোট দেবেন।’ অন্যদিকে প্রার্থী এ কে এম রাকিব মনে করেন, ‘ছাত্রদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় নারী ভোটারদের প্রভাব সীমিত থাকবে।’
এ ছাড়া একাধিক নারী শিক্ষার্থী মত দিয়েছেন—নারীর প্রতিনিধিত্ব গুরুত্বপূর্ণ, তবে যোগ্যতাই হবে চূড়ান্ত বিবেচ্য। একজন বলেন, ‘নারী প্রার্থী মানেই নারীদের অধিকার রক্ষা হবে—তা নয়। প্রার্থী যোগ্য হলে সবার জন্য কাজ করবেন।’
এদিকে গতকাল রাতে জরুরি বার্তা দিতে সংবাদ সম্মেলন করেন জকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মোস্তফা হাসান। তিনি জানান, সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল ৩টার মধ্যে যারা ভোটকেন্দ্র ও কেন্দ্রের বেষ্টনীর ভেতরে প্রবেশ করবেন, তারা সবাই ভোট দিতে পারবেন।
নিজ কেন্দ্র ছাড়া কোনো প্রার্থী অন্য ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। এমনকি ভোট প্রদান শেষে সংশ্লিষ্ট প্রার্থী নিজ কেন্দ্রেও পুনরায় প্রবেশ করতে পারবেন না।
সিইসি জানান, দ্রুত ও স্বচ্ছতার সঙ্গে ভোট গণনা করতে ছয়টি মেশিনে ভোট গণনাসহ পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও প্রতিটি ভোটকেন্দ্র সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। সেই সঙ্গে তিনটি ডিজিটাল বোর্ডের মাধ্যমে ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভোট গণনা লাইভ সম্প্রচারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
প্রায় ৩০ জন প্রার্থীর অংশগ্রহণে নির্বাচনের ‘মক টেস্ট’ সম্পন্ন করা হয়েছে যেখানে। অতিরিক্ত কোনো ব্যালট ছাপানো হয়নি বলেও জানান অধ্যাপক ড. মোস্তফা হাসান।
মন্তব্য করুন