কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:৫০ এএম
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:৩৮ এএম
অনলাইন সংস্করণ

একনজরে খালেদা জিয়া

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ছবি : সংগৃহীত
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ছবি : সংগৃহীত

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ১৯৪৫ সালে ভারতের জলপাইগুড়িতে (ব্রিটিশ ভারতের বৃহত্তর দিনাজপুর) জন্ম নেন। তিনবারের সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর পিতা ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। সেনা কর্মকর্তা জিয়াউর রহমানের সঙ্গে পরিণয়ে আবদ্ধ হওয়ার মধ্য দিয়ে জড়িয়ে পড়েন বাংলাদেশের ইতিহাসের নানা ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গে।

স্বাধীনতাযুদ্ধের দিনগুলোতে বন্দিজীবন কাটানো দুই সন্তানের মা খালেদা জিয়া দেশের সেনাপ্রধান ও প্রেসিডেন্টের স্ত্রী হিসেবে বর্ণাঢ্য জীবনের অভিজ্ঞতা লাভ করেন।

স্বামী প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে হারিয়ে অল্প বয়সেই বিধবা হন তিনি। জড়িয়ে পড়েন রাজনীতিতে। রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাকলেও দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির হাল ধরেন তিনি।

রাজনীতিতে বেশ সাফল্যের স্বাক্ষর রাখেন তিনি। চারবারের সংসদে পাঁচটি করে আসনে বিজয়ী হন তিনি। আর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনবার দেশ পরিচালনায় নেতৃত্ব দেন।

একনজরে খালেদা জিয়া

একজন সামান্য গৃহবধূ থেকে রাজনীতিতে যে উত্থান খালেদা জিয়ার ঘটেছে, রাজনীতির ইতিহাসে সেটা এক বিরল ঘটনাই বলা যায়। খালেদা খানম পুতুল থেকে অনেকটা যেন আচমকাই খালেদা জিয়ায় পরিণত হয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী এবং মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় নারী সরকারপ্রধান। এ ছাড়া তিনি দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন ছিলেন।

জন্ম

খালেদা জিয়া ১৯৪৫ সালে ভারতের জলপাইগুড়িতে (ব্রিটিশ ভারতের বৃহত্তর দিনাজপুর) জন্ম নেন। তবে তার বাবার আদি নিবাস ফেনী জেলার ফুলগাজীতে। বাবা ব্যবসায়ী ইস্কান্দার মজুমদার ও মা তৈয়বা মজুমদার। খালেদা জিয়ার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে দিনাজপুরের মুদিপাড়া গ্রামে।

পড়াশোনা

১৯৬০ সালে দিনাজপুর সরকারি স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশনে উত্তীর্ণ হন খালেদা জিয়া। পরে তিনি দিনাজপুর সুরেন্দ্রনাথ কলেজে লেখাপড়া করেন। কলেজে পড়ার সময় তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন জিয়াউর রহমানের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। এরপর পড়াশোনা আর এগিয়ে নিতে পারেননি। রাষ্ট্রীয় নথিপত্রে খালেদা জিয়ার শিক্ষাগত যোগ্যতার জায়গায় ‘স্বশিক্ষিত’ শব্দটি লেখা হয়।

বৈবাহিক জীবন

খালেদা জিয়া ১৯৬০ সালে জিয়াউর রহমানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। মূলত সেনা কর্মকর্তা জিয়াউর রহমানের সঙ্গে পরিণয়ে আবদ্ধ হওয়ার মধ্য দিয়েই খালেদা জিয়া জড়িয়ে পড়েন বাংলাদেশের ইতিহাসের নানা ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গে।

মুক্তিযুদ্ধে খালেদা জিয়া

মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে খালেদা জিয়া কিছুদিন আত্মগোপনে ছিলেন। পরে ১৬ মে নৌপথে ঢাকায় আসেন। বড় বোন খুরশিদ জাহানের বাসায় ছিলেন ১৭ জুন পর্যন্ত। ২ জুলাই সিদ্ধেশ্বরীতে এস আবদুল্লাহর বাসা থেকে পাকিস্তানি সেনারা তাকে ও তার দুই ছেলেকে বন্দি করে। ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে বন্দি ছিলেন।

রাজনীতিতে খালেদা জিয়া

স্বামী জিয়াউর রহমান দেশের রাষ্ট্রপতি হলেও রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার উপস্থিতি ছিল না। কিন্তু রাজনৈতিক পরিক্রমায় জিয়া হত্যার পর দলের নেতাকর্মীর আহ্বানে বিএনপির হাল ধরেন তিনি। নীতি ও আদর্শে অটুট থাকায় তিনি আপসহীন নেত্রী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।

প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া

খালেদা জিয়া তিনবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ১৯৯১ সালে প্রথমবারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয়বার এবং ২০০১ সালে জোটগতভাবে নির্বাচন করে তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন তিনি।

বিএনপির চেয়ারপারসন

বিএনপির চেয়ারপারসন হিসেবে টানা প্রায় ৪১ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন খালেদা জিয়া। ১৯৮২ সালের ২ জানুয়ারি তিনি বিএনপির প্রাথমিক সদস্য হিসেবে যোগ দেন। পরের বছর মার্চে তিনি দলটির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে পদোন্নতি পান। বিচারপতি আবদুস সাত্তার অসুস্থ হলে ১৯৮৪ সালের ১২ জানুয়ারি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন এবং একই বছরের ১০ মে চেয়ারপারসন পদে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। ১৯৯৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর দলের চতুর্থ কাউন্সিলে দ্বিতীয়বার, ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলে তৃতীয়বার এবং ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ দলের দশম কাউন্সিলে চতুর্থবারের মতো বিএনপির চেয়ারপারসন হন।

আন্দোলন-সংগ্রামে খালেদা জিয়া

বিএনপির দায়িত্ব নেওয়ার পরই নানা প্রতিকূলতার মুখে পড়েন খালেদা জিয়া। দল ঐক্যবদ্ধ রেখে এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন। এরশাদের শাসনের বিরুদ্ধে কোনোরকম সমঝোতা না করেই আপসহীন আন্দোলন করে গেছেন। ফলে এরশাদের পতন ত্বরান্বিত হয়।

১৯৮৩ সালে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সাতদলীয় ঐক্যজোট গঠিত হয়। একই বছর সেপ্টেম্বরে জোটের মাধ্যমে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেন। ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত পাঁচ দফায় আন্দোলন চলতে থাকে। ওই বছরের ২১ মার্চ রাতে আওয়ামী লীগ সভাপতি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এরশাদের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু তাতেও এরশাদবিরোধী আন্দোলনে দমে যাননি।

১৯৮৭ সাল থেকে খালেদা জিয়া ‘এরশাদ হটাও’ এক দফার আন্দোলন শুরু করেন। একটানা নিরলস ও আপসহীন সংগ্রামের পর ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় বিএনপি।

অনন্য রেকর্ড

নির্বাচনের ইতিহাসে খালেদা জিয়ার একটি অনন্য রেকর্ড হচ্ছে, পাঁচটি সংসদ নির্বাচনে ২৩ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সবকটিতেই তিনি জয়ী হয়েছেন।

কারাবাস

সেনাসমর্থিত ওয়ান-ইলেভেনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে খালেদা জিয়াকে ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার করা হয়। দীর্ঘদিন কারাবাসের পর তিনি আইনি লড়াই করে সবকটি মামলায় জামিন নিয়ে মুক্তি পান। কারাগারে থাকাকালে তাকে বিদেশে নির্বাসনে পাঠানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি যেতে অস্বীকার করেন।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে ২০১০ সালের ১৩ নভেম্বর তিনি ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ হন। এরপর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যান খালেদা জিয়া।

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বর্তমানে ৩৭টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ৩৫টি মামলায় তিনি জামিনে রয়েছেন। বাকি দুটি মামলায় তার সাজা হয়েছে। এর মধ্যে তিনি জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১০ বছরের সাজা ভোগ করছেন। যদিও বর্তমানে তিনি নির্বাহী আদেশে জামিনে আছেন।

২০০৭ ও ২০০৮ সালের জরুরি শাসনকালে তার বিরুদ্ধে ১৩টি মামলা হয়। মামলাগুলোর মধ্যে পাঁচটি দুর্নীতি মামলা, চারটি মানহানির মামলা ও একটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা। বাকি মামলাগুলো হত্যা, অগ্নিসংযোগ ও নাশকতার অভিযোগে। হাইকোর্টের আদেশে ১৩টি মামলার কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে।

মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় বেগম খালেদা জিয়া শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। খালেদা জিয়ার মৃত্যুর সংবাদটি নিশ্চিত করেন বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার শোক

খালেদা জিয়ার জানাজা কোথায় কখন হতে পারে

গৃহবধূ থেকে দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া

খালেদা জিয়াকে নিয়ে জামায়াত আমিরের স্ট্যাটাস

নির্বাচনে অপরাজেয় খালেদা জিয়া

খালেদা জিয়ার জানাজার সময় নিয়ে যা জানাল বিএনপি

আপসহীন নেত্রী খালেদা জিয়ার কারাজীবন

জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে বিএনপি

একনজরে খালেদা জিয়া

শেষ মুহূর্তে তারেক রহমানসহ বেগম জিয়ার পাশে ছিলেন যারা

১০

জকসু নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু সকাল সাড়ে ৮টায়

১১

মারা গেছেন বেগম খালেদা জিয়া

১২

নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন এনসিপি নেত্রী বিন্দু

১৩

দিনাজপুরে খালেদা জিয়াসহ ৪৮ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা

১৪

মনোনয়নপত্র জমা দিলেন আল্লামা সাঈদীর দুই ছেলে

১৫

ঢাকা-৫ আসনের সাবেক এমপি প্রার্থী গ্রেপ্তার

১৬

তিনটি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন সিলভার সেলিম

১৭

মানুষের জীবনমানের উন্নয়নই আমার রাজনীতির লক্ষ্য : মির্জা ফখরুল

১৮

খালেদা জিয়া সবচেয়ে সংকটময় সময় অতিক্রান্ত করছেন : ডা. জাহিদ

১৯

তিন ঘণ্টা ছিলেন দলীয় কার্যালয়ে / রিজভীর নেতৃত্বে তারেক রহমানকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানাল বিএনপি

২০
X