হেপাটাইটিস বি-এর প্রভাবে বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী মৃত্যু বাড়ছে। অদূর ভবিষ্যতে হেপাটাইটিস-বিজনিত নানা জটিলতায় মৃত্যুবরণকারী মানুষের সংখ্যা ম্যালেরিয়া এবং যক্ষ্মা (টিবি) রোগে মৃত্যুর সংখ্যাকেও ছাপিয়ে যাবে মত বিশেষজ্ঞদের। এ অবস্থায় আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে হেপাটাইটিস-বি এবং সি ভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার জন্য সচেতনতামূলক কার্যক্রম আরও জোরদার করতে হবে।
রোববার (৩০ জুলাই) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশন এবং হেপাটোলজি বিভাগের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা এসব তথ্য জানান।
আরও পড়ুন: জুনের তুলনায় জুলাইয়ে ডেঙ্গু রোগী সাত গুণ বেশি
বক্তারা বলেন, শুধু সচেতনতাই নয়, পাশাপাশি লিভার রোগীদের সুলভে সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার বিষয়টিও ক্রমেই অত্যাবশ্যকীয় হয়ে উঠছে।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশনের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল। তিনি ডিভিশনটির গত ২ বছরের কার্যক্রম তুলে ধরে জানান, ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশনে এরই মধ্যে লিভার ক্যান্সার চিকিৎসায় রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি এবলেশন, ট্রান্সআর্টারিয়াল কেমোঅ্যাম্বোলাইজেশন এবং ইমিউনথেরাপির মতো অত্যাধুনিক সব চিকিৎসাসেবা উপলব্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি লিভার সিরোসিস রোগীদের চিকিৎসায় চালু করা হয়েছে হেপাটিক ভেনাস প্রেসার মেটিয়েন্ট, অটোলোগাস হেমোপয়েটিক স্টেম সেল ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন বা স্টেম সেল থেরাপি, মুজিব প্রটোকল বা প্লাজমা এক্সেচেঞ্জ, লিভার ডায়ালাইসিস বা হেমোফিলটেশন।
এ ছাড়াও ট্রান্সলেশনাল মেডিসিনের গবেষণাতেও ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
ডা. মামুন আল মাহতাব বলেন, বাংলাদেশ, জাপান এবং কিউবার চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের যৌথ উদ্ভাবন ন্যাসভ্যাক নামক হেপাটাইটিস বি-এর নতুন ওষুধটির একটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ডিভিশনটিতে সম্পন্ন হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে এ ট্রায়ালটি সফল হলে হেপাটাইটিস বি রোগীরা রোল এন্টিভাইরাল ওষুধ বন্ধ করে ন্যাসভ্যাকের এক কোর্স চিকিৎসা গ্রহণ করেই ভালো থাকতে পারবেন। পাশাপাশি ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশনটিতে ফ্যাটি লিভার এবং লিভার ক্যান্সার চিকিৎসায় একাধিক ভেষজ ওষুধের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালও শুরু হয়েছে।
এ ছাড়াও দেশব্যাপী ভাইরাল হেপাটাইটিস সম্বন্ধে সচেতনতা সৃষ্টি ও হেপাটাইটিস বি প্রতিরোধে ডিভিশনটি এরই মধ্যে রোটারি ইন্টারন্যাশনাল ডিস্ট্রিক্ট ৩২৮১ বাংলাদেশ এবং সাকিব আল হাসান ক্যান্সার ফাউন্ডেশনের সঙ্গে কাজ করতে শুরু করেছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, চিকিৎসাবিজ্ঞানের গবেষণার ওপর তার প্রশাসন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। ইপিআই কর্মসূচি প্রথম চালু করেছিল রোটারিরা। সেই কর্মসূচি ধরে দেশ আজ পোলিওমুক্ত। রোটারি ক্লাবসহ দেশের সব সংস্থাকে নিয়ে আমরা শুধু হেপাটাইটিস না, অনেক বিষয়ে এক সঙ্গে কাজ করব। রোটারি ক্লাব বছরে এক লাখ স্ক্রিনিং করতে চায় এবং তারা এ রোগ প্রতিরোধে বছরে ১০ হাজার ভ্যাক্সিন দিতে চায়, আমরা তাদের সাধুবাদ জানাই। একাধিক সংস্থা যদি একত্রে কাজ করে তবে দেশের উন্নয়ন হবে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম এবং স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি ডা. জামাল উদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ।
মন্তব্য করুন