গত কয়েকদিন ধরে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে সেবাদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। নিরাপত্তাহীনতার কারণে চিকিৎসকসহ সেবা প্রদানকারীরা কাজ বন্ধ রেখেছেন। এ অবস্থায় হাসপাতালটিতে প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
শনিবার (৩১ মে) মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেনের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট হাসপাতালে চিকিৎসকসহ অন্যান্য সেবাদানকারীরা গত ২৯ মে হাসপাতালের অভ্যন্তরে আক্রান্ত হওয়ায় তারা বর্তমানে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। উল্লেখ্য, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই এ হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছেন। দুর্ভাগ্যজনক এই ঘটনার প্রেক্ষিতে সব সেবাদানকারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এ কারণে গত ২৯ মে থেকে হাসপাতালটিতে সেবাদান কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়ে যায়।
এমন পরিস্থিতিতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অধিকাংশ রোগী হাসপাতাল ত্যাগ করে চলে যায় উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শুধু জুলাই যোদ্ধারাই বর্তমানে হাসপাতালে অবস্থান করছেন। সব সেবা বন্ধ হলেও জুলাই অভ্যুত্থানের আহতদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের লক্ষ্যে বিশেষ ব্যবস্থায় তাদের পথ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে। এমতাবস্থায় সারাদেশ থেকে চক্ষু চিকিৎসার জন্য আসা রোগীদের সেবাদান কর্মকাণ্ড চরমভাবে ব্যাহত হয়েছে। আমরা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সেবাবঞ্চিত সব রোগীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, এ অচলাবস্থা নিরসনকল্পে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে একটি প্রতিনিধি দল পাঠানো হয়েছে। প্রতিনিধি দল আহতদের সঙ্গে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ অন্যান্য সেবাদানকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রসঙ্গে আলোচনা করছেন। এই মুহূর্তে আমরা আলোচনার একটি ইতিবাচক ফলাফলের অপেক্ষায় আছি।
চিকিৎসাসেবা দেওয়ার অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত হলেই সেবাদানকারীদের মাধ্যমে হাসপাতালটিতে সব ধরনের চিকিৎসা সেবা আবারও শুরুর সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়া হবে জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে সে পর্যন্ত চক্ষু চিকিৎসার রোগীদের অন্তর্বর্তীকালীন বন্দোবস্ত হিসেবে নিকটস্থ হাসপাতালের চক্ষু বিভাগে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা নেয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, উন্নত চিকিৎসা বা পুনর্বাসনের বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার অভিযোগ তুলে গত রোববার (২৫ মে) চক্ষুবিজ্ঞান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন চার জুলাই যোদ্ধা বিষপান করেন। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় তারা সহযোদ্ধাদের নিয়ে মঙ্গলবার (২৭ মে) দুপুরে চক্ষুবিজ্ঞান হাসপাতালের পরিচালককে অবরুদ্ধ করেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা বাদে সেনাবাহিনীর সহায়তায় অবরুদ্ধ দশা থেকে মুক্তি পান হাসপাতাল পরিচালক। এর মধ্যে আন্দোলনকারীদের কেউ কেউ গায়ে কেরোসিন-পেট্রল ঢেলে আগুন লাগানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল বলে পুলিশের ভাষ্য।
পরিচালককে অবরুদ্ধ করে রাখা এবং আহতদের আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনায় নিরাপত্তার দাবিতে বুধবার (২৮ মে) সকাল থেকে কর্মবিরতি শুরু করেন হাসপাতালের কর্মচারীরা। এ অবস্থায় হাসপাতালের কর্মচারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন জুলাই যোদ্ধারা। পরে আহতদের সঙ্গে যোগ দেন বহির্বিভাগে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগীর স্বজনরাও।
হাসপাতালের এক চিকিৎসকের ভাষ্য, জুলাইয়ের আহতরা হাসপাতালের চিকিৎসক-কর্মচারীদের আবাসিক ভবনেও হামলা চালায় এবং কর্মচারীদের শাস্তির দাবিতে তারা সেখানে স্লোগানও দেন।
খবর পেয়ে প্রথমে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। পরে দুপুরে কোস্টগার্ড সদস্যরা ঘটনাস্থলে অবস্থান নেন। তারপর সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। তবে কর্মচারীদের কর্মবিরতি এবং চিকিৎসকরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ায় হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা বন্ধ হয়ে যায়।
মন্তব্য করুন