দিনভর কঠোর পরিশ্রম শেষে বাড়ি ফিরে সবাই একটু বিশ্রামের আশায় থাকেন। রাতের খাবার সেরে পরিবারের সঙ্গে হালকা গল্পগুজবে সময় কাটানোর পর বিছানায় গা এলিয়ে দেন। ক্লান্ত শরীরে কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমে তলিয়ে যান। কিন্তু সেই ঘুম কি সত্যিই প্রশান্তি দেয়? অনেকের ক্ষেত্রে গভীর রাতে শরীর ঘামে ভিজে যায়, যা ঘুমের শান্তি নষ্ট করে।
রাতে ঘুমের মধ্যে শরীর ঘামে ভিজে গেলে আরামে ঘুমানো বা বিছানায় শুয়ে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। ঘুমের গভীরতাও আগের মতো থাকে না। কখনো কি ভেবেছেন, এই রাতের ঘামের কারণ কী? এটা কি কোনো গুরুতর রোগের ইঙ্গিত? স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট হেলথ লাইনের এক প্রতিবেদনে ওঠে আসে এসব তথ্য।
রাতে ঘুমের মধ্যে অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার পেছনে একাধিক কারণ থাকতে পারে। এটি বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার ইঙ্গিত দিতে পারে। বিশেষ করে, এটি ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। যেমন, কার্সিনয়েড টিউমার, লিউকেমিয়া, ফিওক্রোমোসাইটোমা, হাড়ের ক্যানসার, লিভার ক্যানসার এবং মেসোথেলিওমার মতো রোগের সঙ্গে এটি যুক্ত হতে পারে।
রাতে ঘুমের মধ্যে ঘাম হওয়া সবক্ষেত্রে ক্যানসারের লক্ষণ নয়। এটি শরীরের ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রচেষ্টার ফল হতে পারে। এছাড়া, হরমোনের মাত্রার পরিবর্তনও এই ঘামের কারণ হতে পারে।
ক্যানসারের কারণে জ্বর হলে শরীর অতিরিক্ত ঘামতে পারে, কারণ তখন শরীর তাপ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। কেমোথেরাপি, হরমোন-পরিবর্তনকারী ওষুধ বা মরফিনের মতো ক্যানসারের চিকিৎসাও রাতে ঘামের কারণ হতে পারে। ক্যানসারজনিত ঘামের সঙ্গে অন্যান্য লক্ষণ যেমন জ্বর এবং হঠাৎ ওজন হ্রাস দেখা দিতে পারে।
রাতে ঘুমের মধ্যে ঘাম হওয়া শুধু ক্যানসারের লক্ষণ নয়, অন্যান্য কারণেও হতে পারে। পেরিমেনোপজ বা মেনোপজের সময় হরমোনের মাত্রার পরিবর্তন এর একটি কারণ। গর্ভাবস্থায় হরমোন ও রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধির ফলেও ঘাম হতে পারে। এছাড়া, যক্ষ্মা বা এন্ডোকার্ডাইটিসের মতো ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণও রাতের ঘামের কারণ হতে পারে।
ইডিওপ্যাথিক হাইপারহাইড্রোসিস এমন একটি অবস্থা, যেখানে শরীর অতিরিক্ত ঘাম উৎপন্ন করে। এ ছাড়া, হাইপারথাইরয়েডিজম বা অতি সক্রিয় থাইরয়েড, স্ট্রেস এবং উদ্বেগের কারণেও রাতে ঘুমের মধ্যে ঘাম হতে পারে।
ঘুমানোর আগে গরম পানীয়, মদ্যপান বা মশলাদার খাবার গ্রহণের ফলে রাতে ঘুমের মধ্যে ঘাম হতে পারে। তবে, যদি নিয়মিত অতিরিক্ত ঘামের সমস্যা হয়, তাহলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
মন্তব্য করুন