

ভালোভাবে বাঁচতে হলে শুধু খাবার আর ব্যায়ামই যথেষ্ট নয়, পর্যাপ্ত ঘুমও খুব জরুরি। ঠিকমতো না ঘুমালে শরীর ও মন দুটোই ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ে। অনেক সময় আমরা কম ঘুমিয়েই কাজ চালিয়ে নিতে চাই, কিন্তু এর প্রভাব পড়ে স্বাস্থ্যের ওপর। মাথাব্যথা, ঝিমুনি, ক্লান্তি - এসব তো শুরু মাত্র।
বিশেষজ্ঞদের মতে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন অন্তত ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। কিন্তু ব্যস্ত জীবন, কাজের চাপ আর মোবাইল ব্যবহারের কারণে অনেকেরই ঘুম কমে যাচ্ছে। হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে পুষ্টিবিদ দীপশিখা জৈন ঘুমের সঙ্গে আপস না করার পরামর্শ দিয়েছেন এবং কম ঘুমের কারণে হতে পারে এমন কিছু বড় স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা তুলে ধরেছেন।
সেগুলো নিচে সহজভাবে দেওয়া হলো—
পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীরে প্রদাহ বা ইনফ্ল্যামেশন বেড়ে যায়। এতে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হতে পারে। পুষ্টিবিদ দীপশিখা জৈনের মতে, কম ঘুম শরীরের প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, ফলে শরীর নিজেকে ঠিকভাবে রক্ষা করতে পারে না।
ঘুমের সময় আমাদের পাচনতন্ত্র বিশ্রাম নেয়। কিন্তু নিয়মিত কম ঘুম হলে এই বিশ্রাম ঠিকমতো হয় না। ফলে সকালে উঠে অনেকেরই কোষ্ঠকাঠিন্য বা পেট পরিষ্কার না হওয়ার সমস্যা দেখা দেয়। কম ঘুম শরীর থেকে বর্জ্য বের হওয়ার প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয়।
যারা নিয়মিত কম ঘুমান, তাদের টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। কারণ, কম ঘুমে শরীরে কর্টিসল হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়। এতে শরীর ইনসুলিনের প্রতি কম সংবেদনশীল হয়ে পড়ে, যা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।
জনস হপকিন্সের ঘুম বিশেষজ্ঞ ডা. র্যাচেল সালাস ভালো ঘুমের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন—
- যাদের নাক ডাকার সমস্যা বা স্লিপ অ্যাপনিয়া আছে, তারা পাশ ফিরে ঘুমালে আরাম পেতে পারেন।
- যাদের বুক জ্বালাপোড়া বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আছে, তারা বাম দিকে ঘুমালে উপকার পান। ডান দিকে ঘুমালে সমস্যা বাড়তে পারে।
- পেটের ওপর ভর করে বা একদিকে ঘুমালে মুখে বলিরেখা পড়ার ঝুঁকি থাকে। এক্ষেত্রে চিত হয়ে ঘুমানো ভালো।
- ঘাড় বা পিঠে ব্যথা থাকলে কোন ভঙ্গিতে ঘুমালে আরাম হয়, তা নিজে পরীক্ষা করে বুঝে নেওয়াই সবচেয়ে ভালো।
আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা - ভালো ঘুমের জন্য নিয়মিত সময় ধরে ঘুমানো, ঘুমানোর আগে মোবাইল ব্যবহার কমানো এবং ঘর শান্ত ও অন্ধকার রাখা খুবই উপকারী। ঘুমকে অবহেলা না করে এটিকে দৈনন্দিন জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে দেখা উচিত।
পর্যাপ্ত ঘুমই হতে পারে সুস্থ ও কর্মক্ষম জীবনের সবচেয়ে সহজ চাবিকাঠি।
মন্তব্য করুন