স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা ও শক্তিশালী সামাজিক নিরাপত্তা- এই তিনটি উপাদান মানুষের গড় আয়ু বাড়াতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। সংস্থাটির প্রকাশিত ২০২৪ সালের সর্বোচ্চ গড় আয়ুর তালিকায় দেখা গেছে, বিশ্বের কিছু দেশ ও অঞ্চলে মানুষের গড় আয়ু ৮৬ বছর ছুঁয়েছে, যা একসময় ছিল কল্পনাতীত।
জাতিসংঘের পরিসংখ্যান বলছে, গড় আয়ু নির্ধারণ করা হয় বয়সভিত্তিক মৃত্যুহারের ওপর ভিত্তি করে। অর্থাৎ কোনো দেশে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা যত উন্নত, খাদ্য ও জীবনযাপনের মান যত ভালো, সামাজিক নিরাপত্তা যত বেশি সেই দেশের মানুষ তত বেশি দিন বাঁচেন। পাশাপাশি জিনগত বৈশিষ্ট্য ও লিঙ্গও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
শীর্ষে মোনাকো
তালিকার এক নম্বরে রয়েছে ক্ষুদ্র ইউরোপীয় দেশ মোনাকো, যেখানে মানুষের গড় আয়ু ৮৬ দশমিক ৫ বছর। নারীদের গড় আয়ু ৮৮ দশমিক ৬ বছর এবং পুরুষদের ৮৪ দশমিক ১ বছর। বিশেষজ্ঞদের মতে, মোনাকোর বাসিন্দারা মূলত মেডিটেরিয়ান ডায়েট অনুসরণ করেন, যা সামুদ্রিক মাছ, ফল, শাকসবজি ও স্বাস্থ্যকর তেলে সমৃদ্ধ। এর পাশাপাশি রয়েছে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা ও উচ্চ আয়ের নিশ্চয়তা, যা সুস্থ জীবনযাপনকে সহজ করে দিয়েছে।
দ্বিতীয় স্থানে সান মারিনো
দ্বিতীয় স্থানে সান মারিনো, গড় আয়ু ৮৫ দশমিক ৪ বছর। ছোট্ট এই ইউরোপীয় রাষ্ট্রে উন্নত মানের চিকিৎসা, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার ও উচ্চ সামাজিক-অর্থনৈতিক অবস্থা মানুষের জীবনমানকে দীর্ঘায়ুর দিকে এগিয়ে দিয়েছে।
তৃতীয় স্থানে হংকং
তৃতীয় স্থানে হংকং, যেখানে গড় আয়ু ৮৫ দশমিক ১ বছর। নারীদের গড় আয়ু ৮৮ দশমিক ৩ বছর ও পুরুষদের ৮৩ বছর। উন্নত স্বাস্থ্যব্যবস্থা, শক্তিশালী শিশুস্বাস্থ্য কর্মসূচি এবং বিশ্বের সর্বনিম্ন শিশুমৃত্যুহার এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘায়ুর অন্যতম কারণ।
বাকি দেশগুলো
৪ নম্বরে জাপান, গড় আয়ু ৮৪ দশমিক ৯ বছর, যেখানে দীর্ঘ জীবনের রহস্য লুকিয়ে আছে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, সক্রিয় জীবনধারা ও ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে চলা সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবায় বিনিয়োগে।
৫ নম্বরে দক্ষিণ কোরিয়া, ৮৪ দশমিক ৪ বছর, যা মাত্র কয়েক দশকে নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। পুষ্টি সচেতনতা, সুষম খাদ্য বণ্টন ও স্বাস্থ্যসেবায় সবার প্রবেশাধিকার এই সাফল্যের মূল ভিত্তি।
৬ নম্বরে সেন্ট বার্তেলেমি (৮৪.৪), ৭ নম্বরে ফরাসি পলিনেশিয়া (৮৪.২), ৮ নম্বরে অ্যান্ডোরা (৮৪.২), ৯ নম্বরে সুইজারল্যান্ড (৮৪.১) এবং ১০ নম্বরে অস্ট্রেলিয়া (৮৪.১)।
দীর্ঘায়ুর সাধারণ কারণ
গবেষকরা বলছেন, এই দেশগুলোতে দীর্ঘায়ুর পেছনে যে বিষয়গুলোর মিল পাওয়া যায় সেগুলো হলো- স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত শারীরিক কার্যক্রম, মানসিক প্রশান্তি ও সামাজিক সংহতি, উন্নত স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও প্রতিরোধমূলক চিকিৎসা, সুপেয় পানির প্রাপ্যতা ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশ।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উন্নত জীবনমান কেবল আয়ুষ্কালই বাড়ায় না, বার্ধক্যের মানও উন্নত করে। তাই স্বাস্থ্যসেবা, পুষ্টি ও সামাজিক নিরাপত্তায় বিনিয়োগই দীর্ঘ ও সুস্থ জীবন পাওয়ার অন্যতম চাবিকাঠি।
মন্তব্য করুন