আমরা সবাই চাই মেধাবী হতে, স্মার্ট সিদ্ধান্ত নিতে, নতুন কিছু শিখতে। এসবের পেছনে যে অঙ্গটি নিরলস কাজ করে যাচ্ছে, সেটিই আমাদের মস্তিষ্ক। কিন্তু মজার (বা দুঃখের) ব্যাপার হলো, নিজেদের কিছু ভুল অভ্যাসেই আমরা প্রতিদিন একটু একটু করে মস্তিষ্কের ক্ষতি করে চলেছি অজান্তেই।
আজ জেনে নিন এমন কিছু সাধারণ অভ্যাসের কথা যেগুলো আপনি হয়তো প্রতিদিন করছেন, আর সেগুলোই ধীরে ধীরে আপনার ব্রেনের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে।
প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুম না হলে আমাদের মস্তিষ্ক ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। রাতে ৭-৮ ঘণ্টার কম ঘুম হলে ব্রেন নিজের ক্ষতিগ্রস্ত কোষ মেরামত করতে পারে না, নতুন কোষ তৈরি হয় না। ফলে :
- মনোযোগ কমে যায়
- কিছু মনে রাখা কঠিন হয়
- মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়
- অ্যালঝেইমার্সের ঝুঁকি বাড়ে
টিপস : প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যান, ঘুমানোর আগে ফোন/ল্যাপটপ বন্ধ রাখুন এবং মাথা ঢেকে ঘুমাবেন না।
সারারাত না খেয়ে থাকার পর ব্রেন শক্তি চায়, আর সেটা আসে সকালের নাশতা থেকে। যদি আপনি না খান, তাহলে রক্তে শর্করার ঘাটতি হয়, যা সরাসরি ব্রেনের উপর প্রভাব ফেলে।
টিপস : সকালে সময় নিয়ে হালকা হলেও কিছু খেয়ে নিন; যেমন- ডিম, ফল, ওটস বা রুটি।
জেনে অবাক হবেন, আমাদের মস্তিষ্কের ৭৫% অংশই পানি! পানি না খেলে মস্তিষ্ক শুকিয়ে যেতে থাকে, কোষগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে।
টিপস : প্রতিদিন অন্তত ২ লিটার পানি পান করুন (ব্যক্তি ভেদে কম-বেশি হতে পারে)। মনে রাখবেন, পিপাসা লাগার আগেই পানি খাওয়া উচিত।
সবসময় টেনশন বা দুশ্চিন্তায় থাকলে মস্তিষ্কের সামনের অংশ (ফ্রন্টাল কর্টেক্স) ছোট হতে থাকে। এতে স্মৃতিশক্তি, চিন্তাশক্তি কমে যায়।
টিপস : প্রতিদিন কিছুটা সময় নিজেকে দিন, বিশ্রাম নিন, প্রয়োজনে ‘না’ বলতে শিখুন।
শুধু কাজ নয়, ছুটির দিনেও কেউ কেউ সারা দিন শুয়ে-বসে কাটিয়ে দেন। এতে ওজন বাড়ে, ডায়াবেটিস-হৃদরোগের ঝুঁকি তো বাড়েই, পাশাপাশি স্মৃতিশক্তিও দুর্বল হয়ে পড়ে।
টিপস : দিনে অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটুন বা হালকা ব্যায়াম করুন।
কোনো তথ্য মনে না এলেই সঙ্গে সঙ্গে গুগল সার্চ? এটা করলে মস্তিষ্ক নিজের মতো করে চিন্তা করার অভ্যাস হারিয়ে ফেলে।
টিপস : কিছু হিসাব, তথ্য বা নম্বর মনে রাখার চেষ্টা করুন। বই পড়ুন, মনে মনে ভাবুন – মস্তিষ্ককে ব্যায়াম করান।
হেডফোনে উচ্চ শব্দে গান শুনলে শ্রবণশক্তি নষ্ট হতে পারে মাত্র ৩০ মিনিটেই! আর শ্রবণশক্তি কমে গেলে মস্তিষ্কেও প্রভাব পড়ে।
টিপস : ভলিউম ৬০% এর বেশি রাখবেন না, প্রতি ১ ঘণ্টা পর ৫-১০ মিনিট বিরতি নিন।
মানুষ সামাজিক প্রাণী। একা থাকলে বা কারও সঙ্গে না মিশলে মন খারাপ হয়, বিষণ্নতা তৈরি হয়, এমনকি ডিমেনশিয়ার ঝুঁকিও বাড়ে।
টিপস : পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিন, প্রয়োজনে কাউন্সেলরের সাহায্য নিন।
সবসময় যদি মনে করেন - আমি পারব না, সব শেষ, ভবিষ্যৎ অন্ধকার—তাহলে এই নেগেটিভ চিন্তাগুলো মস্তিষ্কে বিষের মতো কাজ করে।
টিপস : নিজের অর্জন ও ইতিবাচক দিকগুলো ভাবুন। প্রয়োজনে মেডিটেশন বা থেরাপি নিন।
সূর্যের আলো শুধু শরীর নয়, মস্তিষ্কের জন্যও দরকারি। দীর্ঘ সময় অন্ধকারে থাকলে হতাশা, ক্লান্তি আর বিষণ্নতা ভর করতে পারে।
টিপস : প্রতিদিন অন্তত ২০-৩০ মিনিট রোদে হাঁটুন বা জানালা খুলে সূর্যের আলোয় বসুন।
মস্তিষ্ক আপনার জীবনের কমান্ড সেন্টার। ভুল অভ্যাসগুলো পাল্টাতে পারলে শুধু মস্তিষ্ক নয়, পুরো জীবনটাই বদলে যাবে। তাই আজ থেকেই শুরু করুন সচেতনতা—ঘুম, খাবার, পানি, চলাফেরা আর ইতিবাচক মনোভাব দিয়ে সাজান প্রতিদিন।
আপনার ব্রেনকে ভালোবাসুন— ওই তো, ওটাই তো আপনাকে চালায়!
সূত্র : বিবিসি বাংলা
মন্তব্য করুন