শরীরের জন্য প্রোটিন খুব দরকারি—এটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু অনেকেই জানেন না, এই দরকারি প্রোটিন যদি প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়, সেটি হতে পারে একটি গুরুতর সমস্যার ইঙ্গিত। এমন ঘটনা ঘটলে তা সাধারণত কিডনির সমস্যার সংকেত দেয়।
আরও পড়ুন : কোলন ক্যানসার সম্পর্কে জানুন
আরও পড়ুন : পেটের মেদ কমানোর সহজ ৬ উপায়
পুষ্টিবিদ ইসরাত জাহান ডরিনি একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে জানান , প্রস্রাবে প্রোটিন পাওয়া গেলে সেটাকে হালকাভাবে না নিয়ে সময়মতো চিকিৎসা ও খাদ্যতালিকায় পরিবর্তন আনা জরুরি। চলুন, সহজ করে জেনে নিই বিষয়টি।
যখন কিডনি ভালোভাবে কাজ করে, তখন রক্তের প্রোটিনগুলো শরীরে থেকেই যায়—প্রস্রাবে মিশে যায় না। কিন্তু কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হলে এই প্রোটিন ফিল্টার হয়ে প্রস্রাবে চলে যায়। এই অবস্থাকে বলে প্রোটিনুরিয়া বা অ্যালবুমিনুরিয়া।
সাধারণত আমাদের শরীরের একধরনের প্রোটিন, অ্যালবুমিন, সবচেয়ে আগে প্রস্রাবে ধরা পড়ে। যদি ২৪ ঘণ্টায় ৩০ মিলিগ্রামের বেশি অ্যালবুমিন বের হয়, তাহলে তা অস্বাভাবিক। আর ৩০০ মিলিগ্রামের বেশি হলে তা মারাত্মক ইঙ্গিত।
প্রস্রাবে প্রোটিন চলে যাওয়ার পেছনে কয়েকটি কারণ থাকতে পারে
- ডায়াবেটিস (শর্করার সমস্যা)
- উচ্চ রক্তচাপ (হাই ব্লাড প্রেসার)
- কিডনির প্রদাহ বা ইনফেকশন
- অটোইমিউন রোগ যেমন লুপাস (SLE)
- গর্ভকালীন জটিলতা (যেমন প্রি-এক্লাম্পসিয়া)
- কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
- অতিরিক্ত ব্যায়াম, জ্বর বা দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকাও সাময়িকভাবে প্রোটিন বাড়াতে পারে
যদি ৩ মাস বা তার বেশি সময় ধরে প্রস্রাবে নিয়মিত প্রোটিন পাওয়া যায়, তাহলে সেটি ক্রনিক কিডনি ডিজিজের লক্ষণ হতে পারে।
অনেক সময় কোনো উপসর্গ দেখা যায় না। তবে কিছু লক্ষণ দেখা দিলে সাবধান হওয়া উচিত:
- মুখ, পা বা চোখের নিচে ফুলে যাওয়া
- শরীর দুর্বল লাগা
- প্রস্রাব ঘোলাটে বা সাদা দাগযুক্ত হওয়া
- দীর্ঘ সময়ের ক্লান্তি
- প্রস্রাবে ফেনা জমা বা জ্বালাপোড়া
এই উপসর্গগুলো থাকলে প্রস্রাব পরীক্ষা (Routine Urine Test) করে প্রোটিনের মাত্রা জেনে নেওয়া জরুরি।
ডায়েট ও লাইফস্টাইল নিয়ন্ত্রণই সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ। পুষ্টিবিদ ইসরাত জাহান ডরিন জানাচ্ছেন, কিডনির সমস্যা থাকলে ডায়েট ঠিক রাখা খুব জরুরি। তবে ডায়েট থেকে প্রোটিন পুরোপুরি বাদ দিলে চলবে না—শরীর তখন দুর্বল হয়ে পড়বে।
সঠিক পরিমাণ প্রোটিন গ্রহণ করুন : শরীরের ওজন অনুযায়ী দৈনিক প্রোটিন গ্রহণ করতে হবে। উদাহরণ : ৫০ কেজি ওজন হলে ৪৫–৫০ গ্রাম প্রোটিন যথেষ্ট।
ভালো প্রোটিনের উৎস : তাজা মাছ, মুরগি বা লাল মাংস (কম পরিমাণে), ডিম, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার, পরিমিত ডালঅ
প্রক্রিয়াজাত মাংস বা অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।
মনে রাখবেন, সোডিয়াম (লবণ) কমাতে হবে আর দৈনিক ২ গ্রামের বেশি লবণ খাবেন না। অতিরিক্ত লবণ কিডনিকে আরও ক্ষতি করে।
পটাশিয়াম ও ফসফরাস নিয়ন্ত্রণ করুন : বিশেষ করে কিডনির রোগীদের এই দুই খনিজের মাত্রা বেড়ে গেলে বিপদ বাড়তে পারে। কিছু খাবার যেমন কলা, আলু, টমেটো, পালং শাক—পটাশিয়াম বেশি থাকে। দুধ, মাছ, মাংসে ফসফরাস বেশি থাকে। তাই পরিমিত খেতে হবে।
আরও পড়ুন : যে ৫ কারণে সারাক্ষণ ক্লান্ত লাগে
আরও পড়ুন : ঠোঁটের কালচে ভাব দূর করতে ঘরোয়া সমাধান
চর্বি নিয়ন্ত্রণ করুন : প্রোটিনুরিয়া থাকলে রক্তে চর্বি বেড়ে যায়, এতে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে। তাই চর্বি, বিশেষ করে ঘি, মাখন, ভাজাপোড়া—এসব কম খেতে হবে।
- ডায়াবেটিস রোগী
- উচ্চ রক্তচাপের রোগী
- গর্ভবতী নারী (বিশেষ করে হাই প্রেশার থাকলে)
- যাদের পরিবারের কারও কিডনি সমস্যা আছে
- যারা দীর্ঘমেয়াদি ওষুধ সেবন করছেন
প্রস্রাবে প্রোটিন যাওয়া হালকাভাবে নেওয়ার মতো বিষয় নয়। এটা শরীরের ভেতরে চলা কোনো বড় সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে, বিশেষ করে কিডনি যদি ঠিকমতো কাজ না করে। তাই নিয়মিত প্রস্রাব পরীক্ষা করুন, ডায়াবেটিস ও প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখুন, আর খাদ্যতালিকায় সচেতন হন। নিজের যত্ন নিন, কারণ সুস্থ কিডনি মানেই সুস্থ জীবন।
মন্তব্য করুন