কখনো কি এমন হয়েছে—হুট করে চকলেট, আইসক্রিম, চিপস বা কোমল পানীয় খেতে খুব মন চাইছে? এসব হঠাৎ খাবার খাওয়ার তীব্র ইচ্ছাকেই বলে ফুড ক্রেভিং।
অনেকেই ডায়েট শুরু করেও এই খাবারের প্রতি দুর্বলতার কারণে হাল ছেড়ে দেন। বেশি চিনি ও জাঙ্কফুড শুধু ওজনই বাড়ায় না; বরং ধীরে ধীরে নানা রকম অসুস্থতার কারণও হয়ে দাঁড়ায়।
ভাগ্যিস, এই ক্রেভিং কমানোর কিছু বিজ্ঞানসম্মত ও সহজ উপায় আছে। চলুন দেখে নেওয়া যাক—কীভাবে এই খাবারের প্রতি আকর্ষণ কমিয়ে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলা যায়:
প্রচুর পানি খান : অনেক সময় আমরা পিপাসাকে ক্ষুধা ভেবে ফেলি। খেতে ইচ্ছা হলেই আগে এক গ্লাস পানি পান করুন। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন—দেখবেন খাওয়ার ইচ্ছা কমে গেছে।
প্রোটিনে ভরসা রাখুন : প্রোটিন যেমন ডিম, মাছ, ডাল বা দই—এসব খাবার অনেকক্ষণ পেট ভরা রাখে। গবেষণা বলছে, বেশি প্রোটিন খেলে ক্রেভিং ৬০% পর্যন্ত কমে যায়!
মন অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিন : হঠাৎ কিছু খেতে ইচ্ছা হলেই খাওয়ার চিন্তা থেকে মন সরান। হাঁটুন, বই পড়ুন, গোসল করুন—যে কোনো কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। প্রয়োজনে চুইংগামও চিবোতে পারেন।
খাবারের পরিকল্পনা করে ফেলুন : দিন বা সপ্তাহের খাবার আগে থেকেই ঠিক করে রাখুন। এতে হঠাৎ লোভে পড়ে জাঙ্কফুড খাওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।
অনেকক্ষণ ক্ষুধার্ত থাকবেন না : দীর্ঘ সময় না খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে যায়, তখন চিনি বা ফাস্টফুডের প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যায়। তাই মাঝেমধ্যে স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস খেতে থাকুন।
মানসিক চাপ কমান : চিন্তা বা টেনশনে থাকলে অনেকেই মিষ্টিজাতীয় খাবারে আশ্রয় নেন। তাই নিয়মিত ব্যায়াম, মেডিটেশন আর ভালো ঘুম মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
পালং শাকের এক্সট্র্যাক্ট সাপ্লিমেন্ট : গবেষণায় দেখা গেছে, পালং শাকের নির্যাস (extract) খেলে চিনি বা চকলেট খাওয়ার ইচ্ছা ৯০% পর্যন্ত কমে। এটা ক্ষুধা কমায় ও হজম ধীর করে।
ভালো ঘুম দিন : যারা নিয়মিত ঘুমান না, তাদের শরীরে ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণের হরমোন গড়বড় করে যায়। এতে অকারণে খাওয়ার ইচ্ছা বাড়ে। তাই পর্যাপ্ত ঘুমানো খুব জরুরি।
সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করুন : খাবারে যদি ভিটামিন, প্রোটিন বা ফাইবার কম থাকে, তাহলে শরীর চিনি চায়। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় পুষ্টিকর খাবার রাখুন। ক্ষুধা পেলে ফল, বাদাম বা সবজি খান।
খালি পেটে বাজারে যাবেন না : ক্ষুধার্ত অবস্থায় বাজারে গেলে সাধারণত মিষ্টি বা প্রসেসড ফুড বেশি কিনে ফেলি। তাই বাজারে যাওয়ার আগে কিছু হালকা খেয়ে নিন।
সচেতনভাবে (Mindful) খাবার খান : খাওয়ার সময় মনোযোগ রাখুন খাবারের স্বাদ, গন্ধ আর পরিমাণে। এতে বুঝতে পারবেন আপনি সত্যিই ক্ষুধার্ত কি না, নাকি শুধু খাওয়ার লোভে খাচ্ছেন।
মিষ্টি বা জাঙ্কফুডের প্রতি আকর্ষণ স্বাভাবিক; কিন্তু তা নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। কিছু সহজ অভ্যাস ও সচেতনতার মাধ্যমে আপনি নিজেই নিজের খাওয়ার অভ্যাস বদলে দিতে পারেন। শুরুটা কঠিন মনে হলেও ধীরে ধীরে আপনার শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকবে।
সূত্র: হেলথলাইন
মন্তব্য করুন