বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেছেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে যখন দেশের জনগণ দিশেহারা, তখন ওষুধের দাম বৃদ্ধি করে তাদেরকে এক নির্মম পরিস্থিতিতে নিয়ে যাচ্ছে এই সরকার।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের তথ্যমতে, চিকিৎসা ব্যয়ের ৬৪ শতাংশ ওষুধের পেছনে খরচ হয়। সেই ওষুধের দাম বৃদ্ধি করে যেন নির্মম এক প্রহসনের আয়োজন করলো জনবিচ্ছিন্ন এই সরকার।
বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক মুনির হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এসব কথা জানান তিনি।
বিবৃতিতে ডা. রফিকুল ইসলাম জানান, ২০২২ সালে কোনো ধরনের পূর্ব ঘোষণা ছাড়া শুধু ওষুধ কোম্পানিগুলোর সুপারিশে ২০টি জেনেরিকের ৫৩টি ওষুধের দাম বৃদ্ধি করে ঔষধ প্রশাসন, যা ছিল নজিরবিহীন। সে সময় প্যারাসিটামল, হৃদরোগ, ব্যথানাশক ও গ্যাস্ট্রিকের ওষুধের দাম ৫০-১৩৪ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। ওষুধের দাম বৃদ্ধির এই রেশ কাটতে না কাটতেই অতি সম্প্রতি দেশের শীর্ষ ছয় প্রতিষ্ঠান তাদের উৎপাদিত ২৩৪টি জীবন রক্ষাকারী ওষুধের দাম ১০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়েছে- যার সুবিধা নিচ্ছে অসাধু কিছু ব্যবসায়ী। এর ফলে প্রকৃত মূল্যের তুলনায় অনেক বেশি মূল্য দিয়ে ওষুধ কিনতে হিমশিম খাচ্ছে জনগণ।
তিনি জানান, মারাত্মক ডেঙ্গুর এই প্রকোপের সময় ওষুধের এই লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি চরম বিপর্যয় ডেকে নিয়ে আসছে। এছাড়া জীবন রক্ষাকারী স্যালাইনের মূল্যবৃদ্ধি অমানবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। একই সাথে স্যালাইনের সংকট নতুন করে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ ঔষধ প্রশাসন এসব ক্ষেত্রে নীরব। শীর্ষ ছয় কোম্পানির মালিকানা দেখলেই বোঝা যাবে- কার স্বার্থ রক্ষার্থে এই দাম বৃদ্ধি।
এই চিকিৎসক বলেন, এভাবে হুট করে দাম বৃদ্ধির কারণে অনেকেই মাঝপথে ওষুধ সেবন বন্ধ করে দিচ্ছে। ফলে নানা রকম স্বাস্থ্যঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোর্স সম্পন্ন না করে অ্যান্টিবায়োটিক বন্ধ করলে এন্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স তৈরি হচ্ছে, যা শীর্ষ ১০টি জনস্বাস্থ্য হুমকির একটি। একই সাথে ডায়াবেটিস কিংবা হৃদরোগের ওষুধের দামবৃদ্ধিতে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। যারা দীর্ঘমেয়াদি রোগে ভুগছেন, নিয়মিত ওষুধ খাওয়ার জন্য তাদের মাসিক খরচ ২-৪ হাজার টাকা বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিত্যনৈমিত্তিক পণ্য কেনা নিয়ে যখন নাভিশ্বাস অবস্থা, তখন জীবন রক্ষাকারী ওষুধ কেনাটা সাধারণ মানুষের জন্য বিলাসিতায় পরিণত হয়েছে।
বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক এই সম্পাদক বলেন, ১৯৮২ সালের ঔষধ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ ১১(১) ধারায় স্পষ্ট বলা আছে- ‘সরকার অফিসিয়াল গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে ওষুধের দাম নির্ধারণ করতে পারবে।’ অথচ এই নিয়মের তোয়াক্কা না করে ২০২২ সালেই ঔষধ প্রশাসন দাম বাড়িয়েছে দুইবার।
তিনি বলেন, এভাবে দেশের প্রতিটি খাত ধ্বংসের সম্মুখীন। চিকিৎসা মৌলিক অধিকার- তাও আজ ক্ষুণ্ন হচ্ছে। নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত এই সরকার কোনোভাবেই দেশের সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা না করে দেশকে এক চরম দুর্যোগের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে পারে না। অবিলম্বে স্বাস্থ্যখাতে এই বেহাল দশার সাথে জড়িত অনির্বাচিত সরকারের কুশীলবদের জবাবদিহিতার মুখোমুখি করতে হবে।
মন্তব্য করুন