স্বাস্থ্যসেবায় অবদানের জন্য আইএইচএফ গোল্ড অ্যাওয়ার্ড পেল দেশের স্বনামধন্য স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান হোপ ফাউন্ডেশন। মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যসেবায় অসামান্য অবদানের জন্য হোপ ফিল্ড হসপিটাল ফর উইমেন অ্যান্ড চিলড্রেন অব বাংলাদেশকে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল হসপিটাল ফেডারেশন (আইএইচএফ) ‘সালতানাত অব ওমান এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ফর হেলথ সার্ভিসেস ডিউরিং ক্রাইসিস’ ক্যাটাগরিতে ২০২৩ সালের ‘গোল্ড উইনার’ ঘোষণা করা হয়।
বিশ্বের ৯১টি দেশের স্বনামধন্য স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
হোপ ফাউন্ডেশন ফর উইমেন অ্যান্ড চিলড্রেন অব বাংলাদেশের পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট ডা. ইফতিখার মাহমুদ গত ২৬ অক্টোবর পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে এক জমকালো অনুষ্ঠানে এ ‘গোল্ড’ অ্যাওয়ার্ডটি গ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য, কয়েক মাস পূর্বেই হোপ ফাউন্ডেশন আমেরিকার ফিলাডেলফিয়া অঙ্গরাজ্যে স্বনামধন্য পুরস্কার ‘ক্লাসি অ্যাওয়ার্ডে’ ভূষিত হয়েছিল।
সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ১৯২৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল হসপিটাল ফেডারেশন প্রতিবছর এই ধরনের আয়োজন করে থাকে।
এ বছর, বিশ্বের ৪৩টি দেশ/অঞ্চলের হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যসেবা সংস্থাগুলো থেকে প্রাথমিকভাবে ৫০০টিরও বেশি হাসপাতাল নির্বাচিত করেছিল। পরে সাতটি ক্যাটাগরিতে ৬৯টি হাসপাতাল ফাইনাল লিস্টে আসে, তার মধ্যে হোপ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের একমাত্র হসপিটাল হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করেছে।
এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট ডা. ইফতিখার মাহমুদ বলেন, ‘বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশকে সন্মানিত করতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। এ অর্জন আমাদের দেশের অর্জন। এ স্বীকৃতি আমাদের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে অনুপ্রেরণা জোগাবে। এটা সম্ভব হয়েছে হোপ ফাউন্ডেশন টিমের সব সদস্যদের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং ত্যাগের কারণে। আশা করি বাংলাদেশ স্বাস্থ্যসেবার সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো এবং দাতা সংস্থাসমূহ আমাদের এ মহৎ কর্মকে অব্যাহত রাখতে সবসময় আমাদের পাশে থাকবেন।’
হোপ ফাউন্ডেশন ফর উইমেন অ্যান্ড চিলড্রেন অব বাংলাদেশের একটি প্রতিষ্ঠান ‘হোপ ফিল্ড হসপিটাল ফর উইমেন অ্যান্ড চিলড্রেন’ ২০১৮ সাল থেকে রোহিঙ্গা নাগরিকদের পাশাপাশি উখিয়া ও টেকনাফের স্থানীয় নাগরিকদের জরুরি মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যসেবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে।
ঝুঁকিপুর্ণ অন্তঃসত্ত্বা নারীদের স্বাভাবিক ও অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান প্রসবের একমাত্র নির্ভরযোগ্য হাসপাতাল হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছে এ প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিক থেকেও গুরুতর শারীরিক অবস্থার অন্তঃসত্ত্বা নারীদের এ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এ হাসপাতালে মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা ছাড়াও কোভিড-১৯, ডেঙ্গু, জলবসন্ত, কলেরা, দন্তরোগ ও মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসছে। হোপ ফিল্ড হাসপাতাল গত ছয় বছরে ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৬৯৭ জনকে সেবা প্রদান করেছে। এ হাসপাতালের সেবামূলক কার্যক্রম পরিচালিত হয় দাতাসংস্থার সহযোগিতায় এবং সব ধরনের স্বাস্থ্যসেবাই বিনামূল্যে দেওয়া হয়।
আমেরিকা প্রবাসী শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. ইফতিখার মাহমুদ দেশের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের বিশেষ করে, মা ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের লক্ষ্যে ১৯৯৯ সালে ‘হোপ ফাউন্ডেশন ফর উইমেন অ্যান্ড চিলড্রেন অব বাংলাদেশ’ নামক প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এ ফাউন্ডেশনটি বেশ কয়েকটি হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের সার্বিক সহযোগিতায় মানসম্মত মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করে যাচ্ছে।
হোপ ফাউন্ডেশন বর্তমানে অনেকগুলো স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দেশের লাখ লাখ সুবিধাবঞ্চিত অসহায় মানুষের মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছে।
হোপ ফাউন্ডেশন ২০১১ সাল থেকে মায়েদের প্রসবজনিত ফিস্টুলার চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সঙ্গে একনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
বর্তমানে চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলার মায়েদের প্রসবজনিত ফিস্টুলা নির্মূলে হোপ ফাউন্ডেশন কাজ করছে। হোপ ফাউন্ডেশন এ পর্যন্ত ৯০০-এর অধিক প্রসবজনিত ফিস্টুলা রোগে আক্রান্ত মায়েদের সার্জারির মাধ্যমে রোগমুক্ত করতে পেরেছে। দাতা সংস্থার সহযোগিতায় সম্পূর্ণ বিনা খরচে মায়েদের প্রসবজনিত ফিস্টুলা চিকিৎসা ও পুনর্বাসন করা হচ্ছে।
বর্তমানে হোপ ফাউন্ডেশন মায়েদের প্রসবজনিত ফিস্টুলা নির্মূল কার্যক্রম চট্টগ্রাম বিভাগের বাইরে বরিশাল বিভাগেও শুরু করেছে। হোপ হাসপাতালের ফিস্টুলা সার্জনরা পর্যায়ক্রমে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হসপিটালে ফিস্টুলা সার্জারি সম্পন্ন করে আসছে।
হোপ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের অনুমতিক্রমে ২০১২ সাল থেকে হোপ মিডওয়াইফারি ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত মিডওয়াইফ তৈরির প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছে।
হোপ মিডওয়াইফারি ইনস্টিটিউট থেকে এ পর্যন্ত ছয় ব্যাচে ২০০-এর অধিক মিডওয়াইফ ডিপ্লোমা ডিগ্রি লাভ করেছে।
দেশের কৃতি সন্তান ডা. ইফতিখার মাহমুদ কক্সবাজারে জন্মগ্রহণ করেন এবং কক্সবাজারেই তার শৈশব শিক্ষা সম্পন্ন করেন। পরে তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি সম্পন্ন করে শিশুর স্বাস্থ্যে ওপর উচ্চতর ডিগ্রি গ্রহণের জন্য আমেরিকায় যান। সেখানে তিনি উচ্চতর ডিগ্রি গ্রহণ করে শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে আমেরিকার ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।
সম্প্রতি আমেরিকার স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব নেব্রাস্কা ডা. ইফতিখার মাহমুদকে সম্মানসূচক ডক্টর অফ সায়েন্স ডিগ্রি প্রদান করেছে। বর্তমানে ডা. ইফতিখার উদ্দিন মাহমুদ ইউনিভার্সিটি অব নেব্রাস্কের অধ্যাপনাও করছেন।
মন্তব্য করুন