কৃমির সমস্যায় ভুগছেন এমন মানুষের সংখ্যা বর্তমানে অনেক বেশি। ছোট বড় সবাই এ সমস্যায় ভোগেন। এজন্য প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই কেউ না কেউ কৃমি সমস্যায় আক্রান্ত থাকেন। কয়েকটি গবেষণায় দেখে গেছে, প্রায় ৮৫ শতাংশ মানুষের পেটেই কৃমি থাকে।
আমাদের শরীরে যদি কৃমির মাত্রা বৃদ্ধি পায় তাহলে খিদে না পাওয়া, মাড়ি থেকে রক্ত পড়া, অল্পেই ক্লান্ত হয়ে পড়ার মতো বেশ কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। মার্কিন চিকিৎসক আব্রাহাম বের মতে, নিয়মিত খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে কৃমির সমস্যা অনেক দূর করা সম্ভব।
কৃমির সমস্যায় অনেকে ভুগলেও বিষয়টি তারা টের পায় না। পেট ব্যথা কিংবা যন্ত্রণা হলে অনেকেই মনে করেন তেল-মসলাযুক্ত খাবার খাওয়ার কারণেই এমনি হচ্ছে। তাই একে হজমের সমস্যা ভেবে ভুল করবেন না, এটি কৃমির সমস্যাও হতে পারে। তাই এসব সমস্যাকে অবহেলা না করে দ্রুতই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।
কৃমি নানা ধরনের হতে পারে। এটি মূলত বেশিরভাগ সময় আমাদের অন্ত্রে বাসা বাঁধে। তাই এ সমস্যা থেকে অনেক সময় নানা ধরনের শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে। এজন্য কৃমির লক্ষণ দেখা দিলে কোনোভাবেই অবহেলা করা যাবে না। চলুন এক নজরে দেখে নেয়া যাক কৃমির লক্ষণ কী কী—
- পেট ব্যথা হওয়া। - খিদে না পাওয়া। - মলদ্বারে চুলকানি হওয়া। - পেট খারাপ হওয়া। - বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
এসব লক্ষণ দেখা দিলে যদি চিকিৎসা না করা হয় তাহলে অনেকেই অপুষ্টিতে ভুগতে পারেন। তাই এ ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে প্রতিহত করার চেষ্টা করুন।
কৃমির সমস্যা সাধারণত বাচ্চাদের বেশি হয়। তবে বড়রাও এ সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারেন। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, ছোটরা এ সমস্যার কথা সহজেই বলে দিতে পারলেও বড়রা এটি লোকলজ্জার ভয়ে বলতে দ্বিধাবোধ করেন। যা অনেক সময় মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।
কৃমি হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে হাত পরিষ্কার না করে বা হাত না ধুয়ে মুখে দেওয়া। এ ছাড়া অপরিষ্কার হাত দিয়ে খাবার খেলে ওই খাবারের মাধ্যমে পেটে কৃমি প্রবেশ করতে পারে।
রসুন
কৃমি দূর করতে রসুন বেশ উপকারী। কারণ, এটি হলো অ্যান্টি-প্যারাসাইটিক খাবার। এর মধ্যে রয়েছে অ্যামাইনো অ্যাসিড যা পেটের কৃমি মেরে ফেলতে কাজ করে। এজন্য প্রতিদিন সকালে খালি পেটে দুকোয়া রসুন খেতে পারেন। এভাবে এক সপ্তাহ নিয়মিত খেলে ভালো কাজ করবে। এ ছাড়া আধা কাপ পানিতে দুটি রসুনের কোয়া দিয়ে সিদ্ধ করে এক সপ্তাহ নিয়মিত খেলেও উপকার পাওয়া যাবে।
নারকেল
নারকেল কৃমি দূর করতে সাহায্য করে। এজন্য প্রতিদিন সকালে এক চামচ নারকেল কুচি খেতে পারেন। এ ছাড়া ৩ ঘণ্টা পর এক গ্লাস গরম দুধের সঙ্গে দুই চামচ ক্যাস্টর অয়েলও মিশিয়ে খেতে পারেন।
লবঙ্গ
লবঙ্গের অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল উপাদান কৃমি নষ্ট করে দেয়। তাই প্রতিদিন ১-২টি লবঙ্গ খেতে পারেন।
মিষ্টি কুমড়োর বীজ
কৃমির সমস্যায় মিষ্টি কুমড়োর বীজ খেতে পারেন। এজন্য দুই চামচ মিষ্টি কুমড়োর বীজের গুঁড়ো তিন কাপ পানিতে আধা ঘণ্টা সিদ্ধ করুন। এক সপ্তাহ সকালে খালি পেটে খেতে পারেন। এ ছাড়াও এক চামচ করে মিষ্টি কুমড়োর বীজের গুঁড়ো ও মধু মিশিয়ে খেতে পারেন।
গাজর
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে একটি গাজর কুচি করে খেতে পারেন। কারণ, গাজরের বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন এ, সি এবং জিঙ্ক শরীরে কৃমি প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটাই বাড়িয়ে দেই।
হলুদ
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক চা চামচ কাঁচা হলুদের রসের সঙ্গে সামান্য লবণ মিশিয়ে খেতে পারেন। এ ছাড়া হাফ কাপ গরম পানিতে সামান্য হলুদ গুঁড়ো এবং লবণ মিশিয়ে খেতে পারেন। এভাবে অন্তত পাঁচদিন নিয়মিত খেলে উপকার পাওয়া যাবে।
অ্যাপল সিডার ভিনেগার
প্রতিবেলা খাওয়ার আগে অ্যাপল সিডার ভিনেগার খেতে পারেন। এটি পেটে অ্যাসিডের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে শরীরে প্যারাসাইট ও জীবাণুর লার্ভা মারতে সাহায্য করে।
আনারস
আনারসের ব্রোমেলিন এনজাইম প্যারাসাইট মারতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, টানা তিন-চার দিন শুধু আনারস খেয়ে থাকলে কৃমি সম্পূর্ণ দূর হয়ে যায়।
সূত্র : আনন্দবাজার
মন্তব্য করুন