পটুয়াখালীর বাউফলে দোকানঘরে আগুন লাগানোর অভিযোগে দুই কিশোরকে (১৫) অমানবিক নির্যাতনের ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। শনিবার (৯ আগস্ট) রাত আড়াইটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকজন মিলে দুই কিশোরকে দোকানের খুঁটির সঙ্গে পেছন দিকে দুই হাত বাঁধা অবস্থায় লাঠিপেটা করছে। ভিডিওতে অন্যদের ‘বল, কে আগুন দিতে পাঠাইছে, কত টাকা দিছে? পাঁচ হাজার টাহা দিছে? আগুন লাগলে এইহানে ঘরগুলা থাকতে? কেডা পাঠাইছে আবার ক? কয় টাহা লইছোছ? পাঁচ হাজার? আবার ক? কেরাসিন লইয়া আইছোস। লাল জামাডা ক্যার? কেরাসিনের বোতল কই হালাইছোস’—এসব কথা জিজ্ঞাসা করতে শোনা যায়।
নির্যাতনের একপর্যায়ে স্বীকারোক্তিও দেয় দুই কিশোর।
স্থানীয় কয়েকজন জানায়, উপজেলার বগীর খাল তুলাতলা এলাকায় শনিবার রাত আনুমানিক ১টার দিকে মাহবুব (৪৫) নামে এক মুদি ও চা বিক্রেতার দোকানের বৈদ্যুতিক মিটার ব্লাস্ট হয়ে আগুন ধরে যায়। এরপর তার চিৎকারে স্থানীয় লোকজন ছুটে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে নেয়। আগুন নিয়ন্ত্রণের পর ক্রমান্বয়ে ছুটে আসা লোকজনও যে যার মতো চলে যায়। এর অনেকক্ষণ পর দোকানদার মাহবুব ও তার লোকজন তুলাতলী খালের বিপরীত দিক থেকে আসা শৌলা কর্পূরকাঠী এলাকার দুই কিশোরকে ধরে নিয়ে দোকানের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখে। একপর্যায়ে তাদের অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। লাঠিপেটায় আহত করে তাদের কাছ থেকে আগুন লাগানোর স্বীকারোক্তি ভিডিও ধারণ করা হয়। পরে খবর দিলে বাউফল থানার পুলিশের এসআই মো. ইব্রাহিম মোল্লা ঘটনাস্থালে গিয়ে ওই দুই কিশোরকে থানায় নিয়ে যান।
স্থানীয়দের কেউ কেউ আবার অভিযোগ করেন, পুলিশ ওই দুই কিশোরকে রাতে ধরে নিয়ে গেলেও কোনো চিকিৎসা না দিয়ে পুরো একটা দিন এবং পরের রাত ১০টা পর্যন্ত তাদের থানায় আটকে রাখে।
দোকানি মাহবুব বলেন, দোকানের পেছনের দিকটায় থাকি। বিদ্যুতের মিটার ব্লাস্টের শব্দ শুনে উঠে দেখি আগুন ধরে গেছে। মিটারে কাপড় পেঁচিয়ে কেরোসিন দিয়ে আগুন লাগানো হয়। কেরোসিনের বোতল পড়ে থাকতে দেখি। এর কিছুক্ষণ পরে ওই দুই কিশোর সামনে দিয়ে যাচ্ছিল। একপর্যায়ে লোকজন তাদের জিজ্ঞাসা করলে তারা আগুন লাগানোর কথা স্বীকার করে। পুলিশের কাছেও তারা স্বীকারোক্তি দিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলেন, আনুমানিক রাত ১টার দিকে দোকানদার মাহবুবের চিৎকারে ঘুম ভাঙে। ছুটে গিয়ে মিটারের কাছে আগুন দেখতে পাই। দ্রুতই তা নিয়ন্ত্রণে আসে। এরপর চলে আসি। পরে দুই কিশোরকে নির্যাতনের কথা জেনেছি। বাউফল থানার এসআই মো. ইব্রাহিম মোল্ল্যাহ জানান, আগুনের ঘটনা এবং অভিযুক্ত দুই কিশোর নির্দোষ কি না তা এখনই বলা যাচ্ছে না। এখনো তদন্ত চলছে। ভোর ৪টার দিকে আমরা ওদের নিয়ে আসি।
পরে বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান সরকার কালবেলাকে বলেন, আগুন লাগানোর সত্যতা পাওয়া যায়নি। কিশোরদের তাদের আত্মীয়ের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য করুন