খাবার টাটকা রাখতে আমরা অনেকেই বাজার থেকে ফিরেই সবকিছু ফ্রিজে রেখে দেই। মনে করি, ফ্রিজে রাখলেই খাবার ভালো থাকবে, দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যাবে। কিন্তু সব খাবার ফ্রিজের উপযোগী নয়। বরং কিছু নির্দিষ্ট জিনিস ফ্রিজে রাখলে উল্টো তা দ্রুত নষ্ট হয়, বদলে যায় স্বাদ। এমনকি স্বাস্থ্যের জন্যও হতে পারে ক্ষতিকর। তাই জেনে নিন—ভুলেও ফ্রিজে রাখবেন না যেসব খাবার। সম্প্রতি ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ওঠে এ তথ্য।
তাই চলুন জেনে নেওয়া যাক ভুলেও ফ্রিজে রাখবেন না যেসব খাবার-
শাক বা পাতা : যে কোনো ধরনের শাক-পাতা ফ্রিজে রাখা উচিত নয়। কারণ এগুলো খুব সহজে নষ্ট হয়ে যায়। ফ্রিজে রাখলে সাময়িকভাবে ভালো থাকলেও, বাইরে বের করলেই দ্রুত নেতিয়ে পড়ে। তাই শাকপাতা যতটা সম্ভব টাটকা অবস্থায় খেয়ে ফেলা ভালো। বিশেষ করে তুলসীপাতা ফ্রিজে রাখলে তা আশেপাশের খাবারের গন্ধ শুষে নেয়, ফলে পাতাগুলো আর ব্যবহারযোগ্য থাকে না। তুলসীপাতা সংরক্ষণ করতে চাইলে ফুলের মতো পাত্রে পানি নিয়ে তাতে রেখে কয়েকদিন সতেজ রাখা সম্ভব।
কলা : কলা সবসময় ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখা উচিত। এমন পরিবেশেই কাঁচা কলাও ধীরে ধীরে পেকে যায়। কিন্তু ফ্রিজে রাখলে কলার গায়ে দ্রুত কালো দাগ পড়ে এবং তা দ্রুত পচে যেতে পারে। ফলে ফ্রিজে কলা সংরক্ষণ করলে তা সহজেই নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
টমেটো : কাঁচা বা পাকা—কোনো ধরনের টমেটোই ফ্রিজে রাখা উচিত নয়। কাঁচা টমেটো সংরক্ষণ করতে হলে এমন জায়গায় রাখুন যেখানে হাওয়া-বাতাস চলাচল করে। আর পাকা টমেটো দ্রুত খেয়ে ফেলা ভালো—সালাদে, রান্নায় কিংবা কেচাপ বানিয়ে। অনেকেই টমেটো কেচাপ ফ্রিজে রেখে দেন, কিন্তু সেটিও দরকার নেই। কেচাপ স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখলেও প্রায় তিন মাস ভালো থাকে।
পাউরুটি : অনেকে মনে করেন পাউরুটি ফ্রিজে রাখলে তা বেশি দিন ভালো থাকে। কিন্তু আসলে বিষয়টি ঠিক উল্টো। ফ্রিজে রাখলে পাউরুটি দ্রুত শুকিয়ে যায় এবং এর স্বাদ ও গুণমানও নষ্ট হয়ে যায়। তাই পাউরুটি সংরক্ষণের জন্য ফ্রিজ নয়, বরং ঠান্ডা ও শুকনো জায়গা বেছে নেওয়াই ভালো।
মধু : অনেকে মনে করেন মধু দীর্ঘদিন ভালো রাখতে ফ্রিজে রাখা উচিত। কিন্তু ফ্রিজে রাখলে মধুর স্বাদ ও গুণাগুণ দুটোই নষ্ট হয়ে যায়। তাই মধু সংরক্ষণের জন্য ফ্রিজের বদলে ঠান্ডা, শুষ্ক ও অন্ধকার জায়গায় রাখা ভালো। এভাবে রাখলে মধু অনেকদিন ভালো থাকে এবং পুষ্টিগুণও অক্ষুণ্ন থাকে।
তরমুজ ও বাঙ্গি : তরমুজ বা বাঙ্গি ফ্রিজে রাখা ঠিক নয়। কারণ এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। তবে যদি তরমুজ কেটে ফেলেন, তাহলে চার ঘণ্টার মধ্যে ফ্রিজে রেখে খাওয়া যেতে পারে—তাতে কোনও সমস্যা নেই। তবে তার চেয়ে বেশি সময় রাখলে তা স্বাদ ও পুষ্টিগুণ হারাতে পারে। একইভাবে, মধুও ফ্রিজে না রেখে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করাই ভালো। ফ্রিজে রাখলে মধুর শ্বেতসার ঘন হয়ে দানা দানা হয়ে যেতে পারে, যা তার গুণগত মানে প্রভাব ফেলে।
পেঁয়াজ-রসুন-আদা : রান্নার সময় বাঁচাতে অনেকে রসুন ছাড়িয়ে বা বেটে ফ্রিজে রেখে দেন। এটি মোটেও সঠিক উপায় নয়। রসুন শুকনো জায়গায় ভালো থাকে, ফ্রিজের আর্দ্রতায় তা দ্রুতই নষ্ট হয়ে যেতে পারে। বাটা অবস্থায় রাখলে রসুনের ঘ্রাণ ও পুষ্টিগুণ কমে যায়, এমনকি ফ্রিজে ছত্রাকও ধরতে পারে। শুধু তাই নয়, বাটা পেঁয়াজ-রসুন ফ্রিজে রাখলে তীব্র দুর্গন্ধ ছড়ায়। তাই এই অভ্যাস থাকলে এখনই বদলে ফেলাই ভালো।
আলু : শর্করা জাতীয় খাবারের মধ্যে আলু অন্যতম, কিন্তু আলু ফ্রিজে রাখা উচিত নয়। ফ্রিজে রাখলে আলুর শ্বেতসার ভেঙে যায় এবং আলু নরম হয়ে গিয়ে স্বাদ নষ্ট হয়, মুখে নিলে ‘বালু বালু’ ধরনের অনুভূতি দেয়। আলু এবং মিষ্টি আলু খোলা ঝুড়িতে, ছায়াযুক্ত এবং স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখা ভালো। মিষ্টি আলুও ফ্রিজে রাখলে এর গঠন ও স্বাদে পরিবর্তন ঘটে, আলু দ্রুত শুকিয়ে যায় এবং এতে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায়।
অন্যান্য : ফল এবং ড্রাই ফ্রুটস ফ্রিজে রাখা উচিত নয়। কারণ এতে শুকনো ফলগুলো নরম হয়ে স্বাদ হারিয়ে ফেলে। গুঁড়া মসলা ফ্রিজে রাখলেও দ্রুত নষ্ট হয়; তাই মসলা অন্ধকার, শুষ্ক এবং স্বাভাবিক তাপমাত্রার স্থানে সংরক্ষণ করা ভালো। পিঠা, মিষ্টি, কেক বা কুকিজ ফ্রিজে রাখলে ঠান্ডায় এগুলোর স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়, তাই এগুলো এয়ারটাইট বাক্সে বাইরে রাখা উচিত। এ ছাড়া আপেল মিষ্টি ও রসাল স্বাদ বজায় রাখতে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখা উত্তম, কারণ ফ্রিজে রাখলে তার স্বাদ নষ্ট হয় এবং কচকচে ভাবও চলে যায়।
রান্নায় ব্যবহৃত তেল সাধারণত স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ভালো থাকে, তবে বাদামের তেল ফ্রিজে রাখা প্রয়োজন। আচারও স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখলে তার স্বাদ, গন্ধ ও গুণাগুণ ভালো থাকে। জ্যাম ও জেলির ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য। অন্যদিকে, কোনো ধরনের সালাদ ড্রেসিং ফ্রিজে রাখা ঠিক নয়।
মন্তব্য করুন