নানা ধরনের ডায়েট চার্ট ফলো করেও ওজন কমছে না? আজ থেকে শুরু করে দিন ওয়াটার ফাস্টিং। এই ডায়েটের মেন্যুতে থাকবে শুধু পানি ও পানীয়। মাত্র ১ মাসেই ফল মিলবে একেবারে হাতেনাতে। কীভাবে করবেন জানাচ্ছেন চট্টগ্রাম এভারকেয়ার হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ আশফি মোহাম্মদ
ওয়াটার ফাস্টিং কি?
সকালে ঘুম থেকে উঠে ৮-১২ ঘণ্টা কোনো ভাত, রুটি, মাছ, মাংস বা কোনো শক্ত খাবার খাওয়া যাবে না। এই সময় খাবেন শুধু পানীয় বা তরলজাতীয় খাবার অর্থাৎ স্যুপ, জুস আর পানি। তরল খাবারের এই ডায়েট পদ্ধতিকে বলা হচ্ছে ওয়াটার ফাস্টিং। তরল খাবার সহজে হজম হয় আর খাবার থেকে প্রাপ্ত ক্যালরি সম্পূর্ণটাই শরীরের প্রয়োজন হয় এবং বাড়তি যে ক্যালরি দরকার হয় সেটি শরীরের জমে থাকা চর্বি বার্ন করে তৈরি হওয়ার কারণে দ্রুত ওজন কমে।
উপকারিতা
ওয়াটার ফাস্টিংয়ে অল্প সময়ে ওজন কমানোর পাশাপাশি রয়েছে আরও বেশিকিছু উপকারী দিক। এতে ক্যান্সার, হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিসের মতো রোগের ঝুঁকি কমে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থেকে ওয়াটার ফাস্টিং করে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্তিদের রক্তচাপ কমে গেছে। উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন এমন ৬৮ জন প্রায় দুই সপ্তাহ ওয়াটার ফাস্টিং করার ফলে প্রায় ৮২ শতাংশ মানুষের রক্তচাপ স্বাভাবিক হয়েছে। আবার ইনসুলিন এবং লেপটিন গুরুত্বপূর্ণ হরমোন যা শরীরের বিপাককে প্রভাবিত করে ওয়াটার ফাস্টিং। আরেকটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৩০ জন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি ২৪ ঘণ্টা ওয়াটার ফাস্টিং করার পর তাদের রক্তে কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গিয়েছিল।
কী খাবেন
শারীরিকভাবে সুস্থ, কর্মক্ষম ও পূর্ণবয়স্করা সকালে ঘুম থেকে উঠে কুসুম গরম পানিতে লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে পান করুন। এরপর ২ ঘণ্টা বিরতি দিয়ে যে কোনো মৌসুমি টক ফলের জুস খেতে পারেন ১ গ্লাস। জুসে চিনি বা লবণ মেশানো যাবে না। ২ ঘণ্টা বিরতি দিয়ে শসা ও টমেটো বা গাজরের জুস বা স্যুপ খেতে পারেন। এরপর সন্ধ্যায় একবেলা সলিড খাবার যেমন ভাত বা রুটির সঙ্গে সবজি, মাছ বা মাংস ও ডাল খেতে পারেন। খাবার পর ১ কাপ টক দই খান। রাতে শোবার আগে চিয়া বীজ খেতে পারেন লেবু দিয়ে। চিয়া বীজ না পেলে ইসুবগুল পানিতে মিশিয়ে পান করুন। মোট কথা ওয়াটার ফাস্টিং ডায়েটে প্রতি দেড় থেকে দুই ঘণ্টা পর পর তরল খাবার খেতে হবে এবং এর ফাঁকে ফাঁকে সারাদিনে ৬-৮ গ্লাস বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে।
যাদের জন্য প্রযোজ্য নয়
ডায়াবেটিস, লো ব্লাডপ্রেশার বা রক্তচাপ কম থাকলে এবং রক্তে হিমোগ্লোবিন কম থাকলে এই ফাস্টিং পদ্ধতি আপনার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই ওয়াটার ফাস্টিং করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে জেনে নিন এটা আপনার শরীরের জন্য উপযুক্ত কিনা। ব্যক্তির শারীরিক অবস্থা, প্রয়োজনীয়তা এবং চাহিদা অনুযায়ী চিকিৎসক ওয়াটার ফাস্টিংয়ের পরামর্শ দেন। তবে সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের ক্ষেত্রেও দীর্ঘদিন এ ধরনের খাদ্যাভ্যাস চালিয়ে গেলে ওজন কমলেও ত্বক, চুল, শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ এবং রুচিতে ঋণাত্মক প্রভাব পরে এবং শারীরিক দুর্বলতা, অসুস্থতার ঝুঁকি বাড়ে। তাই টানা এক মাসের বেশি ওয়াটার ফাস্টিং করা থেকে বিরত থাকুন এবং কতদিন পর পর এটি করতে পারবেন সে বিষয়েও চিকিৎসকের মতামত নিন।
মন্তব্য করুন