কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১২ নভেম্বর ২০২৫, ১১:০৫ এএম
অনলাইন সংস্করণ

ছোট কিছু অভ্যাসেই নিন শীতের পোশাকের যত্ন

ছবি : সংগৃহীত
ছবি : সংগৃহীত

শীত পড়লেই আলমারি ভর্তি হয়ে যায় উষ্ণ পোশাকে—সোয়েটার, কোট, শাল, জ্যাকেট, গ্লাভস আর মাফলার। এগুলোর নরম ছোঁয়ায় ঠান্ডা দিনে যেমন আরাম মেলে, ঠিক তেমনি সামান্য ভুল যত্নেই নষ্ট হয়ে যেতে পারে প্রিয় পোশাকগুলো।

তাই কিছু সহজ নিয়ম মেনে চললেই এই শীতের জামাকাপড় থাকবে নতুনের মতো—প্রতি বছর, বছর পর বছর।

উল ও কাশ্মীরি কাপড়

উল বা কাশ্মীরি কাপড় কখনো গরম পানিতে ধোবেন না। এতে ফাইবার সংকুচিত হয়ে কাপড় ছোট হয়ে যায়। সবসময় ঠান্ডা বা হালকা কুসুম গরম পানিতে ধোবেন।

ডিটারজেন্টের বদলে ব্যবহার করতে পারেন বেবি শ্যাম্পু বা উলের জন্য বিশেষ লিকুইড ডিটারজেন্ট—এতে কাপড়ের প্রাকৃতিক তেল নষ্ট হয় না। ধোয়ার পর কাপড় চিপে পানি ঝরাবেন না; বরং তোয়ালে বিছিয়ে তার ওপর রেখে হালকা চাপ দিন। ছায়ায় শুকান, সরাসরি রোদে নয়।

আরও পড়ুন : শীতে সুস্থ থাকার সহজ ৭ উপায়

আরও পড়ুন : শীতের শুরুতেই চামড়া শুকিয়ে রুক্ষ হওয়া থেকে রক্ষা করুন নিজেকে

ইস্ত্রি করার সময় কম তাপে স্টিম ব্যবহার করুন, বা পাতলা কাপড়ের তলে ইস্ত্রি দিন। সরাসরি আয়রন দিলে ফাইবার শক্ত হয়ে যায়।

সোয়েটার ও কার্ডিগান

সোয়েটার ও কার্ডিগান সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত শীতের পোশাক। ধোয়ার সময় হালকা হাতে ধুয়ে উলের ডিটারজেন্ট ব্যবহার করুন। অনেকে শুকানোর সময় হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখেন—এটা ভুল। এতে নিচের দিক লম্বা হয়ে যায়। বরং তোয়ালে বা সমান জায়গায় বিছিয়ে শুকান। শুকিয়ে গেলে ফোল্ড করে রাখুন, কখনো ঝুলিয়ে নয়।

যদি ছোট ছোট বল বা ফাজ তৈরি হয়, তাহলে লিন্ট রিমুভার বা পুরোনো টেপ দিয়েও সহজে তুলে ফেলা যায়।

জ্যাকেট ও কোট

জ্যাকেট বা কোট ঘন কাপড়ের হলেও ভেতরে প্যাডিং থাকে, যা আর্দ্রতায় নষ্ট হয়। তাই ঘন ঘন ধোওয়ার দরকার নেই। প্রতিবার ব্যবহারের পর হালকা ব্রাশ দিয়ে ধুলো মুছে ফেলুন। ভিজে গেলে ছায়ায় শুকান, রোদে নয়—রোদে শুকালে বাইরের রঙ ফিকে হয়ে যায়।

গন্ধ হলে ড্রাই ক্লিন করান। শীত শেষে সংরক্ষণ করতে গেলে কভার ব্যাগে রাখুন।

শাল, মাফলার ও স্কার্ফ

এই পোশাকগুলো ঘন ঘন ব্যবহার হয়, ফলে ঘাম, ধুলা ও পারফিউমের গন্ধ জমে। ঠান্ডা পানিতে অল্প শ্যাম্পু মিশিয়ে হাতে ধুয়ে নিন। মেশিনে নয়। শেষবার ধোওয়ার সময় এক চা চামচ ভিনেগার মেশালে গন্ধ দূর হবে ও কাপড় নরম থাকবে।

শুকানোর সময় রোদে নয়, ছায়ায় রাখুন। সংরক্ষণ করার সময় রোল করে রাখলে ভাঁজ পড়বে না। সময় না থাকলে ১০-১৫ মিনিট বাতাসে মেলে রাখলেই গন্ধ অনেকটা চলে যাবে।

মোজা ও গ্লাভস

মোজা ও গ্লাভস সরাসরি ত্বকে লাগে, তাই নিয়মিত ধোওয়া দরকার। বিশেষত উলের হলে প্রতিদিন ধুয়ে ফেলুন। ঠান্ডা পানিতে হালকা ডিটারজেন্ট ব্যবহার করুন এবং ছায়ায় শুকান। ভেজা অবস্থায় রাখলে গন্ধ ও ছত্রাক হতে পারে। পুরোপুরি শুকিয়ে তারপর ব্যাগ বা ড্রয়ারে রাখুন। ছোট সিলিকা জেল প্যাক রাখলে আর্দ্রতা থাকবে না।

ধোওয়ার সঠিক নিয়ম

শীতের পোশাক সবসময় ঠান্ডা বা কুসুম গরম পানিতে ধুতে হবে। গরম পানি একেবারেই নয়। ডিটারজেন্ট হালকা ধরনের ব্যবহার করুন। শিশুদের শ্যাম্পুও ভালো বিকল্প।

হাতে ধোওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ। মেশিনে ধুলে gentle বা wool mode বেছে নিন। ধোওয়ার পর কাপড় চিপে নয়, তোয়ালে দিয়ে চেপে পানি ঝরান এবং ছায়ায় শুকান।

শুকানো ও ইস্ত্রি করা

শীতের পোশাক কখনো রোদে শুকাবেন না। তাতে রঙ ফিকে হয় আর তন্তু শক্ত হয়ে যায়। উলের পোশাক বিছিয়ে শুকান, ঝুলিয়ে নয়—এতে আকৃতি ঠিক থাকে।

ইস্ত্রির সময় কম তাপে স্টিম ব্যবহার করুন বা নিচে পাতলা কাপড় দিন।

শীত শেষে সংরক্ষণ

শীত শেষ হলে কাপড় ধুয়ে শুকিয়ে তারপর রাখুন। ভেজা কাপড় রাখলে গন্ধ ও ছত্রাক হবে। সংরক্ষণের জন্য কটন বা লিনেন ব্যাগ ব্যবহার করুন, যাতে বাতাস চলাচল করতে পারে।

ভেতরে রাখুন ল্যাভেন্ডার ব্যাগ বা মথবল, আর আর্দ্রতা রোধে সিলিকা জেল প্যাক। বর্ষার আগে একবার রোদে দিয়ে নিলে কাপড় থাকবে ফ্রেশ ও নতুনের মতো।

ঘরোয়া কিছু টিপস

দাগ লাগলে দ্রুত ব্যবস্থা নিন।

কফি বা চায়ের দাগ: ঠান্ডা পানিতে ভিনেগার মিশিয়ে ঘষে তুলুন।

তেল বা ঘামের দাগ: বেকিং সোডা ব্যবহার করুন, এটা তেল টেনে নেয়।

গন্ধ দূর করতে বেকিং সোডা ও পানি মিশিয়ে ধুয়ে নিন।

ভ্রমণের সময় যত্ন

যাত্রায় ভারি শীতের পোশাক রাখতে হলে ভাঁজ না করে রোল করে রাখুন। এতে জায়গা বাঁচবে, কাপড়ও কুঁচকাবে না। ব্যাগে সিলিকা জেল রাখলে পোশাক শুকনো থাকবে। যদি ভিজে যায়, তোয়ালে দিয়ে পানি মুছে ছায়ায় শুকান।

পরিবেশবান্ধব যত্ন

শীতের পোশাক বারবার ধোওয়ার দরকার নেই। মাঝে মাঝে শুধু বাতাসে মেলে রাখলেই সতেজ থাকবে। পুরোনো পোশাক ফেলে না দিয়ে অন্য কাউকে দিন বা রিসাইকেল করুন—এতে জায়গা বাঁচবে, আবার কারো উপকারও হবে।

আরও পড়ুন : শীতে কলা খাওয়া কি ক্ষতিকর

আরও পড়ুন : গরম না ঠান্ডা... কোন কফি শরীরের জন্য ভালো?

শীতের পোশাকের যত্ন নেওয়া মানে শুধু জামা বাঁচানো নয়, নিজের যত্ন নেওয়াও। কারণ প্রতিটি পোশাকের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে স্মৃতি—প্রিয় সোয়েটার, মায়ের দেওয়া শাল, বা প্রথম কেনা কোট। একটু যত্ন নিলেই এই উষ্ণতার গল্পগুলো টিকে থাকবে বহু বছর।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

গুণগত ব্যবস্থাপনায় ইউল্যাবের আইএসও ৯০০১:২০১৫ অর্জন

উত্তরায় মাইক্রোবাসে আগুন

নতুন নিরাপত্তা চুক্তি করল অস্ট্রেলিয়া ও ইন্দোনেশিয়া

কারাভোগের তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে মির্জা ফখরুলের স্ট্যাটাস 

সাদমান-জয়ের ফিফটিতে বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে প্রথম সেশন

হাত-পা বাঁধা অবস্থায় নদীতে মিলল ব্যবসায়ীর মরদেহ

মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুলে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ

গাজীপুরে রাতভর ৩ বাসে আগুন, টহল জোরদার

আশুলিয়ায় বাসে আগুন, চিৎকার করতেই গুলি

এই সপ্তাহে মাঠে নামছে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা, জেনে নিন কবে কখন

১০

৪ দিনে সীমান্ত থেকে ১৪ গরু নিয়ে গেল বিএসএফ

১১

হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরলেন ধর্মেন্দ্র, স্বস্তি বলিউডে

১২

শ্বশুরবাড়িতে মিলল বাবা-মেয়ের গলাকাটা মরদেহ

১৩

ছোট কিছু অভ্যাসেই নিন শীতের পোশাকের যত্ন

১৪

ছাত্রলীগের ২ নেতা গ্রেপ্তার

১৫

সাবেক ছাত্রদল নেতা শহীদুল ইসলাম স্থায়ী বহিষ্কার

১৬

যেভাবে সন্ধান মিলল বাংলাদেশ ব্যাংকের সেই কর্মকর্তার

১৭

জর্জিয়া-আজারবাইজান সীমান্তে তুরস্কের সামরিক বিমান বিধ্বস্ত

১৮

হঠাৎ অসুস্থ গোবিন্দ, জ্ঞান হারিয়ে হাসপাতালে ভর্তি

১৯

১৪ বল টিকতে পারল আয়ারল্যান্ড, অলআউট ২৮৬ রানে

২০
X