

অনেক বাড়িতেই ছারপোকার সমস্যা নতুন কিছু নয়। ছোট্ট এই পোকা চুপিসারে বিছানা বা ঘরের অন্ধকার কোণে লুকিয়ে থাকে, আর সুযোগ পেলেই কামড় দেয়। অসহ্য চুলকানি, লাল দাগ আর বিরক্তি- সব মিলিয়ে ছারপোকা সত্যিই বড় একটি ঝামেলা।
তবে একটু সচেতন থাকলে এবং ঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখলে এদের থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
পুরোনো বাংলা সাহিত্যেও ছারপোকার অত্যাচারের কথা প্রায়ই এসেছে। গল্পে দেখা যায়, অনেক চরিত্রই ছারপোকার যন্ত্রণায় মেসবাড়ি পর্যন্ত বদলে ফেলেছে। ছোটবেলায় কামড়ে রক্ত ঝরলে ভয় পেত সবাই। বড় হয়ে বোঝা গেছে, পাঁচ মিলিমিটারের এই পোকাই আসলে কতটা সমস্যার।
ছারপোকা খুব নিঃশব্দে হাঁটে। সুযোগ পেলেই কুটুস করে কামড়ায়। কামড়ের দাগ, ফোলাভাব আর শিরশিরানি অনেকদিন থাকে। সমস্যা হলো, এরা এত দ্রুত লুকিয়ে পড়ে যে হাতের কাছে পাওয়া প্রায় অসম্ভব। বাড়িতে ঢুকতে পারলে মুহূর্তেই বংশবৃদ্ধি করে। একটি স্ত্রী ছারপোকা একাই প্রায় ৫০০টি ডিম দেয়। জন্মের সময় রঙ সাদা, কিন্তু রক্ত খেতে খেতে বাদামি হয়ে যায়। পিষে ফেললে বাজে গন্ধ বের হয়।
বিছানার তোষকে যদি একবার বাসা বাঁধে, তাহলে সহজে ছারপোকা দূর করা যায় না। খুব দ্রুত ঘরের সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। তখন অনেকেই বাধ্য হয়ে কীটনাশক বিশেষজ্ঞ বা পেস্ট কন্ট্রোলের সাহায্য নেন।
তবে কিছু ঘরোয়া সতর্কতায় ছারপোকা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
প্রথমে খুঁজে বের করুন ঘরের কোন কোন কোণে ছারপোকা লুকিয়ে আছে। বংশবৃদ্ধির আগেই যদি দেখা যায়, তাহলে তাড়ানো সহজ। প্রশিক্ষিত পোষা কুকুর থাকলে তার মাধ্যমে ছারপোকার বাসা শনাক্ত করা যায়।
তোষকের কোণা, পর্দার ভাঁজ, সোফার কিনারা, কুশন, স্যুইচবোর্ড, ওয়ালপেপারের কোণা, কার্পেটের নিচে - এসব অন্ধকার জায়গায় এরা লুকিয়ে থাকে। ছারপোকা থাকলে বিছানা বা দেয়ালে কালচে লাল রঙের দাগ দেখা যায়।
এদের ডিম ছোট, হলদেটে রঙের। ডিমের খোলাও কাছাকাছি পাওয়া যায়। অন্ধকার হলে এদের চলাফেরা বেড়ে যায়, আলো জ্বাললে লুকিয়ে পড়ে। স্যাঁতস্যাঁতে জায়গা ছারপোকার খুব পছন্দ। তবে গরমে টিকতে পারে না। তাই নিয়মিত রোদে তোষক, কার্পেট বা আক্রান্ত জিনিসপত্র কয়েক ঘণ্টা রেখে দিন।
ভ্যাক্যুম ক্লিনার দিয়ে ডিম ও ময়লা পরিষ্কার করুন। যে সমস্ত জিনিস গরম পানিতে ধোয়া যায় সেগুলো ধুয়ে ফেলুন। হেয়ার ড্রায়ারের গরম বাতাসেও ছারপোকা মরে।
যেসব জিনিস ধোয়া বা রোদে দেওয়া যায় না, সেগুলো কয়েক মাস প্লাস্টিক মোড়কে রেখে দিন। ঘরের ভেতর কাপড় ধোয়ার বদলে ছাদে বা খোলা জায়গায় ধোয়া ভালো - এতে ছারপোকা আবার ঢোকার ঝুঁকি কমে।
বাজারে ছারপোকা মারার ওষুধ পাওয়া যায়, তবে সেগুলো ব্যবহার ঝুঁকিপূর্ণ। এগুলো থেকে অ্যালার্জি হতে পারে, বিশেষ করে শিশুদের জন্য। খুব প্রয়োজন না হলে পেস্ট কন্ট্রোল না করাই ভালো।
যদিও মনে হয় ছারপোকার সংখ্যা কমেছে, তবু নিয়মিত সেই জায়গাগুলো পরীক্ষা করুন। বর্ষা মৌসুমেই ছারপোকা বেশি সক্রিয় হয়। তাই এ সময় সতর্ক থাকুন।
অল্প যত্ন আর নিয়মিত পরিষ্কার রাখলেই ছারপোকা অনেকটাই দূরে রাখা যায়।
সূত্র : এই সময় অনলাইন
মন্তব্য করুন