শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আরও অনেক বেশি পরিমাণে যুক্ত হোক, সেটিই আমাদের প্রত্যাশা। দেশের বিভিন্ন শিল্পকারখানার মালিক ও প্রতিনিধিদের অনুরোধ করব, আপনাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিন। আপনাদের সঙ্গে কারিগরি শিক্ষার যে দুরত্ব আছে, তা মিটিয়ে জনস্বার্থে দেশের জনগণকে দক্ষ করে গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি। আপনাদের থেকে চাকরির বাজার এবং সর্বাধুনিক প্রযুক্তির বিশেষায়িত প্রয়োগ আমরা শিক্ষার্থীদের জানাতে চাই। তাদের সেই কর্মদক্ষতায় দক্ষ করে গড়ে তুলতে চাই।
বুধবার (১৪ জুন) সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা সপ্তাহ ২০২৩ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, দক্ষতাবিহীন অতিরিক্ত গ্রাজুয়েট আমাদের অর্থনীতিতে যুক্ত করার সুযোগ নেই। দক্ষতা ছাড়াই যখন একজন গ্রাজুয়েট হচ্ছেন, তখন তার মধ্যে চাকরি না পেয়ে হতাশা, অস্থিরতা, বিভিন্ন ধরণের আসক্তি দেখা দিচ্ছে। এটা কোনো সমাজের জন্যই সুখকর নয়। কাজেই এখন বড় সংখ্যক সাধারণ গ্রাজুয়েটদের দিকে মনোযোগ দিতে হবে, যারা কর্মদক্ষতা ছাড়া কর্মজগতে প্রবেশ করছে। আমরা চাই সবার জন্য কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে সুলভ করার পাশাপাশি যারা সাধারণ শিক্ষায় আছেন, তাদের কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার সাথে পরিচিত করতে। এ লক্ষ্যে আমরা কাজ শুরু করেছি। ইতোমধ্যে ৬৪০টি সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে যুক্ত করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, নতুন শিক্ষায় শিক্ষকের ঘাটতি রয়েছে। তাদের দক্ষতার ঘাটতিও রয়েছে। আমরা কিন্তু রাতারাতি এই শিক্ষার মান উন্নয়ন করে ফেলতে পারব না। তবে, দেশব্যাপী কারিগরি শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং যুগোপযোগী করণের কর্ম পরিকল্পনা প্রণয়ন সহ সুনির্দিষ্ট কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে কারিগরি শিক্ষার প্রসারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় একটি করে টেকনিক্যাল স্কুল স্থাপন করা হচ্ছে। কার্যকর পরিকল্পনা ও কর্মসূচির কারণে এ খাতে নারী শিক্ষার্থীদের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বৃদ্ধি পেয়েছে।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. কামাল হোসেন বলেন, ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চলে দেশের লোকজনদের যোগান দিতে না পারলে বিদেশের লোকজন সেসব জায়গা দখল করে নিবে। আমরা তাই কারিগরিতে ভর্তি বাড়ানোর চিন্তা করছি। প্রধানমন্ত্রীও এক্ষেত্রে ভীষণ উদার। আমরা জেলায় জেলায় পলিটেকনিক করব। আমাদের কারিগরি পরিবারের সকলকে কারিগরি শিক্ষার প্রচার বাড়াতে হবে। আমাদের কমিটমেন্ট ঠিক না থাকলে কারিগরিতে অংশগ্রহণ বাড়বে না।
কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এনএসডিএ)’র নির্বাহী চেয়ারম্যান নাসরীন আফরোজ এবং কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মহসিন।
প্রসঙ্গত সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে জাতীয় পর্যায়ে বৃহস্পতিবার ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনীয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি), ঢাকায় “স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানে কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব ও করনীয়” শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ ছাড়া, ১৪ থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা সপ্তাহ-২০২৩ পালন করতে সারাদেশে কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে অভিভাবক সম্মেলন; কারিগরি মেলা আয়োজন; শিল্প-কারখানা ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর; জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে সেমিনার আয়োজনসহ নানা কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন