কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৮ মে ২০২৫, ০৮:৫৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

এসেট প্রকল্পে অনিয়ম খতিয়ে দেখতে মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি 

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের লোগো। ছবি : কালবেলা গ্রাফিক্স
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের লোগো। ছবি : কালবেলা গ্রাফিক্স

কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন একলেয়ারেটিং স্কিলস ফর ইকোমিক ট্রান্সফরমেশন (এসেট) প্রকল্প বাংলাদেশের দারিদ্র্যতা এবং বেকারত্ব দূরীকরণ প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে এবিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তাদের সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. সাইফুল ইসলাম। সদস্যহিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন যুগ্মসচিব আনিসুল ইসলাম ও উপসচিব সাজ্জাদ হোসেন।

জানা গেছে, বেকার যুবক, নারী ও অবহেলিত নৃগোষ্ঠী জনবলের দক্ষতা বৃদ্ধি করে অর্থনৈতিক শক্তিতে রূপান্তর করার লক্ষ্যে ৫ বছর মেয়াদি এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। সংক্ষেপে যার নাম দেওয়া হয় এসেট। প্রকল্পের মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (৪৩০০ কোটি টাকা) যার মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের ব্যয় ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং বিশ্বে ব্যাংক লোন ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। অভিযোগ রয়েছে, নানাবিধ অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে সরকারি অর্থের অপচয় হচ্ছে।

অভিযোগের তথ্য মতে, এসেট প্রকল্পের আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে জনবল নিয়োগে চরম অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে, এই প্রকল্পে দায়িত্বরত অনেক কর্মচারী ও পরামর্শক সাবেক অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক ও যুগ্মসচিব আব্দুর রহিমের নিকট আত্মীয়স্বজন ও পরিচিতজন; যাদের সবার বাড়ি পাবনায়। লোক দেখানো নিয়োগ পরীক্ষায় যোগ্যদের বাদ দিয়ে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক আব্দুর রহিম ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে নিজের লোক নেওয়ায় কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের অনেক কমকর্তা অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে এই প্রকল্পে নিযুক্ত জনৈক গাড়িচালক জানান, তার যোগদানের পরে প্রথম কয়েক মাসের বেতন এপিডি আব্দুর রহিমকে দিয়ে দিতেন এবং তার ওভারটাইমের টাকা দিয়ে আব্দুর রহিম তার ব্যক্তিগত গাড়িচালকের বেতন দিতেন। এছাড়া তিনি প্রকল্পের ক্রয় ও নিয়োগ কমিটির আহ্বায়ক হওয়ায় ক্রয় ও পরামর্শক নিয়োগে অনিয়ম করেন এবং অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ প্রদান করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন পরামর্শক এই প্রতিবেদকের কাছে অর্থ প্রদানের কথা স্বীকার করেছেন। প্রকল্প পরিচালক মীর জাহিদ হাসান ও অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক মো. আব্দুর রহিমের বিরুদ্ধে কমিউনিকেশন স্পেশালিষ্ট পদে নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।

এসেট প্রকল্পের ক্রয় কমিটির আহ্বায়ক মো. আব্দুর রহিম প্রকল্পের ফার্নিচার, টিভিসি ও অন্যান্য কেনাকাটায় ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন। ক্রয় কমিটির একজন সদস্য বলেন, প্রকল্পের ব্যবহারের জন্য প্রায় ৭৩ লক্ষ টাকার আসবাবপত্র হাতিল ফার্নিচার থেকে ক্রয় করা হয়। ফার্নিচার ডেলিভারির পরে প্রকল্প দপ্তরে রাখার পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের করিডোরে দামি ফার্নিচারগুলো অনেকদিন ফেলে রাখায় কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক প্রয়োজনের অতিরিক্ত ফার্নিচার কেনায় ও বাইরে ফেলে নষ্ট করায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

এছাড়াও এসেট প্রকল্পের দপ্তর মেরামতে, নির্মাণ ও পূর্ত কাজেও ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। গণপূর্ত বিভাগের মাধ্যমে সম্পাদিত এসেট প্রকল্পের বিভিন্ন কক্ষ, টয়লেট, কনফারেন্স রুম চাহিদা মোতাবেক সমাপ্ত করা হয়নি। নির্মান ও পূর্ত কাজে মোট ১ কোটি ২৩ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে। কাজের প্রথমেই কয়েকটি বাথরুমে ব্যবহার করা পুরোনো ফিটিংস ও টাইলস ব্যবহার করেন। পরবর্তীতে বিষয়টি প্রকল্প কর্মকর্তাদের নজরে পড়লে গণপূর্ত অধিদপ্তরে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অভিযোগ দিলে তিনি বলেন যে, প্রকল্পের ডিপিডি রাকিবুল হাসানের নির্দেশে তারা পুরোনো ফিটিংস ও টাইলস ব্যবহার করেছেন। পরবর্তীতে সাবেক প্রকল্প পরিচালক রাকিবুল হাসানকে এজন্য তিরষ্কার করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায় যে, প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালকের কক্ষ, অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালকের কক্ষ এবং কনফারেন্স রুম ব্যতীত অন্য কক্ষে শুধুমাত্র রং করা ও পর্দা পরিবর্তনের মধ্যেই মেরামত ও পূর্ত কাজ সীমাবদ্ধ ছিল। এখনও সব কক্ষে এসটিইপি প্রকল্পের ব্যবহত লাইট, ফ্যান ও এসি ব্যবহার হরা হচ্ছে। অথচ প্রকল্প দলিলে সকল রুমের জন্য সম্পূর্ন রিনোভেশনসহ এসি, ফ্যান ও লাইট এর অর্থ বরাদ্দ ছিল।

প্রকল্পের একজন সিনিয়র পরামর্শক নির্মান ও পূর্ত কাজের মান নিয়ে প্রকল্প পরিচালকের কাছে অভিযোগ করায় কমিটির আহ্বায়ক মো. আব্দুর রহিম ও দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিপিডি রাকিবুল হাসান উক্ত পরামর্শকের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। এই বিষয়ে রাকিবুল হাসানকে জিজ্ঞাসাবাদের কথা বললে তিনি কোন উত্তর দেননি। বর্তমানে বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট অডিট অধিদপ্তরে এসেট প্রকল্পের নির্মান ও পূর্ত কাজের ব্যাপক অনিয়মের বিষয়ে আপত্তি রয়েছে যা এখনো নিষ্পত্তি হয়নি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক আব্দুর রহিম বলেন, আমি হজ্বে আছি। এই প্রকল্পে অনিয়ম হয়নি। আমি হজ্ব থেকে ফিরে তদন্ত কমিটির কাছে আমার বক্তব্য দিবো এবং আমার সততা ও কাজের পক্ষে যাবতীয় নথি উপস্থাপন করবেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ঈদের জামা না পেয়ে কিশোরীর আত্মহত্যা

বিরুলিয়ায় মাহামুদুল হাসান আলাল চেয়ারম্যানের ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী পালন

স্বাস্থ্য পরামর্শ / ব্লাড ক্যান্সার কী, কেন হয় এবং প্রতিকারের উপায়

গভীর রাতে ফারুককে সরিয়ে দিল এনএসসি, দায়িত্ব নিচ্ছেন বুলবুল

আবারো মহানুভবতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন তারেক রহমান

‘জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণার মধ্য দিয়েই মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়’

টিআরএনবি’র কর্মশালা / আইসিএক্স বাতিলে অবৈধ ভিওআইপি ও রাজস্ব ফাঁকির আশঙ্কা বিনিয়োগকারীদের

থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্য রবির রক্তদান কর্মসূচি

রাজধানীতে বৈজ্ঞানিক সম্মেলন বাইউসকন-২০২৫ অনুষ্ঠিত

জলাবদ্ধতা নিরসনে জরুরি ডিএনসিসির কন্ট্রোলরুম স্থাপন

১০

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড গভীর রাতে প্রজ্ঞাপন / ফারুকের মনোনয়ন বাতিল, দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত বুলবুল

১১

জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাত বার্ষিকী আজ

১২

ব্যবসায়ীর হাতের কবজি কাটার অভিযোগ বিএনপির কর্মীর বিরুদ্ধে 

১৩

ছাত্র অধিকার পরিষদের কমিটিতে ছাত্রলীগ নেতা!

১৪

নতুন কর্মসূচি দিলেন সরকারি কর্মচারীরা

১৫

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নেতার পদত্যাগ

১৬

পাঞ্জাবকে হারিয়ে আইপিএলের ফাইনালে বেঙ্গালুরু

১৭

সেনা অভিযানে মাদক-অস্ত্র উদ্ধার, নারীসহ আটক ৯

১৮

মার্কা দেখার দরকার নাই, মানুষ দেখে ভোট দিন : সারজিস

১৯

বালুমহাল ঘুষকাণ্ড, আন্দোলনের মুখে প্রত্যাহার এসিল্যান্ড মামুন

২০
X