শনিবার, ০৭ জুন ২০২৫, ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ০৭ জুন ২০২৫, ১১:২৪ এএম
আপডেট : ০৭ জুন ২০২৫, ০১:০৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

লড়াই করে আদায় করতে হয়েছে গরু কোরবানির অধিকারও

হাটে রাখা গরু। ছবি : সংগৃহীত
হাটে রাখা গরু। ছবি : সংগৃহীত

আজ পবিত্র ঈদুল আজহা। ঢাকাসহ সারা দেশে মহাসমারোহে গরু কোরবানি চলছে। কিন্তু ৮০ বছর আগেও বাংলার মুসলমানদের এ অধিকার ছিল না। কোরবানির প্রশ্ন এলেই নানা ঘটনায় তটস্থ থাকতে হতো তাদের। ঝামেলা এড়াতে অধিকাংশ মুসলমান ছাগল বা খাসি কোরবানি দিতেন।

আজ যেভাবে বাংলাদেশের মুসলমানরা কোরবানির আনন্দে মাতোয়ারা সেই অধিকার তাদের বাবা-দাদাদের লড়াই করে আদায় করতে হয়েছে। ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন 'বাংলাদেশের উৎসব' নামক বইয়ে এমনটাই লিখেছেন।

তিনি লিখেছেন, “আজকে আমরা ঈদ-উল-আজহায় অনায়াসে গরু কিনে এনে সহজেই কোরবানি দিয়ে ফেলি। আশি-একশো দূরে থাকুক পঞ্চাশ বছর আগেও তা তেমন সহজসাধ্য ছিল না। আজকের প্রজন্ম হয়তো অবাক হবে যে, এ নিয়ে সুদীর্ঘ পঞ্চাশ বছর বিতর্ক চলেছে এবং কোরবানি বিশেষ করে গরু কোরবানি দেওয়ার অধিকার আমাদের বাপ-দাদাদের লড়াই করে আদায় করতে হয়েছে।”

এই পরিস্থিতি কেন হয়েছিল সে প্রসঙ্গে অধ্যাপক মামুন বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় যারা হিন্দু জমিদার ছিলেন, তারা গরু কোরবানি নিষিদ্ধ করা শুরু করলেন। অন্যদিকে গরু বেশি প্রচলিত না থাকার আরেকটি কারণ ছিল আর্থিক দৈন্য। বাংলাদেশের মানুষের আর্থিক দৈন্য এতটাই প্রবল ছিল যে, একটা গরু কিনে কোরবানি দেওয়া তাদের পক্ষে খুব দুরূহ ছিল।’

এমনকি উপমহাদেশে মুঘল সাম্রাজ্যের সময়ও এই অঞ্চলে গরু কোরবানি খুব একটা প্রচলিত ছিল না। মুঘল আমলে এই অঞ্চলে অনেক হিন্দু জনগোষ্ঠীর বসবাস ছিল। যে কারণে মুঘল সম্রাট আকবরের সময়েও গরু কোরবানিতে নানা বিধি-নিষেধের বিষয়গুলো চলে আসে।

অধ্যাপক আতাউর রহমান মিয়াজীর মতে, মুঘল আমলে আকবর যখন সম্রাট হলেন। দীনে এলাহী যখন প্রচলিত হলো ওই সময়ে ঐতিহাসিক আবুল ফজলসহ অনেকে পরামর্শ দিলেন গরুটা যেন জবেহ করা না হয়। কারণ ওই সময়ে এ অঞ্চলে ৯৫ শতাংশই হিন্দুদের বসবাস ছিল। সঙ্গত কারণে এটা জবাই করা মানে হিন্দুদের অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া। কোরবানি করলে তখন সাধারণ হিন্দুদের মনে ধর্মীয় অনুভূতির ক্ষেত্রে বিরূপ চিন্তা আসবে।

অধ্যাপক মামুনের মতে, ১৯৪০-এর দিকে গরু কোরবানিটা বেশি শুরু হয়। তখন এ অঞ্চলের পাট চাষিদের হাতে কিছু টাকা আসতে শুরু করল। তখন কিছু কিছু জায়গায় নিজেদের স্ট্যাটাস দেখানোর জন্যও গরু কোরবানি দেওয়া শুরু হলো।

বাংলাদেশ ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর গরু কোরবানির ওপর বিধিনিষেধ বা অজানা ভয় দূর হয়। এরপর দিন দিন গরু কোরবানির পরিমাণ বাড়তে থাকে।

আর্থিক দৈন্যের কারণে তখন ঢাকায় অধিকাংশ গরু কোরবানি হতো। গ্রামের বিত্তশালী মাতবর ঘরানার লোকজন গরু কোরবানি করতে পারতেন। অন্যরা ছাগল বা খাসি কোরবানি দিতেন। দেশ স্বাধীনের পর মানুষের আর্থিক অবস্থার উন্নতি ঘটে। এ ছাড়া ভাগে গরু কোরবানি দেওয়ার রীতি জনপ্রিয় হয়। ধীরে ধীরে ঈদুল আজহা উপলক্ষে গরু কেনার হার বাড়ে। সে সঙ্গে নতুন এলাকায় বসতে থাকে পশুর হাট। এক পর্যায়ে গরু কোরবানি ঈদুল আজহার অন্যতম অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়ায়।

সূত্র : বিবিসি বাংলা

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বৃষ্টিতে ভিজে জুলাই যোদ্ধাদের পরিবারে মাংস পৌঁছে দিলেন হাসনাত

পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে বড় ঘোষণা ইরানের

ঈদুল আজহা ২০২৫, সর্বত্রই বয়ে যাক অনাবিল আনন্দ 

২০২৬ সালে ঈদুল ফিতর যেদিন উদযাপিত হতে পারে

১২ ঘণ্টায় বর্জ্য অপসারণে কাজ করছে সিসিকের ১৩০০ কর্মী

ঈদের ছুটিতে চিকিৎসাসেবার দুর্ভোগ লাঘবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা

পাক-ভারত টানাপড়েনে পাকিস্তানের সাহসী নেতৃত্বে মুগ্ধ ট্রাম্প

রক্ত দিয়ে কোহলির প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ ভক্তের!

ঈদের দ্বিতীয় দিনেও গাজায় ৫০ ফিলিস্তিনি নিহত

কুমিল্লায় কোরবানির পশু কাটতে গিয়ে আহত ৫৫

১০

ভারতীয়দের জন্য এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্রে ভিসা ছাড়াই প্রবেশের সুযোগ

১১

এপ্রিল ফুল নয়, ডিসেম্বরে নির্বাচন দিতে হবে : ১২ দলীয় জোট

১২

ঈদ ঘিরে প্রাণ ফিরেছে কুয়াকাটায়

১৩

ক্লাব বিশ্বকাপে খেলবেন না রোনালদো

১৪

একদিনের ফকির তারা!

১৫

দোয়া চাইলেন শাবনূর, জানালেন ঈদের শুভেচ্ছা

১৬

ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সেটআপ দিবা আর নগরবাসী আঙুল চুষবে, প্রশ্ন ইশরাকের

১৭

সিলেটে কোরবানি দিতে গিয়ে আহত ৭৬ জন হাসপাতালে

১৮

আশ্রয়কেন্দ্রে নেই ঈদ আনন্দ

১৯

নির্বাচনী রোডম্যাপকে স্বাগত, তবে রোজার আগে হলে ভালো : খেলাফত মজলিস

২০
X