মেট্রোরেলের এককযাত্রার ২ লাখ ৪০ হাজার টিকিট হারিয়ে সংকটে পড়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। এতে করে মেট্রোর যাত্রীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
মেট্রোরেল লাইন-৬ চালুর সময় ৩ লাখ ২০ হাজার একক যাত্রার (পুনর্ব্যবহারযোগ্য) টিকিট সরবরাহ করা হয়েছিল। এর মধ্যে প্রায় ২ লাখ ৪০ হাজার টিকিট যাত্রীদের মাধ্যমে হারিয়ে গেছে, অর্থাৎ তারা যাত্রা শেষে নির্ধারিত গেটের যন্ত্রে টিকিটটি জমা দেননি।
মেট্রো যাত্রীদের অভিযোগ, টিকিটের সংকটের কারণে স্টেশনে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে, ফলে যাতায়াতে সময় বেড়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে অফিস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যস্ত সময়ে এ সমস্যা আরও তীব্র রূপ নিচ্ছে। যানজটের শহরে মেট্রোরেল যেভাবে স্বস্তিদায়ক ও দ্রুতগামী যাতায়াতের সুযোগ এনে দিয়েছে, টিকিটসংক্রান্ত এই জটিলতা সেই সুবিধাকে অনেকটাই ম্লান করে দিচ্ছে।
সূত্র জানায়, কিউআর কোডভিত্তিক একক যাত্রার টিকিটিং ব্যবস্থা চালুর জন্য প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার তৈরি করেছে ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন অথরিটি (ডিটিসিএ)। এই ব্যবস্থার একটি পরীক্ষামূলক সংস্করণ (ডেমো) মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ ডিএমটিসিএলকে প্রদর্শনও করা হয়েছে। এমনকি আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যবস্থাটি চালুর জন্য ডিএমটিসিএলকে চিঠিও দিয়েছে ডিটিসিএ। তবে তাদের প্রস্তাবিত পদ্ধতি বাস্তবায়ন না করে, ডিএমটিসিএল বিকল্প একটি ব্যবস্থার দিকে ঝুঁকেছে। তারা একক যাত্রার টিকিট ব্যবস্থার জন্য গত ২৮ মে ‘ইউনিভার্সাল টিকেটিং সিস্টেম (ইউটিএস)’ চালুর লক্ষ্যে দরপত্র আহ্বান করেছে।
ডিটিসিএর প্রস্তাবিত টিকিটিং ব্যবস্থা মেট্রোরেলের উপযোগী নয় বলে মনে করছে ডিএমটিসিএল। এ বিষয়ে মেট্রোরেল লাইন-৬ এর প্রকল্প পরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব মো. জাকারিয়া জানান, ডিটিসিএ যে প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে, তা মূলত বাস পরিবহনের জন্য উপযোগী। সুপারশপে ব্যবহৃত পস (POS) মেশিনের আদলে তৈরি এই পদ্ধতি মেট্রোরেলের নিয়ন্ত্রিত গেট সিস্টেমে কার্যকর হবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ডিটিসিএর প্রস্তাবিত টিকিটিং ব্যবস্থা চালু করতে হলে প্রতিটি গেটে নতুন যন্ত্র স্থাপন করতে হবে, যেগুলোকে পুরো নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে। এতে অতিরিক্ত জনবল ও ব্যয়ের প্রয়োজন হবে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো- এই ব্যবস্থায় স্বয়ংক্রিয় গেট না থাকায় যাত্রীরা সহজেই অবৈধভাবে প্রবেশ করতে পারে, যা নিয়ন্ত্রণে সমস্যার সৃষ্টি করবে।
এদিকে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান জানান, সরকারি অর্থে ডিটিসিএ যখন একটি কার্যকর কিউআর কোডভিত্তিক টিকিটিং ব্যবস্থা তৈরি করেছে, তখন সেটি ব্যবহার না করে নতুন একটি পদ্ধতি চালু করাটা জনগণের সম্পদ ও সময়ের অপচয়। একই শহরে একাধিক টিকিটিং সিস্টেম চালু থাকলে যাত্রীরা বিভ্রান্ত হবে, এবং একীভূত পরিবহন ব্যবস্থার যে লক্ষ্য রয়েছে, তা বিঘ্নিত হবে। মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ শুরু থেকেই কেন কিউআর কোডভিত্তিক টিকিটিং ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি? আমাদের দেশে কোনো কিছুতেই সঠিক পরিকল্পনার ছাপ নেই- যখন যা মনে হয়, সেটাই করে ফেলা হয়।
তথ্যসূত্র : আজকের পত্রিকা
মন্তব্য করুন