এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের আন্দোলন দমাতে এবার কর্মকর্তাদের ঢাকার বাইরে বদলি করা হচ্ছে। সংস্থাটির পক্ষ থেকে রুটিন কাজ বলা হলেও বিধিবহির্ভূতভাবে বদলি করার অভিযোগ করেছেন কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, সরকারি কর্মচারীদের ঢাকার বাইরে বা ভিন্ন জেলায় বদলি করলে যোগদানের জন্য নূন্যতম ৫ কর্মদিবস সময় থাকলেও এনবিআরের সর্বশেষ আদেশে তা মানা হয়নি। এর আগেও আন্দোলন দমাতে নানা ধরনের উদ্যোগ নিলেও কাজে আসেনি। তাই আজ সোমবার (২৩ জুন) থেকে নতুন করে কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এই কর্মসূচিতে কাফনের কাপড় পড়ে পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেও জানা গেছে।
রোববার এনবিআরের আয়কর অনুবিভাগের পাঁচ কর্মকর্তাকে তাৎক্ষণিক বদলি করা হয়েছে। এর মধ্যে দুজন আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটের, একজন এনবিআর বোর্ড অফিসের এবং বাকি দুজন ঢাকা ও কুমিল্লার কর অঞ্চলের। এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবিতে চলমান আন্দোলনের মধ্যে এ বদলির সিদ্ধান্ত এলো।
কর প্রশাসনের এক আদেশে বলা হয়, উপ কর কমিশনার শাহ্ মোহাম্মদ ফজলে এলাহীকে আয়কর গোয়েন্দা থেকে বদলি করে ময়মনসিংহ কর অঞ্চলে পাঠানো হয়েছে। উপ কর কমিশনার মোহাম্মদ শিহাবুল ইসলামকে ঢাকার কর অঞ্চল-১৬ থেকে থেকে খুলনা কর অঞ্চলে এবং উপ কর কমিশনার মো. আব্দুল্লাহ ইউসুফকে বোর্ড থেকে সরিয়ে বদলি করা হয়েছে বগুড়া কর অঞ্চলে। এ ছাড়া উপ কর কমিশনার ইমাম তৌহিদ হাসান শাকিলকে আয়কর গোয়েন্দা থেকে কুমিল্লা কর অঞ্চলে এবং উপ কর কমিশনার নুসরাত জাহান শমীকে কুমিল্লা কর অঞ্চল থেকে রংপুর কর অঞ্চলে পাঠানো হয়েছে। এর আগে শুল্ক ও ভ্যাট প্রসাশন-১ এর প্রথম সচিব আমীনুল ইহসানকে বদলি করে মূসক বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আর নতুন করে শুল্ক প্রসাশনের যাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তিনি দুটি কাস্টম হাউসে তার কর্মকান্ডের জন্য দুইবার স্ট্যান্ড রিলিজ হওয়ার নজির রয়েছে। এর আগে আন্দোলনে সামনের সারির দুই কর কমিশনারকে বদলি করা হয়।
এনবিআরের নতুন আদেশে বলা হয়েছে, তাদের নতুন কর্মস্থলে মঙ্গলবার বা তার আগেই যোগ দিতে হবে এবং সোমবার বর্তমান কর্মস্থলে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে হবে। যদিও বিষয়টি বদলির বিধি বহির্ভূত বলেও জানিয়েছেন এনবিআরের একাধিক উর্ধতন কর্মকর্তারাও। গত শনিবার এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণসহ দুই দাবিতে ফের কলম বিরতির ডাক দেয় ঐক্য পরিষদ। সোমবার ঢাকায় সব দপ্তরে এ কর্মসূচি পালন করা হবে। এদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এনবিআরে অবস্থান কর্মসূচিও পালন করবেন তারা। মূলত নতুন করে মধ্যরাতের অধ্যাদেশ বাস্তবায়নে ৬ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেন এনবিআর চেয়ারম্যান। এই কমিটিতে সরকারের অধ্যাদেশকে স্বাগত জানিয়ে বিবৃতি দেওয়া এবং চেয়ারম্যান ঘনিষ্ট কর্মকর্তাদের দিয়ে কমিটি করায় নতুন করে আন্দোলনে নামেন কর্মকর্তারা।
মে মাসে এনবিআর দুই ভাগ করে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা ও রাজস্ব নীতি নামে দুটি স্বতন্ত্র বিভাগ করে অধ্যাদেশ জারির পর তা বাতিলের দাবিতে কলম বিরতিসহ নানা কর্মসূচিতে আন্দোলনে নামেন এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের আন্দোলনের মধ্যে সরকার পিছু হটে। বলা হয়, অধ্যাদেশ বাস্তবায়নের এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
এরপর কাজে যোগ দিলেও আন্দোলনকারীরা এনবিআর চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবিতে অটল থাকেন এবং সংস্থার কার্যালয়ে তাকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করেন। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তায় অফিসে ফেরেন এনবিআর চেয়ারম্যান। তিনি স্বাভাবিক কাজে ফিরলেও কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে দূরত্ব রয়েছে।
মন্তব্য করুন