কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৫ জুলাই ২০২৫, ১০:৩৫ পিএম
আপডেট : ০৫ জুলাই ২০২৫, ১১:০৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

উল্টোরথে শেষ হলো রথযাত্রার মহোৎসব

উৎসবমুখর পরিবেশে শেষ হয়েছে ভগবান শ্রীশ্রী জগন্নাথদেবের রথযাত্রা মহোৎসব। ছবি : কালবেলা
উৎসবমুখর পরিবেশে শেষ হয়েছে ভগবান শ্রীশ্রী জগন্নাথদেবের রথযাত্রা মহোৎসব। ছবি : কালবেলা

বিশ্বশান্তি ও মঙ্গল কামনায় উৎসবমুখর পরিবেশে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে উল্টো রথযাত্রার মধ্য দিয়ে ভগবান শ্রীশ্রী জগন্নাথদেবের রথযাত্রা মহোৎসব শেষ হয়েছে। ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে রাজধানীতে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ-ইসকন বাংলাদেশ আয়োজিত এ উৎসবে বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে শামিল হন হাজারো মানুষ।

শনিবার (৫ জুলাই) বিকেলে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির থেকে এ উল্টো রথযাত্রা শুরু হয়ে ইসকন স্বামীবাগ আশ্রমে গিয়ে শেষ হয়।

এর আগে গত ২৭ জুন ইসকন স্বামীবাগ আশ্রম থেকে রথযাত্রা শুরু হয়ে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে গিয়ে পৌঁছায়। ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনের প্রথম সচিব (রাজনৈতিক) গোকুল ভি কে তখন এ রথযাত্রার উদ্বোধন করেন।

এদিকে উল্টো রথযাত্রা শুরুর আগে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে ইসকন বাংলাদেশের উদ্যোগে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার।

তিনি বলেন, শ্রীশ্রী জগন্নাথদেবের রথযাত্রার মধ্য দিয়ে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আমরা এক হয়ে যেতে পারি। এই যে ঐক্য, সেটা যেন আমাদের মধ্যে সারা বছর বজায় থাকে। এই রথযাত্রাটা এমন সময় অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন আমরা জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি পালন করছি। সেই গণঅভ্যুত্থানে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষই অংশ নিয়েছিল। অভ্যুত্থানের মূল স্পিরিট ছিল একটি বৈষম্যমুক্ত দেশ গড়া। আমরা সেই চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু বিষয়টা এতো সহজ নয় অনেক জটিল, অনেক কঠিন। সুতরাং বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন, সেটা আমাদের ধারণ করতে হবে। আমাদের মধ্যে সব রকম সহিংসতা, হিংসা-বিদ্বেষ বন্ধ হোক; সমগ্র পৃথিবীতে শান্তি বিরাজ করুক রথযাত্রা মহোৎসবে এই প্রার্থনাই করি।

গণফোরাম এবং বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, সনাতনী সমাজের ওপর বিভিন্ন সময় অত্যাচার, নির্যাতন-নিপীড়নের মধ্য দিয়ে আমাদের মধ্যে প্রতিদিন-প্রতিনিয়ত যে ভয়-ভীতি সঞ্চারিত হয়, সেটার অবসান হতে হবে। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে শুরু করে সর্বত্র আমাদের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করা হচ্ছে। এই মঞ্চ থেকে আমরা দাবি জানাব, বাংলাদেশে যুগ যুগ ধরে আমরা যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অটুট বন্ধন রচনা করেছি, মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, আজকে ছত্রিশ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমরা সেই বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।

তিনি আরও বলেন, আশা করি ড. মুহাম্মদ ইউনূস আপনি আমাদের মনের কথা বুঝবেন, আমাদের ব্যথার কথা বুঝবেন। কেন আমরা লাঞ্ছিত হবো, কেন অপমানিত হবো? বাংলাদেশের সনাতনী সমাজ সবাই আমরা ঐক্যবদ্ধ। আমাদের মধ্যে কোনো বিভেদ নেই। আমরা চাই না, আমাদের এখানে আর কোনোভাবে অপমানিত-লাঞ্ছিত করা হোক। আমাদের প্রত্যাশা, আগামীর বাংলাদেশ হবে নতুন বাংলাদেশ যেখানে কোনো বৈষম্য থাকবে না।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর বলেন, রথযাত্রা এমন এক উৎসব যার মাধ্যমে ভক্ত এবং ভগবান এক হয়ে রাস্তায় নেমে আসে। ভগবানকে পেয়ে ভক্ত তার সাধনায় একধাপ এগিয়ে যায়।

সভাপতির বক্তব্যে ইসকন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক চারুচন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী বলেন, রথযাত্রা উৎসব এমন একটি মিলনমেলা, যেখানে শ্রীশ্রী জগন্নাথদেব সবাইকে দর্শন দিতে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন। তিনি কাউকে বঞ্চিত করেন না।

ইসকন বাংলাদেশের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য বিমলা প্রসাদ দাসের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা ডা. বিধান রঞ্জন রায়ের সহধর্মিণী ডা. রমা সাহা, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব, সাধারণ সম্পাদক ড. তাপস চন্দ্র পাল, ইসকন বাংলাদেশের যুগ্ম সম্পাদক জগৎগুরু গৌরাঙ্গ দাস ব্রহ্মচারী।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট তাপস কুমার পালসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। পরে অতিথিরা মন্দির প্রাঙ্গনে থাকা রথের রশি টেনে উল্টো রথের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন।

হিন্দুদের ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী, রথযাত্রার দিন প্রভু জগন্নাথ, প্রভু বলদেব ও মাতা সুভদ্রাদেবী নিজ বাড়ি থেকে মাসির বাড়ি যান। সেখানে সপ্তাহকাল থেকে নিজ গৃহে ফেরেন। সে অনুযায়ী, গত ২৭ জুন নিজ বাড়িস্বরূপ স্বামীবাগের ইসকন আশ্রম থেকে আলাদা ৩টি রথে করে দেবদেবীদের নিয়ে যাওয়া হয় মাসির বাড়িস্বরূপ ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে। সপ্তাহকাল পর আজ শনিবার ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে দেবদেবীদের উল্টো রথযাত্রা করে ইসকন স্বামীবাগ আশ্রমে নিয়ে আসা হয়।

রথযাত্রার মতো এই উল্টো রথযাত্রায়ও ভগবান জগন্নাথদেবের হাজার হাজার ভক্ত পরিবার-পরিজন নিয়ে অংশগ্রহণ করেন। ধর্মীয় গান, কীর্তন এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ছাড়াও ঢাক-ঢোল, শঙ্খধ্বনি, উলুধ্বনি এবং মহামন্ত্র ‘হরিনাম’ এর মধ্য দিয়ে রথযাত্রাকে প্রাণবন্ত করে তোলেন ভক্তরা। এ ছাড়া উল্টো রথযাত্রায় সরাসরি অংশগ্রহণ না করলেও অনেকে বাড়ি-ঘর এবং রাস্তার দুধারে দাঁড়িয়ে রথের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা দর্শন করে মনের ইচ্ছা পূরণ করেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বিয়ে নিয়ে নিরাপত্তা জটিলতায় টেলর সুইফট

পুরো অ্যাশেজ থেকেই কি ছিটকে গেলেন অজি তারকা?

দুর্ঘটনায় দুই বন্ধু নিহত, শেষ স্ট্যাটাস ভাইরাল

ঢাবি শিক্ষক কার্জনের জামিন

৩ বছর বিদেশে থেকেও ভোগ করেন বেতন-ভাতা

রহস্যময় বেলুনে লিথুনিয়ার বিমানবন্দর বন্ধ

বাউল শিল্পী-সমর্থকদের ওপর হামলার ঘটনায় এনসিপির নিন্দা

রাতে ঘুমানোর আগে ঘরোয়া টোটকায় পা হবে নরম তুলতুলে

সিনিয়রদের মুখের ভাষাকে দুর্ভিক্ষ বলে এনসিপি নেতার পদত্যাগের ঘোষণা

‘আগামী ৫ বছরে মামলার সংখ্যা ৫০ শতাংশ কমবে’

১০

২৪ ঘণ্টায় ১১৮ ভূমিকম্প

১১

রোনালদোর অবিশ্বাস্য বাইসাইকেল কিকে আল-নাসরের টানা নবম জয়

১২

দেড় বছর পর টেস্ট দলে ফিরলেন কেন উইলিয়ামসন

১৩

মার্কিন ভিসা না পাওয়ায় ভারতীয় চিকিৎসকের আত্মহত্যা

১৪

২৪ ঘণ্টার মধ্যে লঘুচাপ সৃষ্টির আভাস

১৫

বনশ্রীতে দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল নারীর

১৬

ধরা দেওয়া শিরোপা হাতছাড়া হওয়ার পর যা বললেন আকবর

১৭

মানুষ ইসলামের পক্ষে ভোট দেওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছে : চরমোনাই পীর

১৮

লা লিগায় আবারও হোঁচট খেল রিয়াল

১৯

হত্যার ১২ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্ত গ্রেপ্তার

২০
X