দৈনিক যুগান্তরের সদ্য প্রয়াত সিনিয়র রিপোর্টার হাবিবুর রহমান খানকে অশ্রুসিক্ত নয়নে স্মরণ করেছেন তার সহপাঠী, সহকর্মী ও বন্ধুরা। তারা হাবিবের ব্যক্তি, শিক্ষা ও কর্মজীবনের নানা স্মৃতি তুলে ধরেন। মৃত্যুর ১৫ দিন পর শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী লেকচার হলে শোকসভা ও দোয়া মাহফিল আয়োজন করেন তার সহপাঠীরা।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই সাংবাদিক হাবিবুর রহমান খানের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। এরপর পবিত্র কোরআন শরীফ থেকে তেলাওয়াত করা হয়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাইফুল হক।
সভায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক ইলিয়াস খান বলেন, হাবিবের মতো সাংবাদিক বর্তমানে বিরল। তার মুখে যা ছিল, অন্তরেও তা ছিল। এ কারণে হয়ত তাকে কারো ভালো নাও লাগতে পারে। তবে যারা তার সঙ্গে মিশেছেন তারা জানেন এটাই হাবিবের বড় শক্তি ছিল। হাবিবের এই অকালে চলে যাওয়া মেনে নেওয়ার মতো নয়। তার মতো সংবাদকর্মীদের এ সমাজে বড্ড প্রয়োজন। তবে হাবিবের শোক সভায় এসে আমাকে বক্তব্য দিতে হবে এটা আমরা কখনোই কামনা করি নাই।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি মোরসালিন নোমানী বলেন, হাবিব ছিলেন একজন পেশাদার এবং সৎ সাংবাদিক। এ প্রজন্মের অন্যতম সেরা একজন সাংবাদিক ছিলেন তিনি। তার স্পষ্টবাদীতা ছিল প্রশংসনীয়। তার স্মৃতি ধরে রাখতে তার নামে আমরা কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করব।
হাবিবুর রহমানের বন্ধু পলাশ মাহবুব বলেন, হাবিবের মন আকাশের মতো উদার ছিল। ভনিতা ছাড়াই কথা বলতেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বড় প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনা শেষ করে সুনামের সাথে সাংবাদিকতা করছিলেন। তার অকাল মৃত্যুতে আমাদের দেশের অনেক বড় ক্ষতি হয়েছে।
বিবিসিতে কর্মরত সাংবাদিক সুমন বলেন, এভাবে আমরা হাবিবের স্মরণে শোক সভা করব সেটা কখনো প্রত্যাশা করিনি। আমার সাথে কথা হওয়ার আড়াই ঘণ্টা পর ওর মৃত্যুর খবর পাই। শোনার পর ওর মৃত্যুর সংবাদকে বিশ্বাসই করতে পারিনি। হাবিবের অন্যতম একটি গুন ছিল সহজ করে কথা বলা। মনে কোন কালিমা ছিল না। এ ছাড়াও যেকোনো কাজে নেতৃত্ব দেওয়ার একটা গুণ ছিল।
হাবিব কেবল আমার স্বামী ছিল না। সে ছিল আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু। আমি আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধুকে অকালে হারালাম সবশেষ এভাবে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদেন হাবিবের সহধর্মিণী ফারজানা মাহমুদ সনি। এ সময় পুরো হলরুম শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়ে। এ সময় তার সঙ্গে ছিল সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া একমাত্র কন্যা ফারিহা তাজমীন জারা।
হাবিবের সহধর্মিণী বলেন, আমার পথচলা এখন অনেকটাই কঠিন হয়ে গেল। হাবিব সবার সঙ্গে মিশতে পারত অনায়েসে। এটা তার সবচেয়ে বড় গুন ছিল। সবাই তার জন্য দোয়া করবেন। সবসময় ভাবতাম মানুষ কেনো কথা না বলে থাকে। এখন বুঝি আপনজন হারানো মানুষের আসলে কথা বলার ভাষা থাকে না। ২০০৬ সাল থেকে হাবিব আমার পাশে ছিল। যেটা আমার জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় সময় হয়ে আছে। আজকে আমি শুধু আমার স্বামীকেই হারায়নি, বরং আমার কাছে বন্ধুকেও হারিয়েছি।
সভায় আরও বক্তব্য দেন সাংবাদিক মঈন উদ্দিন খান, আহমেদ পিপুল, সাঈদ খান, ডিআরইউ’র সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, তরিকুল ইসলাম খান রবিন, সাংবাদিক মীর মোহাম্মদ জসিম, সাব্বির আহমেদ প্রমুখ।
শোক সভায় হাবিবের জন্য শোকগাঁথা লেখা হয়। তাকে নিয়ে একটি স্মৃতিগ্রন্থ তৈরির কথা জাননো হয়। হাবিবুর রহমান খান জাতীয় প্রেস ক্লাব, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সদস্য ছিলেন। গেল ২২ আগস্ট বিকালে হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ৪১ বছর বয়সী হাবিবুর রহমান খান।
মন্তব্য করুন