প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) কর্মকাণ্ড বিষয়ক জাপানিজ পার্লামেন্টারিয়ান লীগের ৯ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল। সাক্ষাৎকালে তারা দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ের পাশাপাশি জাপানে দক্ষ কর্মী পাঠানোর বিষয়ে মতবিনিময় করেন।
সোমবার (০২ সেপ্টেম্বর) প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টার দপ্তরে এ সাক্ষাৎ করেন তারা। দ্য কনস্টিটিউশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি অব জাপানের সেক্রেটারি জেনারেল হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভ সদস্য মিসিহিরো ইশিবাসি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন।
এ সময় ড. আসিফ নজরুল বলেন, বাংলাদেশ ও জাপান দুই বন্ধুপ্রতীম দেশের মধ্যে বিদ্যমান সুসম্পর্ক আজ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এক অনন্য দৃষ্টান্ত। জাপান বাংলাদেশের এক অকৃত্রিম ও বিশ্বস্ত বন্ধু। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে জাপানের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ওইসিডিভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে জাপানই ছিল প্রথম দেশ, যারা ১৯৭২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে।
বৈঠকে তিনি জানান, প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে অন্তত ১০ লাখ কর্মী বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছেন। প্রবাসে কর্মরত এসব শ্রমিক দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন।
ড. আসিফ নজরুল বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ নিরাপদ, সুশৃঙ্খল ও নিয়মিত অভিবাসন নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। তিনি জানান, প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে বৈদেশিক কর্মসংক্রান্ত একটি জাতীয় স্টেয়ারিং কমিটি রয়েছে। অন্যান্য ১৩টি মন্ত্রণালয় এই কমিটির সদস্য। তিনি বলেন, দেশের কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়ন, ভাষা প্রশিক্ষণ ও সাংস্কৃতিক প্রস্তুতির মাধ্যমে জাপানের শ্রমবাজারের চাহিদা পূরণে প্রস্তুত করা হচ্ছে।
এ সময় উপদেষ্টা, জাপানে গমনেচ্ছুদের জন্য ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া সহজ করা, ঢাকায় জাপান ফাউন্ডেশন অফিস স্থাপন, জাপানে অধিক সংখ্যক বাংলাদেশি কর্মী প্রেরণের লক্ষ্যে মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে জাপানি অর্থায়নে বাংলাদেশে বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনে জাপান সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি দেশে বিদ্যমান টিটিসিগুলোয় উন্নত প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে জাইকার মাধ্যমে জাপানি প্রশিক্ষক নিয়োগ করার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি এ সময় তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পলিসি অ্যাডভাইজার জিয়া হাসান। এ সময় তিনি বলেন, ডেমোগ্রাফিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আগামী ১৫ বছরে জাপানে অন্তত এক কোটি ২০ লাখ কর্মীর প্রয়োজন হবে। বৈশ্বিক এ সুযোগ কাজে লাগাতে আমাদের বিশাল জনশক্তি প্রস্তুত করার বিকল্প নেই। এ লক্ষ্যে জাপানে বাংলাদেশ সেল গঠন, জাপান অভিবাসীদের সহায়তায় আগমন পরবর্তী ওরিয়েন্টেশন ও হেল্প ডেস্ক চালু, অভিবাসন সংক্রান্ত তথ্য ও সেবায় সহজ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে তথ্য পোর্টাল এবং খাত ভিত্তিক দক্ষতা উন্নয়নের জন্য জাপান-বাংলাদেশ বিশেষ দক্ষতা প্রশিক্ষণ জোন প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
প্রতিনিধিদলের অপর সদস্যরা হলেন- জাপানের হাউস অব কাউন্সিলর, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির ভাইস-সেক্রেটারি জেনারেল হানাকো জিমি, হাউস অব কাউন্সিলর, এক্সিকিউটিভ বোর্ড মেম্বার রিউজি সাতোমি, হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ, দ্য কনস্টিটিউশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি নেতা কেনেটা ইজুমি, হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ, ইন্ডিপেন্ডেন্ট এমপি মিস মাকিকো ডোগোমি, হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ, দ্য কনস্টিটিউশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি নেতা মিস মাকি ইকেডা, হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ, দ্য কনস্টিটিউশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি নেতা মি. মামোরু উমেতানি, এমপি ও এক্সিকিউটিভ বোর্ড মেম্বার মি. আতশুশি অসিমা। এ ছাড়া প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া, বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত সাইদা সিনিছি, বিএমইটির মহাপরিচালক সালেহ আহমেদ মুজাফ্ফর, ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক ব্যারিস্টার মো. গোলাম সারওয়ার এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পলিসি অ্যাডভাইসার জিয়া হাসান উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন