নরসিংদীর নিরালা আবাসিক হোটেলের কক্ষে আলমগীর হোসেন (৩০) নামে এক কর্মচারীকে পৈশাচিক নির্যাতন চালিয়েছে হোটেল মালিকের ছেলে জাহিদ সরকার।
সোমবার (৩১ আগস্ট) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নির্যাতনের ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে ঘটনা জানাজানি হয়। এর আগে শনিবার (৩০ আগস্ট) দিনব্যাপী পৌর শহরের বাজিরমোড় এলাকায় নিরালা আবাসিক হোটেলে এ ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্ত জাহিদ সরকার (২৮) নরসিংদী বৌয়াকুড় এলাকার ও নিরালা আবাসিক হোটেলের মালিক জাহাঙ্গীর সরকারের ছেলে। নির্যাতিত আলমগীর হোসেন শহরের বানিয়াছল এলাকার হারিছ মিয়ার ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, আহত আলমগীর হোসেন শহরের বানিয়াছল এলাকায় জাহাঙ্গীরের মালিকানাধীন ‘নিরালা হরিণ বাড়ি’ নামে একটি খামারের দেখা-শোনার দায়িত্বে ছিলেন। সম্প্রতি খামার থেকে জেনারেটরের ব্যাটারি চুরি হয়। এ ঘটনায় খামারের মালিকের ছেলে জাহিদ সরকার কর্মচারী আলমগীকে সন্দেহ করে।
তারা জানান, এর জেরে আলমগীরকে হোটেলে ডেকে নিয়ে যায়। পরে জাহিদ সরকার ও তার লোকজন তার গলায় রশি দিয়ে জানালার গ্রিলের সঙ্গে বেঁধে লোহার পাইপ দিয়ে পেটায়। ধারালো ছুরি দিয়ে আলমগীরের শরীরের বিভিন্ন স্থানে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে রক্তাক্ত করে। পরে একই এলাকার শাকিল নামে অপর একটি ছেলেকেও মারধর করে।
স্থানীয়রা আরও জানান, একপর্যায়ে শাকিলের হাতে পাইপ দিয়ে আলমগীরকে মারতে বলে এবং মারধরের ভিডিও ধারণ করে জাহিদ। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় আলমগীরকে শাকিলের মাধ্যমে বাড়ি পাঠায়। পরিবারের সদস্যরা নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে ঢাকায় রেফার্ড করে। পরে তাকে ঢাকার মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ ঘটনায় সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) গভীর রাতে নরসিংদী মডেল থানায় আলমগীরের বাবা হারিছ মিয়া বাদী হয়ে জাহিদ সরকারকে প্রধান আসামি করে মামলা করেন। মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন- সিয়াম, আল আমিন ও শাকিল।
আলমগীরের বাবা হারিছ মিয়া বলেন, আমার ছেলেকে হোটেলের রুমে আটকে গলায় রশি দিয়ে জানালার সঙ্গে বেঁধে লোহার পাইপ দিয়ে বেধড়ক পিটিয়েছে। ধারালো ছুরি দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে গলা থেকে পা পর্যন্ত রক্তাক্ত জখম করে। পরে আমার ছেলের শরীরে থাকা রক্তমাখা শার্ট ও প্যান্ট খুলে রেখে ডেকোরেটরের কাপড় পড়িয়ে শাকিলকে দিয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় আমাদের বাড়িয়ে পাঠায়। শুনেছি তার শরীর থেকে খুলে রাখা রক্তমাখা কাপড়গুলো পুড়িয়ে ফেলেছে। এমনকি ডাক্তার দেখালে এবং পুলিশের কাছে গেলে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দিয়েছে।
মা সমলা খাতুন বলেন, আমার ছেলে জীবন ভিক্ষা চেয়েছে, তারপরও তাদের মন গলেনি। তারা আমার ছেলের দুই হাত ভেঙে দিয়েছে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছুরি দিয়ে রক্তাক্ত জখম করেছে। আমরা গরিব মানুষ, ওদের সাথে ক্ষমতায় পারব না। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।
এ ব্যাপারে জানতে হোটেল মালিক জাহাঙ্গীর সরকার ও তার ছেলে জাহিদ সরকারের মোবাইল ফোনে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও কল রিসিভ করেননি।
নরসিংদী সদর মডেল থানার ওসি এমদাদুল হক বলেন, এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
মন্তব্য করুন