বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজার দিনগুলো রোদ আর বৃষ্টিতে কাটতে পারে। এরই মধ্যে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপে রূপ নিয়েছে। এটি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এর প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশের উপকূলে। আর এ কারণে দেশের চার সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এদিকে দেশের সাত জেলার ওপর দিয়ে বইছে মৃদু তাপপ্রবাহ।
আগামীকাল রোববার মহাষষ্ঠী থেকে শুরু আর বৃহস্পতিবার বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে দুর্গাপূজা শেষ হবে। দুর্গাপূজার ষষ্ঠী থেকে পরের দুই দিন আবহাওয়া মোটামুটি শুষ্ক থাকতে পারে। তবে মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকার কারণে দেশের কোনো কোনো স্থানে বৃষ্টি হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক বলেন, ১ অক্টোবর বুধবার বৃষ্টির পরিমাণ কিছুটা বাড়তে পারে। তবে দশমীর দিন অর্থাৎ ২ এবং পরদিন ৩ অক্টোবর বৃষ্টি অনেকটাই বাড়তে পারে। ২ অক্টোবর বৃহস্পতিবার রাজশাহী বিভাগ বাদ দিয়ে দেশের প্রায় সব বিভাগেই কমবেশি বৃষ্টি হতে পারে। কারণ ২ তারিখ থেকে আরেকটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। সেটি বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আগামী বৃহস্পতিবার রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগে অপেক্ষাকৃত বেশি বৃষ্টি হতে পারে।
শুক্রবার এক বিশেষ সতর্কবার্তায় আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, ভারতের উড়িষ্যা-অন্ধ্র উপকূলের অদূরে উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও পাশের পশ্চিম মধ্যবঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি শুক্রবার সকাল ৬টায় সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়। সেটি উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও পাশের মধ্য বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। এটি আরও ঘনীভূত হতে পারে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা ও সমুদ্র বন্দরগুলোর ওপর দিয়ে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এজন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরগুলোকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, মৌসুমি বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ পূর্ব উত্তর প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ, উড়িষ্যা, সুস্পষ্ট লঘুচাপের কেন্দ্রস্থল ও বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। তবে মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর কম সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় রয়েছে।
পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামীকাল শনিবার ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে সারা দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে। রাজশাহী, বগুড়া ও চুয়াডাঙ্গা জেলাসহ রংপুর এবং সিলেট বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা প্রশমিত হতে পারে।
আগামী রোববার চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে সারা দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণ হতে পারে। বর্ধিত পাঁচদিনে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা আরও বাড়তে পারে বলে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ শাহানাজ সুলতানা বলেন, সুস্পষ্ট লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। এর প্রভাব বাংলাদেশের উপকূলে কিছুটা পড়তে পারে। তবে দেশের অন্যত্র তেমন প্রভাব পড়ার আশঙ্কা কম।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে খুলনার কয়রায়; ৫৩ মিলিমিটার। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জে ৩৬, খুলনায় ২৪ ও কুতুবদিয়ায় ১৯ মিলিমিটার বৃষ্টি ঝরেছে। এই সময়ে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল নীলফামারীর সৈয়দপুরে ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল বান্দরবানে, ২৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
মন্তব্য করুন