লালনের গানে জীবনের দর্শন, মানবতার আহ্বান আর ভালোবাসার বার্তা। সেই সুরের ভুবনে নিজেকে নিবেদন করেছিলেন কিংবদন্তি শিল্পী ফরিদা পারভীন। ‘লালনকন্যা’র মর্যাদা পাওয়া প্রয়াত এ শিল্পীর স্মরণে ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে হয়েছে বিশেষ আয়োজন।
শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকালে নদের পাড়ের বরই গাছের নিচে এ আয়োজন করা হয়।
শিল্প-সাহিত্যের সংগঠন ‘পরম্পরা’-র আয়োজনে গান ও কথায় শিল্পী ফরিদা পারভীন স্মরণে ভোর সাড়ে ৬টা থেকে শুরু হওয়া এ আয়োজনে লালনের দর্শন, মানবতা আর জীবনের কথা গানে গানে ছুঁয়ে যায় উপস্থিত শ্রোতাদের।
অনিরুদ্ধ শুভ, মিজান বাউলা, হিরক, আফ্রিদসহ ময়মনসিংহের তরুণ শিল্পীদের কণ্ঠে পরিবেশিত হয় ফরিদা পারভীনের গাওয়া জনপ্রিয় লালনগীতি। শুধু গান নয়, কথার মাধ্যমে উঠে আসে ফরিদা পারভীনের জীবনের নানা দিক, তার সংগ্রাম আর সাফল্যের গল্পও।
অনুষ্ঠানে মাজার ভাঙা, সংস্কৃতিতে আঘাত ও মানুষের উপর অত্যাচারকারীদের প্রতি ঘৃণা জানানো হয়। সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া ময়মনসিংহের তারাকান্দার হালিম উদ্দিন আকন্দকে যেভাবে কয়েকজন লোক ধরে জোর করে চুল কেটে দেয় সেভাবে প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবে আয়োজক শামীম আশরাফের চুলও কেটে দেওয়া হয়।
শামীম আশরাফ বলেন, লালন কন্যা ফরিদা পারভীনের মহাপ্রয়ানে দেশে কোনো আয়োজন আমরা দেখিনি। ফরিদা পারভীনকে স্মরণ করে আমরা ছোট একটি আয়োজনের চেষ্টা করেছি৷ লালনকন্যাকে শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি তার শিল্পভুবনকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরাই এই আয়োজনের উদ্দেশ্য। আর এমন উদ্যোগ আগামীতেও অব্যাহত রাখা হবে।
শিল্পী খাইরুল ইসলাম বলেন, লালন গানকে নিয়ে সারা বিশ্বে আজ যে চর্চা হচ্ছে সেই লালন গানকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন আমাদের কিংবদন্তি শিল্পী ফরিদা পারভীন। তার প্রয়াণের পর আজ আমরা তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। এই দেশের সুর ও সংগীতকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তরুণ প্রজন্ম একসঙ্গে কাজ করবে সেই প্রত্যাশা করছি।
ছড়াকার ও গবেষক স্বপন ধর বলেন, লালন মানবতাবাদ ছড়িয়ে গেছেন। মানুষ যদি জন্ম না নিতে তাহলে পৃথবীর সবটাই বিফলে যেত। আগে মানুষ জন্ম নিয়েছে তার পর নানা মতভেদ হয়েছে। ফরিদা পারভীন বাংলা লোকসংগীত, বিশেষ করে লালনের গান বছরের পর বছর ধরে গভীর নিষ্ঠা আর মমতায় ধারণ করেছেন, পরিবেশন করেছেন। প্রজন্মের পর প্রজন্মের কাছে তিনি লালনের দর্শন ও গানকে সার্থকভাবে উপস্থাপন করেছেন।
তিনি বলেন, তার কণ্ঠের দরদ, অভিব্যক্তির শক্তি এবং আন্তরিকতা তাকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিল। সত্যিকার অর্থেই সংগীতজগতে, বিশেষ করে লোকসংগীতের অঙ্গনে এক অপূরণীয় শূন্যতার সৃষ্টি হলো। তার চলে যাওয়া আমাদের জন্য গভীর বেদনার, তবে তার গানে তিনি চিরকাল বেঁচে থাকবেন।
মন্তব্য করুন